ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকি মোকাবেলায় কার্যক্রম শুরু

সুন্দরবনে ডলফিনের অভয়ারণ্য আরও বিস্তৃত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২০ অক্টোবর ২০১৮

 সুন্দরবনে ডলফিনের অভয়ারণ্য আরও বিস্তৃত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ সুন্দরবনের আরও প্রায় ১৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় নদীতে বাড়ানো হচ্ছে বিরল প্রজাতির ডলফিনের অভয়ারণ্য। সম্প্রতি এক জরিপে শুশুক ও ইরাবতি ডলফিনের আধিক্য পাওয়া গেছে ওই এলাকাগুলোর নদীতে। এছাড়া ডলফিনের জন্য হুমকি মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যক্রমও শুরু করেছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে সুন্দরবনের ঢাংমারী, চাঁদপাই ও দুধমুখী এলাকার নদীকে ডলফিনের অভয়ারণ্য ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এ তিনটি এলাকার ১০.৭ বর্গকিলোমিটার নদীতে রয়েছে ইরাবতি ডলফিন ও শুশুকের বিচরণ। ২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সুন্দরবনের নদীগুলোতে ইরাবতি ডলফিন ছিল ৪৫১টি এবং শুশুক ছিল ২২৫টি। ডলফিন রক্ষার জন্য গতবছর ‘এক্সপ্যান্ডিং দ্য প্রটেকটেড এরিয়া সিস্টেম টু ইনকরপোরেট ইম্পর্ট্যান্ট এ্যাকুয়াটিক ইকোসিস্টেমস বা গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য রক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গতবছর ১৮ জুলাই প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ইউএনডিপির সহযোগিতায় এবং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটির অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বন বিভাগ। ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের আওতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান এবং একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ সম্প্রতি সুন্দরবনের নদীগুলোতে একটি জরিপ পরিচালনা করেন। এ দুই শিক্ষক জানান, তিনটি অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে সুন্দরবনের অনেক নদীতে এবং বন সংলগ্ন নদীর কয়েকটি এলাকায়ও ডলফিনের আধিক্য পাওয়া গেছে। প্রকল্প ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ইতোপূর্বে ঘোষিত তিনটি অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে আরও অনেক এলাকায় ডলফিনের আধিক্য পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন করে নদীর আরও প্রায় ১৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ডলফিনের অভয়ারণ্য ঘোষণার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ডলফিনের বেশ কয়েকটি হুমকি চিহ্নিত করা হয়েছে। সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকার নদ-নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়ে ডলফিন মারা যায়। পশুরসহ বেশ কয়েকটি নদীতে ভারি নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযানের প্রপেলার বা পাখার আঘাতেও ডলফিন মারা যায়। এছাড়া ডলফিন পাচার, অতিরিক্ত পরিমাণে মাছ আহরণ, মাছ ধরার ক্ষেত্রে নেট ও বেহুন্দি জালের ব্যবহার, পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে ডলফিনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার শিল্প-কারখানার বর্জ্যে পানি দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও বেড়েছে ডলফিনের হুমকি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা আওতায় ডলফিনের হুমকিগুলো নিরসনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। যেসব এলাকায় ডলফিন রয়েছে, সেখানে টহল জোরদার করা হয়েছে। ডলফিন রয়েছে এমন এলাকাগুলোয় যেসব জেলে মাছ ধরেন, তাদের এক হাজার জনকে বেসরকারী সংস্থা কোডেকের মাধ্যমে বিকল্প জীবিকায়ন করা হচ্ছে।
×