ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডি প্রকাশিত বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচক রিপোর্ট

আট বছরে অবকাঠামো খাতে অগ্রগতি হয়েছে বেশি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

আট বছরে অবকাঠামো খাতে অগ্রগতি হয়েছে বেশি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত আট বছরে অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায়। এই সূচকে ৫৮তম অবস্থান থেকে বিশ্বে ৪১তম অবস্থান এখন বাংলাদেশের। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ চার ধাপ এগিয়েছে। এছাড়া বাজারের আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রতিবেদনে বলা হয়, এত অর্জনের পরও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে একধাপ পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। গত বছর ১০২ তম অবস্থানে থাকলেও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশ নেমে এসেছে ১০৩ তম অবস্থানে। যদিও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই মানদ-ে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৯৬তম, এবার আছে ৮১ নম্বরে। তিনি বলেন, দক্ষতার সূচকে আমাদের অবস্থান আগের চেয়ে পিছিয়েছে। আর্থিক খাতে এক সময় আমাদের অবস্থান ছিল ৪৭তম। সেটা এখন পিছিয়ে ৭২তম অবস্থানে গেছে। তবে বাজারের আকারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এবার ভাল করেছে বলে জানান সিপিডির গবেষণা পরিচালক। তিনি বলেন, ৩৪তম অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছি ২৮তম অবস্থানে। দেশে যেহেতু প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভোগজনিত ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটি বাজারের আকার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে আমরা মনে করি। ফোরামের গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৮ বলছে, এবার ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০৩তম অবস্থানে। আগের বছর ১৩৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০২তম অবস্থানে ছিল। চলতি বছরের শুরুতে চালানো জরিপের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বুধবার বিশ্বব্যাপী একযোগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ২০০১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সিপিডি বাংলাদেশে বৈশ্বিক এই ফোরামের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ঢাকায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সার্বিকভাবে এবার বাংলাদেশের পয়েন্ট কমেনি বরং শূন্য দশমিক ৭ পয়েন্ট বেড়েছে। কিন্তু এবারের গবেষণা পদ্ধতিতে একটা বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেসব বিষয়কে কেন্দ্র করে সূচক তৈরি হয়, সেখানে এবার আইসিটির ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশ এবার সার্বিকভাবে সূচকে কিছুটা পিছিয়েছে। একটি দেশের অবস্থান বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, পণ্যবাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের আকার, বাজারের গতিশীলতা, নতুন ধারণার আত্মীকরণ-এই ১২টি মানদ- ব্যবহার করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। এসব মানদ-ের ভিত্তিতে ১০০ ভিত্তিক সূচকে সব মিলিয়ে এবার বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ৫২ দশমিক ১, যার গতবছরের স্কোরের চেয়ে ০.৭ বেশি। গতবছর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানে সাত ধাপ, তার আগের বছর একধাপ অগ্রগতি হয়েছিল। এবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই সূচক তৈরির মেথোডলজিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তুলনা করার সুবিধার জন্য এ প্রতিবেদনে গত বছরের সূচকের অবস্থানও নতুন মেথোডলজিতে প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, সূচকের মানদ-গুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, শ্রম বাজার, বাজারের আকার, উদ্ভাবনী ক্ষমতায় বাংলাদেশের উন্নতি হলেও পণ্য বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের গতিশীলতায় অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দিক দিয়ে এবারের সূচকের শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের স্কোর ৮৫ দশমিক ৬। এরপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ডস, হংকং, যুক্তরাজ্য, সুইডেন ও ডেনমার্ক। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ৬২ স্কোর নিয়ে ভারত আছে সূচকের ৫৮ নম্বরে। গতবারের চেয়ে পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে দেশটির। সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের জরিপের জন্য ১৪০টি দেশের ১৬ হাজার ৬৫৮ ব্যবসায়ী ও নির্বাহীর সাক্ষাতকার নেয়া হয়। বাংলাদেশের ৮৩টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে এবারের জরিপের জন্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মে পর্যন্ত তিন মাস এই জরিপ চলে। তাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের তথ্য নেয়া হয়। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি দেখিয়েছে। এই মানদ-ে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৯৬তম, এবার আছে ৮১ নম্বরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য যেসব বিষয়কে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার শীর্ষে আগে ছিল অবকাঠামোর দুর্বলতা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবকঠামো খাতে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
×