ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী

পুরান ইস্কাটন রোডে সচিব কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ শেষ

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২০ অক্টোবর ২০১৮

পুরান ইস্কাটন রোডে সচিব কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ শেষ

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীর পুরান ইস্কাটন রোডে সচিব কোয়ার্টারের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। চলছে ‘ফিনিশিংয়ের’ কাজ। এ মাসেই পুরো কাজ শেষ হবে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্মিত ভবন তিনটির উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ২৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ তলা এই তিনটি ভবন নির্মিত হয়েছে। এসব ভবনে সিনিয়র সচিব, সচিব ও গ্রেড-১ এর কর্মকর্তারা বসবাস করবেন। তিনটি ভবনে মোট ১১৪ ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের গড় আয়তন কম বেশি সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট। কর্মকর্তাদের কাছ থেকে উন্নত সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য আধুনিক মানের আবাসন দেয়া হচ্ছে। আবাসন সংকট যাতে না থাকে সরকার রাজধানীসহ দেশের সব জেলা শহরে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করবে। এ তথ্য জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অব্যবহৃত, অল্প ব্যবহৃত জমিতে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক সংকট সমাধানের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সরকারী চাকুরেদের ঢাকা শহরে আবাসন একটি প্রকট সমস্যা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ গণপূর্ত অধিদফতর চাহিদা অনুযায়ী আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে সরকারী কর্মকর্তারা অধিকাংশই তাদের ক্ষমতার বাইরে অধিক মূল্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিম্নমানের ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। এতে তাদের অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি দূর করতে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সরকার জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য শতভাগ আবাসন নির্মিত হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর পুরান ইস্কাটনে সিনিয়র সচিব, সচিব ও গ্রেড-১ কর্মকর্তাদের জন্য ভবন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। চলছে ঘষা মাজার কাজ। এ মাসের মধ্যে তিনটি ভবনের সব কাজ শেষ হবে। আগামী মাসেই ২০ তলা তিনটি ভবন উদ্বোধন হতে পারে। আমরা চেষ্টা করেছি কাজের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে। গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলীসহ সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দিক দির্দেশনার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা ছিল দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা সমাধানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে পুরান ইস্কাটনে ২৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি ভবন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যথাসময়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই ভবন তিনটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। আমরা এখন সরকারের কাছে ভবন তিনটি হস্তান্তর করে দেব। প্রতিটি ভবনের নিচ তলা ও বেসমেন্টে ১৬১ গাড়ি পার্কিংয়ে ব্যবস্থা রয়েছে। গড়ে প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ৩ হাজার ৪৮১ বর্গফুট। এর চেয়ে কয়েকটি ফ্লাটের আয়াতন বড়ও আছে। ওসব ফ্ল্যাটে সিনিয়র সচিবরা বাস করবেন। প্রধান প্রকৌশলী জানান, তিনটি ভবনের সামনে রাখা হয়েছে সুইমিংপুল, বেবিপুল, শরীর চর্চা কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, কার ওয়াশিং সিস্টেম। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তিনটি ভবনের জন্য তৈরি করা হয়েছে এসটিপি (স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট)। প্রতিটি ভবনে দুটি করে লিফট, স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকছে। সিসিটিভি দিয়ে সর্বক্ষণিক মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে নিজস্ব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। এ জন্য স্থাপন করা হয়েছে গভীর নলকূপ। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মতে, আগে সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসন ব্যবস্থা ছিল শতকরা ৮ ভাগ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ ভাগে। নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে আরও প্রায় ১০ ভাগ আবাসন সুবিধা বাড়বে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গত ১০ বছরে অতীতের যে কোন সরকারের চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন কাজ করেছে। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ গুলো বাস্তবায়ন হলে রাজধানীতে দেড় লাখ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীর আবাসন সমস্যা দূর অনেকটাই দূর হবে। সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই তিনটি ২০তলা ভবনের কাজ শেষ করে বিদ্যুত, গ্যাস ও অন্যান্য সংযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে আরও ১৯ ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এসব ভবনের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে।
×