ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আবু আফজাল মোহা. সালেহ

পিকাসো মানেই ছবির জগত

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

পিকাসো মানেই ছবির জগত

I do not seek. I find - Pablo Picasso পিকাসো খোঁজেন না- তিনি পেয়ে যান। এখানেই স্পেনীয় চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর মহত্ত্ব। যেন আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন। যেন তুলি হাতে নেন, ধরা দেয় চিত্র। পাবলো পিকাসো (চধনষড় চরপধংংড়) নামেই চিনি আমরা। এই বরেণ্য শিল্পী ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনের মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ডন জোসে রুইজি ব্লাসকো ও মায়ের নাম মারিয়া পিকাসো লোপেজ। তিনি ছিলেন বিখ্যাত ¯প্যানিশ চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, প্রিন্টমেকার, মৃৎশিল্পী, মঞ্চ নকশাকারী, কবি এবং নাট্যকার। এক কথায় বহুমুখী প্রতিভার এক সমন্বয় ঘটেছিল পাবলো পিকাসোর চরিত্রে। বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী চিত্রশিল্পী। চিত্র যে কথা বলে আমরা পাবলো পিকাসোর কিছু ছবি দেখলেই বুঝতে পারব। তুলির মাধ্যমে এক ছবিই অনেক ইঙ্গিত দেয়, প্রতিবাদ করে অন্যায়ের। আবার প্রেমের অনুপম নিদর্শন তুলে ধরেছেন। হতাশার চিত্রও পাই তার অনেক ছবিতে। পিকাসোর জীবদ্দশায় নারী নিয়েও অনেক লুকোচুরি খেলেছেন। নান্দনিক ছবি এঁকেছেন পিকাসো। আবার মনের কোনে বাস করা নারীকে নিয়ে ছবি এঁকেছেন। মডেল করেছেন কাউকে। তাঁর ছবির গভীরতা অনেক। অন্তর্নিহিত তাৎপর্যও অনেক। পিকাসোর ছবি এতই প্রভাব বিস্তার করেছে যে তাঁর অনেক ছবিই কালজয়ী মর্যাদা পাচ্ছে। ছবি নিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনী হচ্ছে। তাঁর নামে অনেক সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। পিকাসো মানেই অনেকে ছবি বা পিক হিসেবেই চেনে। পাবলো পিকাসোর অসংখ্য চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে তার সময়ে যে কোন চিত্রশিল্পীর তুলনায় অনেক বেশি। আঁকাআঁকিকে সময়কাল হিসেবে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়- ব্লু পিরিয়ড (১৯০১-১৯০৪), রোজ পিরিয়ড (১৯০৪-১৯০৬), আফ্রিকান-ইনফ্লুয়েনড পিরিয়ড (১৯০৭-১৯০৯), এনালাইটিক কিউবিজম (১৯০৯-১৯১২) ও সিনথেটিক কিউবিজম (১৯১২-১৯১৯)। ৫০ হাজারেরও বেশি চিত্রকর্ম রয়েছে পিকাসোর। যার মধ্যে পেইন্টিংয়ের সংখ্যা ১৮৮৫টি, ভাস্কর্য ১২২৮টি, সিরামিক শিল্পকর্ম ২৮৮০, ১২ হাজারেরও বেশি পেনসিল ড্রয়িং ও রাফ ছবি রয়েছে। স্পেন ২০০৩ সালে পিকাসোর সম্মানে ‘মাউসে পিকাসো মালাগা’ নামের একটি মিউজিয়াম তার জন্মস্থানে নির্মাণ করে। পিকাসোর বাবা ছিলেন স্পেনের বার্সেলোনার চারুকলা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পিকাসোর শিল্পী হওয়ার পেছনে বাবার অবদান অগ্রগণ্য। অল্প বয়স থেকেই আঁকাআঁকিতে পিকাসোর ঝোঁক ছিল। ১৮৯০ সালের আগে ফিগার ড্রয়িং ও তৈলচিত্রের আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি বাবার কাছেই। বাবা একদিন দেখলেন, সে অসমাপ্ত কবুতরের চিত্রটি পিকাসো এত নিখুঁতভাবে আঁকছে যে, তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না এটি পিকাসো আঁকছে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। তাঁর আঁকা প্রথম ছবিটি হলো পিকাডোর (ঞযব ঢ়রপধফড়ৎ)। এই ছবিটি তিনি এঁকেছিলেন ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৩৮ সালের দিকে স্পেনে গৃহযুদ্ধ চলছিল। এ সুযোগে স্পেনের গের্নিকায় (শহর) বোমাবর্ষণ করে জার্মান আর ইতালির সম্মিলিত যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় এতে। পিকাসো আঁকলেন। চিত্রকর্মের মাধ্যমে প্রতিবাদ করলেন। গের্নিকা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতি স্বরূপ, যুদ্ধ বিয়োগান্তক এবং বিশেষ করে নিরপরাধ বেসামরিক জনগণের