ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাটির নিচে রহস্য উন্মোচন করবে রোবট

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

মাটির নিচে রহস্য উন্মোচন করবে রোবট

গাছের শিকড় মাটির নিচে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তা আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু সেই ক্ষমতা অনুকরণ করে বিজ্ঞানীরা অভিনব রোবট তৈরি করেছেন। মহাকাশ অভিযান থেকে অস্ত্রোপচারÑ নানা ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা এমন রোবট তৈরি করছেন, যেগুলো গাছের শিকড়ের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া নকল করতে পারে। নানা ক্ষেত্রে এই ক্ষমতার প্রয়োগ সম্ভব। শিকড়ের মতো রোবট তৈরি করার আগে গবেষকদলকে মাটির নিচে আসল শিকড়ের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ মোটেই সহজ ছিল না। জীববিজ্ঞানী বারবারা মাজোলাই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘গাছের শিকড় অত্যন্ত জটিল পরিবেশে বেড়ে ওঠে। মাটির গভীরে বেড়ে উঠতে তাদের অনেক চাপ সৃষ্টি করতে হয়। তাছাড়া শুধু অসমোসিস বা শিকড়ের অগ্রভাগেই শিকড় বেড়ে ওঠে। প্রথমে মাটি থেকে পানি ও অন্যান্য উপাদান শুষে নিয়ে এবং তারপর কিছু অংশ ও মৃত কোষ বর্জন করে শিকড় নিজের আকার-আয়তন বাড়িয়ে নেয়। একইসঙ্গে তারা এক ধরনের আধা তরল পদার্থ সৃষ্টি করে, যার সাহায্যে শিকড় বেড়ে উঠতে এবং মাটির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞানীদের সবার আগে রোবটকে মাটি খুঁড়ে গভীরে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি সৃষ্টি করতে হয়েছিল। খোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোবটকে নিজের জন্য জায়গাও করে নিতে হয়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আলি সাদেগি বলেন, ‘নতুন উপাদান যোগ করে প্রকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটে। সেই প্রক্রিয়া অনুকরণ করে আমরাও ‘গ্রোয়িং সিস্টেম’ নামের প্রণালি গড়ে তুলেছি। রোবটের মধ্যে কৃত্রিম ফিলামেন্ট বা আঁশ ঢুকিয়ে দেই। রোবট তখন নিজেই একটি কাঠামো তৈরি করে মাটি খুঁড়ে প্রবেশ করে। নিজেই শরীর গঠন করে, সেই শরীর দীর্ঘায়িত করে মাটি ফুঁড়ে এগোতে পারে। ‘রোবটের শিকড় স্বাভাবিক শিকড়ের মতোই উদ্দীপনায় সাড়া দেয়। বাধা পেলে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। একই সঙ্গে সেই শিকড় পুষ্টি ও পানির খোঁজ করে। বারবারা মাজোলাই বলেন, ‘শিকড়ের এই আঁকাবাঁকা গতিপথ আমরা দুভাবে অনুকরণ করছি। প্রথমত, আমরা ইলেকট্রো-বায়োলজিক্যাল তরল ব্যবহার করছি। তার উপর কী ধরনের ইলেকট্রিক চার্জ প্রয়োগ করা হয়, সেই অনুযায়ী ঘনত্বের হেরফের ঘটে। সেইসঙ্গে রোবটের পাশের দিকে কৃত্রিম উপাদান যোগ করে তার শরীর বাঁকাতে পারি।’ মাটির মধ্য দিয়ে চলার সময় দৃষ্টিশক্তি ও অনুভূতি সম্ভব করতে রোবটের মধ্যে নরম অথচ মজবুত উপকরণ দিয়ে উন্নত সেন্সর বসানো রয়েছে। ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার লুচিয়া বেকাই বলেন, ‘এসব সেন্সর আশপাশের পরিবেশ ও বস্তু সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখে। স্পর্শ করলে সেন্সর তা টের পায়। তাদের সামনে যে কোন শক্তির চাপ তারা বুঝতে পারে।’ এই রোবটিক শিকড় মহাকাশ অভিযানে অথবা মাটির নিচে পুষ্টি, তেল ও মাইন শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির আরও সাহসী প্রয়োগ করতে চান। ভবিষ্যতে এমনকি মস্তিষ্ক অপারেশনের সময় এমন নমনীয় রোবট ব্যবহার করা হতে পারে, যা নিজের আকার পরিবর্তন করতে পারে। এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার এডোয়ার্ডো সিনিবাল্ডি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য ছোট আকারের, নমনীয়, আকার বদলাতে সক্ষমÑ এমন সরঞ্জাম তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ। সমস্যা হলো, ছোট আকারের অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম কিছু ধরনের অপারেশনের জন্য কম কার্যকর ও নিখুঁত না-ও হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে এমন এক সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে, যা একইসঙ্গে নমনীয় ও মজবুত হবে।’ শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক না কেন, গবেষকরা মনে করছেন যে, রোবটের মাধ্যমে অভিযানের এক নতুন যুগের সূচনা ঘটছে। সূত্র : বিবিসি
×