ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্যফ্রন্টে যোগদান নিয়ে বিকল্প ধারা দু’ভা॥ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ২০ অক্টোবর ২০১৮

ঐক্যফ্রন্টে যোগদান নিয়ে বিকল্প ধারা দু’ভা॥ পাল্টাপাল্টি  বক্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের আশীর্বাদপুষ্ট ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যোগসাজশের দায়ে বিকল্পধারা থেকে বহিষ্কৃত এক নেতাসহ দুইজন এবার দাবি তুলেছেন, আমরাই বিকল্পধারার মূল ধারার নেতা। এক সপ্তাহ আগে বহিষ্কার হওয়া নেতার সঙ্গে থাকা দ্বিতীয়জনও দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন তিন বছর আগে। অথচ এই দুই নেতাই শুক্রবার বিকল্পধারার সভাপতির পদ থেকে ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে নতুন কমিটি গঠনের কথা সাংবাদিকদের জানান গত ১৩ অক্টোবর বিকল্প ধারা থেকে বহিষ্কৃত এ্যাডভোকেট শাহ আহম্মেদ বাদল। আর সন্ধ্যায় বি চৌধুরীর বারিধারার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে মাহি বি চৌধুরী বলেছেন, যারা বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিবকে বহিষ্কার করেছেন, তারাই এক মাস আগে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তারা বিকল্পধারার কেউ নন। তিনি বলেছেন, এর পেছনে একটি বড় রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। দলের কোন পদ না থাকা ব্যক্তিদের কর্মকান্ড নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি না হলেও ঘটনাকে ‘হাস্যকর’ অভিহিত করে মাহি বি চৌধুরী বলেছেন, এটা বিএনপির দেউলিয়াপনার বহির্প্রকাশ। নিজেকে নেতা ঘোষণার পেছনে বিএনপির হাত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, দলের বহিষ্কৃত নেতাকে নিয়ে এসব কাজ করা নোংরামি ছাড়া আর কিছু নয়। এখন তাদের এ ধরনের ঘটনা হাস্যরসের খোরাকও জোগায়। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে নতুন কমিটি গঠনের কথা সাংবাদিকদের জানান বিকল্প ধারা থেকে বহিষ্কৃত এ্যাডভোকেট শাহ আহম্মেদ বাদল। নিজেদের বিকল্প ধারার ‘মূল ধারা’ হিসেবে দাবি করে তিনি শীঘ্রই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ারও ঘোষণা দেন। বিএনপিকে নিয়ে গঠিত কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেয়ায় পর তার বিরোধিতা করেছিলেন বিকল্প ধারার এ নেতা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের দিনই দলের সহসভাপতি বাদলসহ কয়েকজনকে বহিষ্কার করেন বিকল্প ধারা সভাপতি বি চৌধুরী। বাদল বলেন, আজকে শুক্রবার আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ছিল। এসে দেখি তা বাতিল করা হয়েছে। কার ইশারায় আমাদের নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হলো, তা আমরা জানি না। আমরা গঠনতন্ত্রের ৫/২ ধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (সভাপতি), আবদুল মান্নান (মহাসচিব) ও মাহি বি চৌধুরীকে (যুগ্ম মহাসচিব) দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরাই বিকল্প ধারার মূল ধারা। তিনি জানান, তারা বিকল্প ধারার সভাপতিমÐলীর সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করেছেন। অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারীকে পাশে রেখে বাদল বলেন, অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী সভাপতি আর আমি মহাসচিব। অন্যান্য পদে কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মনোনয়ন দেব। শৃঙ্খলাভঙ্গ করে থাকলে বি চৌধুরীকে বহিষ্কার কেন করলেন না- প্রশ্ন করা হলে বাদল বলেন, উনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, সেজন্য তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হব। শাহ আহম্মেদ বাদল বলেন, বিকল্পধারার তিনজন বাদে সবাই আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা নতুন কমিটির প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিবের নাম আজ শুক্রবার ঘোষণা করলাম। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম ঘোষণা করা হবে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষক নেতা অধ্যাপক নুরুল আমিন বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। জামায়াত প্রশ্নে বি চৌধুরী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাননি, আপনারা কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দলের কেউ জামায়াতকে সমর্থন করে না। এটা মাহি চৌধুরীর ক‚টচাল। মেজর মান্নানের দুর্নীতির খবর বের হয়েছে। কোন দুর্নীতিবাজ বিকল্প ধারায় থাকতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারার মুখপাত্র মাহি বি চৌধুরী বলেন, বিকল্পধারার নামে দল গঠন ঘৃণিত ও হাস্যকর। তিনি বলেন, বিকল্পধারার বহিষ্কৃত নেতা শাহ আহম্মেদ বাদল বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর একজন কর্মচারী। সেখান থেকে হয়ে থাকলে, এটি খুবই দুঃখজনক। এ সময় তিনি খবরের গুরুত্ব অনুসারে সত্যতা নিশ্চিত হয়ে সঠিক সংবাদ প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান। মাহি জানান, আমরা বিএনপিকে আগেই বলেছি, স্বাধীনতাবিরোধীদের ছাড়লে এবং ভারসাম্যের রাজনীতি মেনে নিলে তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে আমাদেও কোন আপত্তি নেই। এখনও বিএনপির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে ঐক্যের বিরোধী। আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহৎ ঐক্য চাই। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপ এবং এনডিপি যুক্তফ্রন্টে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। আরও অনেক দল এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি জানান, ২০০১ সালে বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট করেছে। সে সময় থেকে বিএনপিতে ভাঙ্গনের সূত্রপাত। বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিকল্পধারা মুখপাত্র বলেন, বি চৌধুরী সাত মাস রাষ্ট্রপতি থাকার পর পদত্যাগ করেন। ২০০৪ সালে সংসদ সদস্যপদ থেকে তিনি নিজে এবং মেজর (অব) মান্নান পদত্যাগ করেন। তারপর কর্নেল অলির নেতৃত্বে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ আরও ৩০ থেকে ৩৫ জন পদত্যাগ করেন। এরপর বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সব ভাঙ্গনই হয় স্বাধীনতাবিরোধীদেও জোটে নেয়ার কারণে। বিকল্পধারার সহসভাপতি মুহাম্মদ ইউসুফ, যুগ্ম মহাসচিব আবদুর রউফ মান্নান, সহসভাপতি মাহবুব আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
×