ওপর বর্বরতা যন্ত্রণা প্রকাশ করে। চিত্র যে কথা বলে আমরা পাবলো পিকাসোর কিছু ছবি দেখলেই বুঝতে পারব। তুলির মাধ্যমে এক ছবিই অনেক ইঙ্গিত দেয়, প্রতিবাদ করে অন্যায়ের। আবার প্রেমের অনুপম নিদর্শন তুলে ধরেছেন। হতাশার চিত্রও পাই তার অনেক ছবিতে। পিকাসোর জীবদ্দশায় নারী নিয়েও অনেক লুকোচুরি খেলেছেন। নান্দনিক ছবি এঁকেছেন পিকাসো। আবার মনের কোণে বাস করা নারীকে নিয়ে ছবি এঁকেছেন। মডেল করেছেন কাউকে। তাঁর ছবির গভীরতা অনেক। অন্তর্নিহিত তাৎপর্যও অনেক। পিকাসোর ছবি এতই প্রভাব বিস্তার করেছে যে তাঁর অনেক ছবিই কালজয়ী মর্যাদা পাচ্ছে। ছবি নিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনী হচ্ছে। তাঁর নামে অনেক সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। পিকাসো মানেই অনেকে ছবি বা পিক হিসেবেই চেনে। পিকাসো একের পর এক ছবি এঁকেছেন, ভাস্কর্য গড়েছেন, প্রিন্ট ও খোদাইয়েরও কাজ করেছেন। উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলোÑ ঝপরবহপব ধহফ ঈযধৎরঃু, গের্নিকা, সিটেড উইম্যান ইন ব্লু ড্রেস, দ্য ব্লু রুম, ওল্ড গিটারিস্ট, সেলফ-পোর্ট্রটে, থ্রি মিউজিশিয়ানস, স্কাল্পটর, মডেল এ্যান্ড ফিশবৌল, থ্রি ড্যান্সার্স, গিটার, সিটেড বাথার, পালোমা ইত্যাদি। ব্লু ন্যুড পিকাসোর অন্যতম চিত্রকর্ম। এটি এঁকেছিলেন ১৯০২ সালে। পিকাসোর এক অন্তরঙ্গ বন্ধু মারা যাওয়ার পর তিনি হতাশ হয়ে পড়ে এ ছবিটি আঁকেন। এটি ব্লু পিরিয়ডের এক দারুণ ছবি এবং একটিমাত্র রঙের কাজ। এটির মাধ্যমেই তাঁর প্রতিভার ঝলক সমালোচকরা বুঝতে পারেন। ক্রন্দনরত মহিলা সংক্রান্ত বেশ কিছু ছবি এঁকেছেন পিকাসো। ট্র্যাজেডির চলমান ছবির সিরিজ ছিল। তারই একটি নান্দনিক চিত্রকর্ম। ক্রন্দনরত মহিলার অনুপম ছবি। যা গের্নিকার পরে এঁকেছিলেন। অসহায়ত্ব বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ ছিল ১৯৩৭ সালে পিকাসোর এ চিত্রকর্মে। গধ লড়ষরব ছিল পিকাসোর প্রেমিকা মার্সেলি হাম্বার্ট এর ডাক নাম। যা পিকাসোর দেয়া গোপনীয় নাম। তাঁকে ভালবেসে বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন পিকাসো। পিকাসো অনেক মেয়ের সঙ্গেই প্রেম করেছিলেন। কারও কারও মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী। হাম্বার্ট পার্সিয়ান মিউজিক হলে গান গেয়ে পিকাসোকে আকৃষ্ট করেছিলেন। কোরীয় যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র সুনিপুণভাবে পিকাসো তুলে ধরেছেন এখানে। তিনি যেমন স্পেনের গৃহযুদ্ধেও গের্নিকা মন কেঁদেছে তেমনি ১৯৫০ সালের উত্তর কোরিয়ার শিচন শহরের গণহত্যা নিয়ে। যার নেতৃত্বে ছিল আমেরিকা। আমেরিকার সমালোচনা করে প্রতিবাদস্বরূপ ম্যাসাকার ইন কোরিয়া (আঁকলেন ১৯৫১ সালে। গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পিকাসো তুলির মাধ্যমে। মানবতার পক্ষে তুলি ধরলেন। বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলনেন। গের্নিকার পর এটি যুদ্ধের প্রতিবাদের মাধ্যম ছিল পিকাসোর। উড়ৎধ গধধৎ ধঁ ঈযধঃ একটি চমৎকার ও রহস্যময় চিত্রকর্ম। এটিতে দেখা যায় আনন্দ ও বেদনার দ্বৈত চরিত্রের ছবি। শিল্পী চেয়ারের (ক্ষমতার) দুই দিকই বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করা হয়। পাবলো পিকাসোর অসংখ্য চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় মূল্যে- যা তার সময়ে যে কোন চিত্রশিল্পীর তুলনায় অনেক বেশি। ২০০৪ সালে তার গ্যারসন আ ল্যা পাইপ বিক্রি হয়েছিল ১০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আঁকাআঁকিকে সময়কাল হিসেবে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়- ব্লু পিরিয়ড (১৯০১-১৯০৪), রোজ পিরিয়ড (১৯০৪-১৯০৬), আফ্রিকান-ইনফ্লুয়েনড পিরিয়ড (১৯০৭-১৯০৯), এনালাইটিক কিউবিজম (১৯০৯-১৯১২) ও সিনথেটিক কিউবিজম (১৯১২-১৯১৯)। ১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল ফ্রান্সের মৌগিন্সে মারা যান পাবলো পিকাসো।
×