শেরকো বিকাস একজন কুর্দিস্তানী নির্বাসিত কবি ও স্বাধীনতাকামী নেতা। তিনি ইরাকের কুর্দিস্তানে ১৯৪০ সালের ২ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফায়েক বিকাস ছিলেন কুর্দিস্তানী প্রখ্যাত কবি ও স্বাধীনতাকামী মানস। মাত্র ১৭ বছর বয়সে শেরকো’র কাব্য প্রকাশ হয়েছিল। তিনি কুর্দিস্তান মুক্তি আন্দোলনের রেডিও ‘দ্য ভয়েস অব কুর্দিস্তান’ এ কর্মরত ছিলেন। তাকে কুর্দিস্তান থেকে একাধিকবার নির্বাসিত হতে হয়েছিল ইরাকি সরকারের চাপে। বিশটির অধিক কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। ‘দিওয়ানে শেরকো’ নামে তার কাব্য সংকলন দু’খে প্রকাশ হয়েছে।
১৯৮৭ সালে স্টকহোমের পেন ক্লাবের পক্ষ থেকে ‘তুচোলস্কি স্কলারশিপ’ এবং ‘ফ্লোরেন্স সিটি স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত হন। তার কবিতা আরবি, সুইডিশ, ড্যানিশ, ডাচ, ইতালিয়ান, ফরাসি, ইংরেজীসহ বিশ্বের অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি সারাবিশ্বের কাছে মুক্তিকামী জনতার প্রতীক, নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর, জালিমের শোষণের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকাকালীন ৪ আগস্ট ২০১৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। শেরকোর নিম্নোক্ত কবিতা তিনটি ‘ওয়ার্ল্ড লিটারেচার টুডে’র আগস্ট ২০১৮ সংখ্যা থেকে চয়িত হয়েছে। কুর্দি থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন আলানা ম্যারি এবং হালো ফারিক।
** প্রতিক্রিয়া
হালজাবার* শ্বাসরুদ্ধের পরে,
আমি প্রভুর নিকট অনেক বড় একটি অভিযোগ লিখেছি
প্রত্যেকের পূর্বে,
আমি গাছের কাছে এটা পাঠ করলাম।
গাছটি কেঁদে উঠলো।
একদিকে একটি পাখি, একজন পোস্টম্যান বলল
‘ঠিক আছে, কে এটা সরবরাহ করবে?
তুমি যদি আশা করো যে আমি এটাকে গ্রহণ করব,
আমি পারব না প্রভুর তখত পর্যন্ত পৌঁছতে।
সে রাত্রির গভীরে,
আমার স্বর্গীয় কাব্য শোকের জন্য সজ্জিত হয়েছে,
বলল, ‘দুশ্চিন্তা করো না।
আমি এটাকে বায়ুম-লের
উর্ধে নিয়ে যাব।
কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করব না
সে নিজেই চিঠিটি নিবে।
তুমি জানো যে, মহান প্রভু
কে তাকে দেখতে পারে?
আমি বললাম, ‘কৃতজ্ঞতা! উড়াও।’
আমার স্বর্গীয় উৎসাহ উড়েছে
আমার অভিযোগ নিয়ে।
পরবর্তী দিন, এটা ফিরে এসেছে।
প্রভুর চতুর্থ সচিব নেমেছে,
ওবাইদ নামক একজন লোক,
একবারে নিম্নদেশে
প্রায় একই রকম অভিযোগে,
আমাকে আরবিতে লিখেছিল :
‘নির্বোধ, এটাকে আরবি করো।
এখানকার মানুষেরা কুর্দি জানে না।
তারা এটাকে প্রভুর নিকট নিবে না।’
** *হালজাবার টীকা
১৯৮৮ সালে ১৬ মার্চ ইরাকের কুর্দিস্তানের নিরীহ জনতার ওপর রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করে সাদ্দামের বাহিনী। যার প্রতিক্রিয়ায় ৩২০০ থেকে ৫০০০ মানুষ মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই ছিল সাধারণ নাগরিক। গণহত্যায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থার মতে মহিলা ও শিশুসহ এ অভিযানে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল।
তবে কুর্দি কর্মকর্তাদের দাবি ১ লাখ ৮২ হাজার মানুষ নিহত হয় এ লড়াইয়ে। কুর্দিস্তানের ৪৬৫৫টি গ্রামের মধ্যে চার হাজার গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। ১৭৫৪টি স্কুল, ২৭০টি হাসপাতাল, ২৪৫০টি মসজিদ এবং ২৭টি চার্চ ধ্বংস করা হয়। কুর্দিদের নিশ্চিহ্ন করার যে পরিকল্পনা তারা নিয়েছিল তার ৯০ ভাগ লক্ষ্য সফল হয় তাদের। উক্ত গণহত্যা অভিযানকে আনফাল অভিযান বলত সাদ্দামের সেনাদল। আর উক্ত ঘটনাকে হালজাবা বলে।
(‘অহংবিৎ’ নামক কবিতার বাঙলায়ন।)
** প্রভুগুলো
‘৮৮ সালে
সকল প্রভু
দেখতে পায়
গ্রাম্যলোকদের দেহগুলো
তারা দগ্ধিতের মত ছড়িয়ে আছে,
কিন্তু কেউই নড়তে পারছে না।
শুধু রাত্রে
তাদের ঠোঁটে সিগারেট
তারা তাদের মাথাকে নত করেছে
সেই অগ্নির নিকট।
(প্রভুগুলো কবিতাটি ‘এড়ফং’ কবিতার বাঙলায়ন।)
** পরিচ্ছদ
বিকাস* বলতে অভ্যস্ত ছিলেন,
‘আমি পরিধান করি প্রত্যেক আনন্দ
এর প্রত্যেক আস্তিন
যা অনেক খাটো অথবা অনেক লম্বা,
যা অনেক ঢেলা বা অনেক আটোশাটো
আমার উপর।
আর প্রত্যেক দুঃখ যা আমি পরি
এটা খুবই মানানসই হয় যেন এটা আমার জন্যই তৈরি
যেখানেই হই না কেন।’
*বিকাসের টীকা
বিকাস বলতে এখানে কবির পিতাকে বুঝানো হয়েছে। তার পুরো নাম ফায়েক বিকাস। তিনি প্রখ্যাত একজন কবি যিনি নিজেদের অধিকারের জন্য কাব্য লিখতেন।
(পরিচ্ছদ কবিতাটি ‘ঈষড়ঃযবং’ কবিতার বাঙলায়ন।)