ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা

প্রকাশিত: ০৩:২১, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা

আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। অশ্রুসজল নয়নে ভক্তকুল দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন। দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার সমাপন ঘটছে। আগামী শরতে বাঙালী হিন্দুর ঘরে ঘরে আবার দেবী ফিরে আসবেনÑ এমন প্রত্যাশা নিয়েই মাকে বিদায় জানাবেন ভক্তরা। শাস্ত্র মতে এবার মা দুর্গা এসেছেন ঘোটকে চড়ে। ঘোটক মানে ঘোড়া। পঞ্জিকা মতে, ঘোড়ায় আগমন মানে ছত্রভঙ্গ। দুর্যোগের আশঙ্কা প্রবল। যাবেন দোলায় চড়ে। শাস্ত্র মতে দোলায় গমন মানে সুখকর নয়। এক্ষেত্রেও মড়ক বা নানা দুর্যোগের শঙ্কা থাকে। দেবীর আশা-যাওয়া দুটিই নেতিবাচক। এক্ষেত্রে সতর্কতার পথই অনুসরণীয়। আমরা বিশ্বাস করি, দেবী সকল অশুভ শক্তিকে নিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ বরাবরই ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন। সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এই অধিকার নিশ্চিত হয়েছে মানুষের। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে আনন্দঘন আবহের সৃষ্টি হয়েছে। দেশব্যাপী বইছে নির্মল সম্প্রীতি থেকে উৎসারিত উৎসবের ফলগুধারা। সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণময় অবস্থানের বিকাশ আরও বিস্তৃত এবং বিকশিত হয়। উপরন্তু অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মঙ্গলদায়ক, শুভশক্তি ও ইতিবাচক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটে। পূজায় এবার দেশের কোথাও তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক সহিষ্ণুতা ও উদারতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তীক্ষè নজরদারি এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। অসুরকুলের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। সেই থেকে বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য। এ জন্য দুর্গোৎসব ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সম্প্রদায়গত বিভেদের উর্ধে উঠে মানুষকে এক পরম আনন্দের সোপানে দাঁড় করিয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত। দেবী দুর্গার আগমনী আনন্দকে সবাই ভাগাভাগি করে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। মানুষে মানুষে প্রীতি, প্রেম, সহিষ্ণুতা, ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায় ধর্ম। তার পরও অসুরের আকস্মিক উন্মত্ততা নষ্ট করে দেয় আবহমানকালের প্রীতিধন্য পারস্পরিক সহাবস্থানকে। ধ্বংস করে দেয় দীর্ঘকালীন হৃদ্যকে। সৃষ্টি হয় বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, অন্যায় ও অকল্যাণ। আর এ জন্যই মঙ্গলদাত্রী দেবী দুর্গার আগমন ঘটে কল্যাণ ও শান্তি সংস্থাপন করার জন্য। তিনি শুভ ও ন্যায়ের উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে যান সবাইকে। এবার হাওড়ে বন্যাসহ বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশবাসীকে। তাই মার কাছে সব ভক্তের আকুল প্রার্থনা- সকল প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ ও বিশ্ববাসীকে তিনি যেন রক্ষা করেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন অটুট থাকে। দূর হয় সব সঙ্কীর্ণতা ও বিভেদÑ মা যেন সেই শক্তি, সৌহার্দ্য সবার হৃদয়ে ও মনে জাগ্রত করেন।
×