ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

মহাকাশ অভিযাত্রায় নাসার ৬০ বছর

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

মহাকাশ অভিযাত্রায় নাসার ৬০ বছর

নাসার পুরো নাম ন্যাশনাল এরোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এডমিনিস্ট্রেশন। মহাকাশে কি কি আছে তা দেখার কৌতূহল মানুষের সেই কোন কাল থেকে। তার জন্য মহাকাশে গিয়ে ঢুঁ মারার পরিকল্পনা বিজ্ঞানীদের মাথায় বহুদিন ধরেই খেলছিল। এর মধ্যে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পটনিক’ পাঠিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়। মহাকাশ নিয়ে নতুন করে শুরু হয় নানান জল্পনা কল্পনা। আমেরিকা এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে না থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধরে ফেলার, এমনকি তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোমড় বেঁধে লেগে পড়ে। ১৯৫৮ সালের ১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাতা করে ন্যাশনাল এরানটিক্স এ্যান্ড স্পেস এডমিনিস্ট্রেশন বা সংক্ষেপে ‘নাসা’। মহাকাশ অভিযান নিয়ে শুরু হয়ে যায় নতুন প্রতিযোগিতা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ১ অক্টোবর ৬০ বছর পূর্ণ করেছে। এই ৬০ বছরে তারা মহাকাশ অভিযাত্রার অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস ধারণ করেছে। আর সামনের দিনগুলোতে তো পড়ে রয়েছে আরও অনেক কিছু। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর নাসা তার প্রথম নভোযান পাইওনিয়ার ১ উৎক্ষেপণ করে কক্ষপথে। ৫ মাস পর পাইওনিয়ার ৪ প্রথমবারের মতো চাঁদের পাশ দিয়ে উড়ে যায়। ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট কেনেডি চাঁদে মানুষ পাঠানোর উদ্যোগ নিতে বলেন নাসাকে। নাসা এ কাজে জোরেশোরে নেমে পড়ে। শুধু হয় ধাপে ধাপে চন্দ্রাভিযান। ১৯৬৭ সালে সার্ভেয়ার ৩ নামে একটি নভোযান প্রথমবারের মতো চাঁদের বুকে নেমে মাটি পরীক্ষা করে। তারপর আসে সেই মাহেন্দ্র্রক্ষণ। ১৯৬৯ সালে এপোলো ১১ প্রথমবারের মতো মানুষ নিয়ে যায় চাঁদের বুকে। নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে বেশ কিছুক্ষণ পদচারণা করে/বেড়ান। আমেরিকার পতাকা পুতে রাখেন। তারপর আরও কত মানববাহী চন্দ্রাভিযান হয়েছে। শুধু কি চাঁদ? নাসার নভোযান গ্রহ গ্রহান্তরে পাড়ি জমিয়েছে। অবশ্য তাতে কোন মানুষ ছিল না। পৃথিবীর কাছাকাছি মহাকাশে নাসা মানববাহী বিমান পাঠিয়েছে এ পর্যন্ত ১৬৬টি। পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণামূলক স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে ১১৬টি। টেলিস্কোপ ও মানমন্দির পাঠিয়েছে ২৭টি। নাসার নভোযান পাড়ি জমিয়েছে মঙ্গল, বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাম, নেপচুন, প্লুটো অভিমুখে। সেগুলোকে কাছ থেকে দেখেছে। তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছে। গ্রহই শুধু নয় সেগুলো উপগ্রহগুলোর কাছেও গেছে। গেছে বৃহস্পতির চাঁদ এমালথিয়া, আইও, ইউরোপা, গ্যানিমেড ও ক্যালিস্টোর কাছাকাছি। সেগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। শনির চাঁদ টাইটান, এনসেলঅডাস ও টিথাইসের ক্ষেত্রেও তাই। নাসার নভোযানগুলো বলয়যুক্ত গ্রহ শনির বুকে হ্যারিকেন দেখতে পেয়েছে যার বাতাসের গতি পৃথিবীর হ্যারিকেনের গতিবেগের ৪ গুণ। এ পর্যন্ত আর কোন গ্রহে নভোযান না নামলেও নেমেছে মঙ্গলগ্রহে। সেখানকার মৃত্তিকা পরীক্ষা করেছে এ পর্যন্ত ৪টি রোভার যান নাসা সেখানে পাঠিয়েছে। মঙ্গলগ্রহ হচ্ছে নাসার মানববাহী নভোযান পাঠানোর পরবর্তী ঠিকানা। সেই প্রস্তুতিই চলছে এখন। শুধু গ্রহ-উপগ্রহকে কাছ থেকে দেখা নয়, গ্রহাণু ও ধুমকেতুর কাছাকাছিও গ্রহযান পাঠিয়েছে নাসা। গ্রহাণুর মধ্যে রয়েছে আইডা, ক্যাসপ্রা, সেরেস, ইরোস, ব্রেইলী ও ভিসতা এবং ধুমকেতুর মধ্যে রয়েছে গিয়াকোবিনিজিনার, হ্যালি, হার্টলি ২, বোরিলি ওয়াইল্ড ২, ও টেম্পল-১। সৌরজগতের বহির্প্রান্তকে দেখার জন্য ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নাসা ভয়েজার ১ এবং এর ১৬ দিন পরে ভয়েজার-২ নামে দুটি নভোযান পাঠায়। বৃহস্পতি, শনি এবং শনির চাঁদ টাইটানের পাশ দিয়ে উড়ে সেগুলো থেকে বাড়তি গতি সঞ্চার করে ভয়েজারস আমাদের এই সৌরজগতের শেষপ্রান্ত অভিমুখে যেতে থাকে এবং ভয়েজার ১ ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ও ভয়েজার-২ ২০০৭ সালের আগস্ট হেলিওপজÑ অর্থাৎ সৌরজগতের শেষ প্রান্ত সেখানে সূর্যের আর কোন আকর্ষণ শক্তি থাকে না সেই জায়গাটি অতিক্রম করে নক্ষত্রলোকের বুকে পাড়ি জমায়। তখনও পর্যন্ত ভয়েজার-১ এর মধ্যে স্থাপিত একটি রেকর্ড বেজে চলেছিল বিভিন্ন ভাষায় যার মূল কথাগুলো এমন; ‘এই অনন্ত মহাবিশ্বের কোথাও কি কেউ আছো?’ সূত্র : টাইম ও অন্যান্য
×