মুগ্ধতার নাম জয়া আহসান। রূপ আর গুণে বিভোর রেখেছেন দর্শকদের। ছোট পর্দা ও বড় পর্দা দুই মাধ্যমেই নিজের মেধার প্রমাণ রেখেছেন তিনি। ব্যতিক্রমী নানা চরিত্রে অভিনয় করে জয়া আহসান তার প্রতিভার বহুমুখিতার ছাপ রেখেছেন, এবং জায়গা করে নিয়েছেন ভক্তদের হৃদয়ে। এরপর অভিনয়ের অনুপম প্রতিভা নিয়ে জয়ার জয়যাত্রা চলছেই। দেশের গ-ি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশেও দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। বলা হয় দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি। মাঝে মাঝে তব দেখা পাইÑ কর্ণফুলী, করতোয়া, পদ্মার তীরে তীরে কাশবনের দোলা লেগেছে। চিরাচরিত প্রথায় দেবী বরণ করে উৎসবে মেতেছেন দেশবাসী। এই উৎসবের আবহেই বাংলাদেশ অপেক্ষার শেষ লগ্নে দেবী ছবির মুক্তি নিয়ে মঞ্চ, টেলিভিশনের পর বড় পর্দায় মহাসমারোহে আগামীকাল মুক্তি পেতে যাচ্ছে জননন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে নির্মিত অনম বিশ্বাস পরিচালিত বহুল আলোচিত ‘দেবী’ চলচ্চিত্র। আর এ ছবির মাধ্যমেই অনম বিশ্বাসের বড় পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে। ‘সি তে সিনেমা’র ব্যানারে ‘দেবী’ প্রযোজনা করে প্রথমবার প্রযোজকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন জয়া আহসান। আর জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলি চরিত্রটিকে নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র জয়ার ‘দেবী’। এ চলচ্চিত্রের রানু চরিত্রটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুই বাংলার জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী বলেন, রানু চরিত্রটার প্রতি লোভ ছিল; হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’র প্রতিও এক ধরনের লোভ ছিল। যার কারণে কাজ করি। আমি প্রডিউসারদের কাছে গিয়েছিলাম। নতুন পরিচালক, কাজ ভাল করবে; বলেছিলাম তাদের। কিন্তু তারা আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেননি। আসলে বাংলাদেশে এখনও সেভাবে প্রডিউসারশিপ তৈরি হয়নি।’ রানু চরিত্রের জন্য প্রস্তুতিটাই কেমন ছিল জানতে চাইলে জয়া আহসান বলেন, রানু চরিত্রটাই তো একটু জটিল। তবে আমি চেষ্টা করেছি আমার সেরাটা উপহার দিতে। আমি অন্য আট-দশটা ছবিতে যেমন এ্যাফোর্ড দিই, এ ছবিতেও তেমন এ্যাফোর্ড দিয়েছি।
নিজের প্রথম প্রযোজনা নিয়ে তিনি বলেন, আমি প্রযোজনা করার সাহস করেছি শুধু সাংবাদিকদের ও কাছের মানুষদের অনুপ্রেরণার জন্য। আমি শুরুতেই কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের চলচ্চিত্রের অনুদান যে কমিটি রয়েছে তাদের কাছে। আর অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের পরিচালক অনম বিশ্বাসকে। কারণ সে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে ‘দেবী’কে ধারণ করে আসছে নিজের মাঝে। তারপর সরকারী অনুদান পেলাম। সামনের দিকে হাঁটলাম। তবে এটা ঠিক যদি অনুদান না পেতাম, তাহলে এত তাড়াতাড়ি ফিল্ম প্রডিউস করা শুরু করতাম না। তবে যখন আমি কোন দায়িত্ব নেই, তখন সেনসিটিভলি কাজটা করি, কাজের প্রতি আন্তরিকতার অভাব থাকে না। দেবী চলচ্চিত্রটি নিয়ে দায়িত্ব ছিল অনেক বেশি। আর স্ক্রিপ্ট আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। জয়া আরও বলেন, টিজার প্রকাশের পর বেশ ভাল সাড়া পেয়েছি। টিজার প্রকাশের পরেই দর্শক মহলে তুমুল আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সবাই খুব ভালভাবেই টিজারটি গ্রহণ করেছেন। টিজারে রানু চরিত্রেও মুগ্ধ হয়েছেন সবাই। উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা দেবী। দর্শক উপন্যাস আর সিনেমা আলাদা করবে কি ভাবে? প্রশ্নটা রাখতেই জয়া বলেন, সাহিত্য আলাদা, সিনেমাও আলাদা মাধ্যম। ফিল্ম তৈরি করতে গেলে সেটা থেকে দূরে যেতেই হবে। তবে ক্যারেকটার, গল্প ঠিক রেখে আমি সে রকম করেই কাজটা করার চেষ্টা করেছি। মিসির আলি হিসেবে চঞ্চলের চেয়ে ভাল আর কেউ করতে পারত না। তাছাড়া অন্য কেউকে ভাবতেও পারিনি। সত্যিই আমার চাওয়া পাওয়া প্রত্যাশা সবই পূরণ করতে পেরেছে চঞ্চল। -বললেন জয়া আহসান
