ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শঙ্কায় মানবসভ্যতা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২০ অক্টোবর ২০১৮

শঙ্কায় মানবসভ্যতা

বদলে যাচ্ছে ক্রমশ সবকিছু। পাল্টে যাচ্ছে বিশ্ব ভুবনের জলবায়ু। ঋতুচক্রে ঘটে গেছে পরিবর্তন। শঙ্কার মুখে মানবসভ্যতা। মহাপ্রলয়ের ঘণ্টা বেজে চলেছে। শোনা যাচ্ছে ধ্বংসের গর্জন। আর দেরি নেই, আসছে মহাপ্রলয়। বাড়ছে তাপমাত্রা। উচ্চতার তপ্ত জলে অবগাহন করতে যাচ্ছে পৃথিবী। গলে যাচ্ছে পাহাড় প্রমাণ হিমশৈল তথা বরফের চাঁই। আর তা মিশে যাচ্ছে সাগর জলে। তাই আয়তন বাড়ছে জলভাগের। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি ক্রমে দাঁড়াচ্ছে সামনে। বেঁচে থাকার সব পথ হতে যাচ্ছে রুদ্ধ। কীটপতঙ্গ, প্রাণী, উদ্ভিদরা হয়ে যাবে নিশ্চিহ্ন। তবে কি বিশ্ব ব্রহ্মা- থেকে লুপ্ত হয়ে যেতে চলেছে মানব জাতির প্রিয় ভুবন, প্রিয় পৃথিবী? পাশাপাশি ভূমিকম্প ঝুঁকি ক্রমশ প্রলম্বিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগ, আতঙ্ক, আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরাও উদ্বিগ্ন। তারাও বলছে, আগামী ১০ বছরেই ভয়ঙ্কর বিপদে তাড়িত হতে যাচ্ছে ভূমন্ডল। হায়! মানব জাতি ধ্বংসের বারতা নিয়ে কেবলই লয়-প্রলয়ের ঘেরাটোপে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে ধাবিত হবে? উদ্ধারের কোন পথ নেই কি খোলা? বিজ্ঞানীরা নিজেরাই মনে করছেন, এখনই পদক্ষেপ নেয়া অবশ্যই জরুরী। নতুবা অচিরেই বাসযোগ্যতা হারাবে মানববিশ্ব। এমনিতেই পরিবেশ রক্ষায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বিপথে চলছে। এই ধারা অব্যাহত থাকা মানেই চলতি শতক শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ এতই বাড়বে যে, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকবে। এমনিতেই প্রতিদিন বাড়ছে উষ্ণতা। এ যেন মহাপ্রলয়ের পথে যাত্রা। বাংলাদেশ এই অবস্থার শিকার হতে যাচ্ছে ক্রমাগতভাবে উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায়। অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের বহু বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন। এসব প্রভাবের অন্যতম হচ্ছে কীটপতঙ্গ ও পানিবাহিত রোগব্যাধির প্রকোপ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া। বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। বাংলাদেশেও তার অনেক আলামত দেখা যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালজুড়েই বর্ষার মতো দীর্ঘসময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। আর বর্ষাকালে তো হচ্ছেই। ছয় ঋতু বলে বাস্তবে এখন আর কিছু নেই। এখন ঋতু হচ্ছে, গরমকাল, প্রচন্ড গরমকাল আর অসহনীয় গরমকাল। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোন উদ্যোগ না নেয়া হলে দক্ষিণ এশিয়া, সাব সাহারা আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার চৌদ্দ কোটির বেশি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হবে। খরা, শস্যহানি ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতে এসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশও এর অন্তর্ভুক্ত। সর্বশেষ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মরত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ছিল শুধুই বিপদের আগাম পূর্বাভাস। এবার তার সরাসরি ফল ভুগতে শুরু করেছে মানবগ্রহ। সবচেয়ে ভয়াবহ যে দিকটি তারা তুলে ধরেছেন, তা হচ্ছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও গড় তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে তিন থেকে চার ডিগ্রী সেলসিয়াস। মেট্রো শহরগুলো হয়ে উঠতে পারে ‘উত্তপ্ত দ্বীপ’। এমনিতে বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে এক ডিগ্রী। কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে গ্রীন হাউস গ্যাস নিগর্মন। এর প্রভাবে গলছে বরফ আর উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই মাত্রা পৌঁছে যাবে দেড় ডিগ্রীতে। মানুষের সহ্যশক্তি বেশি হলেও অনেক প্রাণী উদ্ভিদ এই উষ্ণতার সঙ্গে যুঝতে পারবে না। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১৫০ দেশ গ্রীন হাউস নির্গমন কমানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু সেসব কাগজেই আটকে আছে। রাষ্ট্র নেতারা এই পরিবেশের ভয়ানক বিপদকে আঁচ করতে পারছেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে গুরুত্বহীন মনে করে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছেন। বাংলাদেশ এমনিতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বহু স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ছে। দেশে ভূমিকম্পের আশঙ্কা সম্পর্কে গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় দেশটির অবস্থান হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তেমন প্রস্তুতিও নেই। সাড়ে সাত বা ততোধিক মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা ধ্বংসস্তূপে পািরণত হওয়ার আশঙ্কা এখনও তীব্র। বাংলাদেশকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূমিকম্প মোকাবেলার বিকল্প নেই। এ জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণই হবে শঙ্কামুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ।
×