ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য চট্টগ্রাম

বঙ্গোপসাগরের তীরে পাহাড়, নদীঘেরা চট্টগ্রাম প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য। চট্টগ্রাম পাহাড়, সমুদ্র আর নদীবেষ্টিত একটি সুন্দর শহর শুধু নয়, জেলা ও বিভাগীয় শহর। ছোট-বড় পাহাড়, টিলা নিয়ে গড়ে ওঠা এ শহর খুবই সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন। সমুদ্র, পাহাড়, অসংখ্য ছোট-বড় নদীর এক অপূর্ব মিলন ক্ষেত্র। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পর্যটনের জন্য যেসব উপাদান আবশ্যক সবই আছে; শুধু ছিল না সমন্বিত উদ্যোগ। প্রাচ্যের রানী খ্যাত এই চট্টগ্রামকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্মবীর খ্যাত আবদুস ছালাম। চট্টগ্রাম নগরীর সাগর তীরবর্তী পর্যটন এলাকা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ার স্বপ্নে বিভোর এ কর্মবীর। চলমান আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় তার এ উদ্যোগ। দেশী-বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করতে পরিকল্পিতভাবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছেন তিনি। কর্ণফুলীর মোহনা থেকে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে ৫ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে তোলা হবে আধুনিক ও বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র। প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নির্মাণ করা হবে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য সুন্দর ও সুপরিসর আসন, শিশুদের জন্য কিডস কর্নার, ফুড কোর্ট, গ্রীন জোন, খেলার মাঠ, কেবল কার, উন্নত মানের রাইড, সাগরে নিরাপদে ওঠানামার জন্য জেটি, সাঁতারের পর গোসলের ব্যবস্থা, কার পার্কিং এবং আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে পাঁচতারকা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কাফেটেরিয়া, বিনোদন কেন্দ্র। সৈকতের পাশেই সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হবে বিলাসবহুল স্মার্ট সিটি। পর্যটকদের জন্য উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার এ প্রয়াস। নগরবাসীকে নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেয়ার পাশাপাশি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বাস্তবসম্মত বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে চউক। ২০১৯ সালের মধ্যে কক্সবাজারমুখী গাড়ি সহজেই পতেঙ্গার নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে নির্মাণাধীন টানেল হয়ে কর্ণফুলীর ওপারে চলে যেতে পারবে। দেশের প্রথম এবং একমাত্র এ টানেলটি চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। সরকারের গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়ন আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক জোন ও সমৃদ্ধ আরও এক মহানগরী। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পর্যটননগরী কক্সবাজারের সঙ্গে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার দূরত্ব আরও কমে আসবে। মূল শহরের সঙ্গে নদীর অন্যপ্রান্তের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পাশাপাশি বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প। চাপ কমবে নদীর ওপর থাকা অন্য দুই সেতুর। একই সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে প্রস্তাবিত সোনাদিয়া সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে। যানজটমুক্ত স্বপ্নের স্মার্ট চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যার সমাধান, চট্টগ্রাম বন্দর, ইপিজেড ও বিমানবন্দরমুখী বিকল্প পণ্য পরিবহন সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, শহর রক্ষা, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হচ্ছে আউটার রিং-রোড। ট্রাঙ্ক রোড নেটওয়ার্কের আওতায় দুটি রিং রোড এবং মহানগরীর চারপাশে বৃত্তাকার সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ছয়টি রেডিয়েল রোড নির্মাণের অংশ হিসাবে আউটার রিং রোড প্রকল্পের কাজ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের কাজ প্রায় শেষের পথে। ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত চিটাগাং বাইপাসের নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। বায়েজিদ থেকে অক্সিজেন এবং অক্সিজেন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়ক ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে চাক্তাই-কালুরঘাট আউটার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি কর্ণফুলীর তীরবর্তী সন্নিহিত পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ বৃত্তাকার এই সড়কটি বিস্তীর্ণ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আউটার রিং রোড প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের ভেতরে প্রবেশ না করেই দক্ষিণ বা উত্তর চট্টগ্রামের যানবাহনসমূহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবে। এ প্রকল্পের আওতায় কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু বা চাক্তাই খালের মুখ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হবে। চাক্তাই খালের মুখ থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে। ফলে নগরীর চারদিকে একটি বৃত্তাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার গাড়িগুলো শহরে প্রবেশ না করে টানেল হয়ে পতেঙ্গা থেকে আউটার রিং রোড ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলে যাবে। একইভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে আসা রাঙামাটির কোন গাড়ি ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ হয়ে অক্সিজেন কিংবা কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে শাহ আমানত সেতুতে পৌঁছতে পারবে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের যানজট ও জনদুর্ভোগ কমাতে নগরীর প্রধান সড়কের ওয়াসা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েটি নগরীর প্রধান সড়কের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সঙ্গে যুক্ত হবে। ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে চট্টগ্রাম শহর এলাকা এবং এর দক্ষিণ অংশের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সৃষ্টি হবে। এতে যানজট হ্রাস পাবে এবং বিমানবন্দরে যাতায়াতের পথ সুগম হবে। ২৪টি র‌্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়েটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। নগরের বিভিন্ন মোড় ও এলাকায় র‌্যাম্প থাকায় এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নগরবাসীর অনেক উপকারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম শহরের গণপরিবহন ও যানচলাচলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। চট্টগ্রাম মহানগরে বিভিন্ন সেবা সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- জনসম্মুখে তুলে ধরা, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য মহানগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় চউক চেয়ারম্যান আবদুস ছালামের সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়াও সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- প্রচারে তার অভিনব স্লোগান সংবলিত