হুমায়ূন আহমেদের গল্প মানে অন্যরকম উন্মাদনা। দেবী নিয়ে প্রত্যাশা? জানতে চাইলে দেবী চলচ্চিত্রের রানু বলেন, আমি দর্শকদের বলতে চাই তারা একটা ভাল ছবি দেখুক। একটা ভাল সিনেমার সঙ্গে থাকুক। আমার বিশ্বাস হলবিমুখ দর্শককে ‘দেবী’ হলে টানতে পারবে। শুরু থেকেই ‘দেবী’র প্রচারণায় অনেক ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। চলচ্চিত্রের প্রচারণায় উদ্ভাবনী নানা কৌশলে দর্শকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা ও প্রশংসায় ভাসছে ‘দেবী’ টিম। ইতোমধ্যেই দুই বাংলার শতাধিক তারকা চলচ্চিত্রটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে রাজপথে কিংবা ফুটবল মাঠে ‘দেবী’ ছুটেছে দর্শক টানতে। এ প্রসঙ্গে জয়া আহসান বলেন, আমি অনেক হেল্প পাচ্ছি। দেবী টিমের সবাই তো করছেনই, এমনকি যারা আমাদের সিনেমার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, সে সব লোকজনও নানাভাবে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন, প্রশংসা করছেন। তবে একটা জিনিস কি, আমাদের এখানে অনেকেই ভাবেন যে ডাবিং করলেই বুঝি সিনেমার কাজ শেষ। এটা খুবই ভুল একটা ধারণা। আমি ভাল একটি সিনেমা বানিয়ে যদি মানুষকে না জানালাম তাহলে তারা কি ভাবে জানবে? যার কারণে দেখা যায় প্রচারণার অভাবে দর্শকের কাছে সিনেমাটি পৌঁছাতে পারে না। সিনেমা দর্শকের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। প্রচারণার মাধ্যমেই দর্শকের কাছে ছবিটি পৌঁছানো সম্ভব। প্রচারণা ছাড়া কখনই সেটা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। সেই জন্যই আমার জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করেছি ছবিটি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে। দেবী কোন সাধারণ ছবি নয়। হুমায়ূন আহমেদের গল্পের ছবি। সেই জন্য দর্শকদের কাছে জানানো আমাদের দায়িত্ব ছিল। ইতোমধ্যে হুমায়ূন আহমেদের দেবী’র প্রতি লাখো ভক্ত ছবিটি দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা প্রথম সপ্তাহে বেশি সংখ্যক হলে ছবিটি মুক্তি দিতে চাই না। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হল সংখ্যা বাড়বে। পরে দেশের বাইরেও ছবিটি মুক্তি দেয়া হবে।
যদি ‘দেবী’ সাফল্য পায়, তবে কি দর্শক মিসির আলি সিরিজ পাবে? সেটা এখনও বলতে পারি না। তবে আমার অনেক ইচ্ছে আছে। শুধু সফলতার ওপর নয়, অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে একটি চলচ্চিত্র। অনুমতিসহ সব বিষয় যদি ব্যাটে বলে মিলে যায় তাহলে মিসির আলি সিরিজ করব। বর্তমান সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের বাজার খারাপ যাচ্ছে। প্রযোজকরা ছবিতে তাদের লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাচ্ছে না। তাই অনেকেই প্রযোজনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমন সঙ্কটময় সময় প্রযোজনায় নেমে দুঃসাহস দেখিয়েছেন জয়া আহসান। তাই তার কাছে প্রশ্ন রাখি যেনে শুনে নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিলেন না তো? এমন প্রশ্ন রাখতেই চটপটে উত্তরে প্রযোজক জয়া আহসান বলেন, আমি কোন বিপদ দেখছি না। নিজেকে বিপদেও ঠেলে দেইনি। তবে সঙ্কটময় সময় চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করতে সরকারী অনুদানটা অবশ্যই আমাকে ভীষণ, ভীষণ সাহায্য করেছে। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই প্রযোজনায় দেখা যাবে বলে তিনি জানান। কিন্তু কখনও পরিচালনায় দেখা যাবে না।
সবশেষে ‘দর্শকদের উদ্দেশ করে জয়া আহসান বলেন, এই সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় আসছেন মিসির আলি। হুমায়ূন আহমেদ মানে বাঙালীর আবেগের জায়গা। তার ওপর মিসির আলি নিয়ে দুঃসাহসিক কাজটি সাহস করে করেছি। তাই সকলকে ‘দেবী’ দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আগামীকাল শুক্রবার আপনারা সকলে হলে গিয়ে ছবিটি দেখুন। আমি চাইব আপনারা ‘দেবী’ ছবি দেখে গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আমি প্রযোজক হিসেবে খুবই কনফিডেন্ট আমার ছবি নিয়ে। আপনাদের যদি ছবিটা দেখে ভাল লাগে তাহলে দশ জনকে না হোক পাঁচ জনকে বলবেন ছবিটি যাতে তারাও দেখেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: