ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন কমিশন ‘বিভক্ত’: ফখরুল

প্রকাশিত: ০২:২৭, ২০ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচন কমিশন ‘বিভক্ত’: ফখরুল

অনলাইন রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশনারদের ‘দ্বিধা-বিভক্ত’ বক্তব্যকে সঙ্কট হিসেবে দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি একজন নিরবাচন কমিশনারের কমিশন সভা বর্জন এবং তা নিয়ে পরে আরেকজনের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার কমিশন সভা শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় তা বর্জন করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, অংশীদারমূলক, গ্রহণযোগ্য করতে কিছু প্রস্তাব নিয়ে তিনি আলোচনা করতে চাইলেও তাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই অপমানিত হয়ে সভা বর্জন করেছেন। বুধবার আরেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুব তালুকদার সভায় যেসব প্রস্তাব তুলতে চেয়েছিলেন তার কয়েকটি ‘অযৌক্তিক’ এবং একটি ‘সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ ছিল। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম, নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন যে, আমি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করবার জন্য যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলাম, সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না। আরেকজন কমিশনার বলছেন, আন কনস্টিটিউশনাল কথা বলছেন এই কমিশনার । এসব বক্তব্যে নির্বাচন কমিশন নিজেরাই তো বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। “কমিশন তো একটাই থাকতে হবে। তাদের যা কিছু বক্তব্য আসবে তা কমিশনের একটাই আসতে হবে। আজকে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন কমিশনে, এই সংকটটাই হচ্ছে এখন রাষ্ট্রের সংকট।” মির্জা ফখরুল বলেন, “জোর করে তাদেরকে (ইসি) দিয়ে সকল প্রকার নিয়ম-কানুন তৈরি করে ২০১৪ সালের মতো একটা নির্বাচন করে নিয়ে একটা দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া, এটা কখনো নির্বাচন হতে পারে না এবং নির্বাচন কমিশনও সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে না। তারা যদি করে সেটা সংবিধানের বিরুদ্ধে কাজ হবে, তারা যে শপথ নিয়েছে তার বিরুদ্ধে চলে যাবে। এটা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হবে।” বরাবরের মতো নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি এই নির্বাচন কমিশন যোগ্য নয়। তারা কাজ করতে পারবে না, নির্বাচন করতে পারবে না। বাস্তবতাটা কী? এই কমিশনের নিজস্ব কোনো ক্ষমতায় নাই। পুরোটাই নির্ভর করতে সরকারি কর্মকর্তাদের উপরে, সরকারের উপরে। যে সরকার ইতিমধ্যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে ফেলেছে, যে সরকার ডিএনএ টেস্ট করে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করছে, এতোটুকু গন্ধ যদি থাকে বিরোধীদলের তাহলে তাকে কোথাও নিয়োগ দেওয়া হয়না, পোস্টিং দেওয়া হয় না, সেই সরকারের ব্যক্তিদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা অসম্ভব। নির্বাচন কমিশন সচিবেরও সশারোচনা করেন তিনি। “যে সচিব তার কথা শুনলে মনে হয়, সেই প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা। আর প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তাকে মনে হয় সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি। সকলে একটা বলেন, বিকালে আরেকটা বলেন, সাতদিন আগে এক কথা বলেন, সাতদিন পর আরেক কথা বলেন। আমাদের হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবের সাথে তার খুব একটা পার্থক্য দেখি না। এটাই বাস্তবতা। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কিভাবে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে?” সরকারের দ্বৈতনীতির সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই যে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট ২৩ তারিখ একটা জনসভা করতে চেয়েছিল সিলেটে, বলেছে নাশকতা হতে পারে, সুতরাং এটা দেওয়া যাবে না। আজকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেব রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে সরকারি টাকায় গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে সভা করেছেন। এখানে কোনো নাশকতা হবে না। আমরা করতে গেলেই নাশকতার চিন্তা। বিরোধী দল কথা বলতে গেলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষ, উনি নাকী রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন। তার বিরুদ্ধে এখন জমির মামলা-টামলা শুরু হয়ে গেছে, যেহেতু তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সেগুলো মানুষ বোঝে। মানুষকে বোকা ভাবার কোনো কারণ নেই।” গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই পর্যন্ত ‘গায়েবি’ মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ইতিমধ্যে গায়েবি মামলার সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, মোট মামলার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৯০ হাজার। গায়েবি মামলা আসামি করা হয়েছে ৫ লক্ষ। আমাদের এই হিসাবগুলো আসছে এলাকাগুলো থেকে প্রত্যেক নেতাকর্মীর এফআইআর থেকে। এই সরকার আসার পর থেকে আমাদের মামলার আসামির সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।” বক্তব্যের শুরুতে জাগপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব। জাগপার সহসভাপতি তাসমিয়া প্রধানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, এনপিপির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, সহসভাপতি আবু মোজাফফর মো. আনাছ, মাস্টার এম এ মান্নান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, দলের মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বক্তব্য রাখেন।
×