বিলবোর্ড, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাহায্যে উন্নয়ন প্রচার ও সচেতনতা তৈরি কার্যক্রম সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তার ১০ বছর মেয়াদকালে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় প্রতিটি সরু রাস্তাকে চার লেনে উন্নীতকরণ ও চারটি ফ্লাইওভার নির্মাণসহ ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর বাইরেও বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে ১৪ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসহ ১১টি মেগাপ্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা জলাবদ্ধতা ও যানজটমুক্ত চট্টগ্রাম, বিশ্বমানের পর্যটন নগরী চট্টগ্রাম এবং বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ এবং রাজনৈতিক নেতারা। সততা, যোগ্যতা, মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দায়বদ্ধতার কারণে তিনি গণমানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তার হাত ধরে চট্টগ্রামের মানুষ উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক চট্টগ্রামে বসবাসের স্বপ্ন লালন করেন। চট্টগ্রাম বন্দর অটোমেশন ও বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া কর্ণফুলী নদী, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ নদীর মোহনায় বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ‘চট্টগ্রাম বন্দর’। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রসার ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখছে চট্টগ্রাম বন্দর। প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক ৩০ বছরব্যাপী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যেখানে আছে সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নও। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বাৎসরিক ১২-১৪% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে বন্দর ৭০০ কন্টেনার হ্যান্ডলিং করত, সেটি এখন ২৮ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে। ২০১৪ সালে কন্টেনার হ্যান্ডেলিং হয় ১৭ লাখ, ২০১৫ সালে ২০ লাখ, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ এবং ২০১৭ সালে তা ২৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। চলতি ২০১৮ সালে ৩০ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডেলিং-এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক বন্দরগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে পরিচিতি পায়। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দশ বছরে ২৮ ধাপ উন্নীত হয়ে ৭০তম অবস্থানে চট্টগ্রাম বন্দর। ফলে গত কয়েক বছর যাবত চট্টগ্রাম বন্দর্রে গ্রোথ ডাবল ডিজিটে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবল আগ্রহে বন্দরের সর্বস্তরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে বন্দরের অটোমেশন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে পুরনো বন্দর আইনের। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকার কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। স্বয়ংক্রিয় কন্টেনার অপারেশন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সিটিএমএস এবং বন্দরে নিরাপদে জাহাজ যাতায়াত অবস্থানকালে জাহাজগুলোকে সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য আধুনিক ভিটিএমআইএস চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে এ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি চাপ কমানোর লক্ষ্যে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন আরেকটি সমুদ্রবন্দর। ২০২৩ সালের মধ্যে এ সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে ২টি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। টার্মিনাল দুটিতে প্রায় ১৫ মিটার ড্রাফট সংবলিত ৩৫০ মিটারের জাহাজ ভিড়তে পারবে। যেসব মাদার ভ্যাসেল চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না, সেসব বড় আকারের জাহাজ এ বন্দরে ভিড়তে পারবে। দিনে দিনে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংযুক্ত হওয়া নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা না বাড়লে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হতো। এদিকে মংলাবন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বাড়াতে জুলফিকার চ্যানেলের আউটার বার ড্রেজিংসহ দুটি অতিরিক্ত জেটির নির্মাণকাজ চলছে। এই বন্দরকে আরও গতিশীল করতে সুন্দরবনের আকরাম পয়েন্টে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পাশাপাশি ২০১৯ সালের মধ্যে পায়রাবন্দর পুরোপুরি চালু করতে নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ বন্দর চালু হলে দেশের অভ্যন্তরীণ আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটান এ বন্দর ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে। বাংলাদেশ অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় নির্মিত হয়েছে সুরম্য বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগেই এটি নির্মিত হয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রথম ডব্লিউটিসি। ৭৫ কাঠা জায়গার ওপর ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এটি। তিনটি বেসমেন্টসহ ২৪ তলা ভবনটি চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ ভবন। চট্টগ্রামে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনের ৫৩ হাজার ৯১৩ বর্গফুট আয়তনের বিশাল পরিসরে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার, কনফারেন্স হল, হেলথ ক্লাব, দেশীয় পণ্যসামগ্রীর প্রদর্শনী হল, সুইমিং পুল, মূল অফিস, আইটি ও মিডিয়া সেন্টার, অফিস স্পেস, পাঁচ তারকামানের হোটেল, আন্তর্জাতিকমানের ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট পরিষেবা ইত্যাদি। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আরব্য, পর্তুগীজ, তুর্কি, পারস্য, চীনা বণিকদের চট্টগ্রামে গমনাগমনের তথ্যাবলী রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্রটির মিডিয়া সেন্টারে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা, বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, নগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসন এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ২০০৯ সালের এপ্রিলে আবদুস ছালামকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছিলেন। শেখ হাসিনার প্রবল আগ্রহে দীর্ঘ সময়ের বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুস ছালামের নেতৃত্বে দশ বছরে চট্টগ্রামের উন্নয়নের পালে হাওয়া লেগেছে। উন্নয়নে বদলে যেতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যানজট নিরসনের পাশাপাশি জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী। কর্ণফুলী টানেল এবং আউটার রিং রোডকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে, বদলে যাবে হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলী এবং কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার আর্থ- সামাজিক চিত্র। উন্মোচিত হবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য ‘চট্টগ্রাম’ রূপান্তরিত হবে উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক এক নগরীতে। Email: [email protected]
×