ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাড. আনিসুর রহমান দিপু

যার তুলনা তিনি নিজেই

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২১ অক্টোবর ২০১৮

যার তুলনা তিনি নিজেই

‘উন্নয়নে অর্জনে তুমি আজ/বিশ্বের অনন্ত বিস্ময় মানবতার জননী তুমি/সবার হৃদয় করেছ জয়’ কবিতার এই পঙ্ক্তির মধ্যেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কাব্যিক ব্যঞ্জনা। এ উন্নয়নের পথ বেয়েই এদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী করে আওয়ামী লীগকে পুনরায় দেশ পরিচালনার ভার অর্পণ করবেÑ এটা আমারও দৃঢ় বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আজ বলতে ইচ্ছে হচ্ছে- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উদযাপন হবে গৌরবময় ইতিহাসের অমোঘ ধারায় এবং তাঁরই নেতৃত্বে পাওয়া সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবময় মখমলি পর্দা উন্মোচিত হবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। অর্থাৎ বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হবে ১৯৭১-এ ত্রিশ লাখ শহীদ আর চার লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব। উল্লেখ্য, এই ৫০ বছরের একটা সিংহভাগ সময় এক অশুভ শক্তি তথা স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর হাতে ছিল বাংলাদেশের শাসনভার। এদের হাত থেকে আজ দেশ মুক্ত হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিস্ময়করভাবে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে। এই এগিয়ে যাওয়ার সাফল্যগাথা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। বিশ্বজুড়ে চলছে তাঁর সুখ্যাতির গভীর স্তুতি। যার আলোকচ্ছটায় বাংলাদেশ আজ আলোকোজ্জ্বল। তাঁকে বাংলাদেশের মানুষ কিছুদিন আগে মনপ্রাণ উজাড় করে জানিয়েছে অকৃত্রিম অভিবাদন। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয়েছিল বর্ণোজ্জ্বল এক উৎসবের। যে উৎসবের মধ্যমণি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোরম আর রৌদ্রোজ্জ্বল অপরাহ্ণের এ উৎসব ঘিরে ছিল লাখো মানুষের আবেগময় অংশগ্রহণ। দিনটি ২১ জুলাই, ২০১৮। সমবেত মানুষের হাতে ছিল রেশমি গোলাপগুচ্ছ। শ্রদ্ধা আর ভালবাসার নিপুণ ছবিটি সেদিন ফুটে উঠেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছায়াঘেরা প্রান্তরে। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকেলটা যেন ১৯৭১-এর ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা প্রদান দিনের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১-এর মার্চ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আহ্বানের প্রস্তুতি। আর ২০১৮-এর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ ছিল ৪৭ বছরের বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্রটা মানুষের মনের ক্যানভাসে চমৎকারভাবে এঁকে দেয়ার এক উৎসব পর্ব। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সালÑ এই সময়ে তথা প্রায় ২১ বছর ছিল দুই জেনারেল এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের পাকিস্তানপ্রেমী স্বৈরশাসনের যুগ, যে যুগকে অন্ধকার যুগ তথা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার যুগ বলে আজ বিবেচিত। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৯৬ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই মাহেন্দ্রক্ষণে ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম আবেগ বুকে বহন করে জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে আওয়ামী লীগ। তখন থেকেই বিস্ময়ের রেখাটা দিগন্তে উন্মোচিত হতে থাকে। মাঝে ২০০১-২০০৬ পুনরায় ফিরে আসে অন্ধকার যুগের বিভীষিকা, যে বিভীষিকা এক সাম্প্রদায়িক অগ্নিগোলক বহন করে বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় সম্প্রীতি পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। ছাইভস্মের গহীন অতলে ঘুম পাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক চৈতন্য ও চিরায়ত বাঙালী সংস্কৃতিকে। কিন্তু তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে নানা দুর্বিষহ ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ২০০৮ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরায় এক অত্যুজ্জ্বল বিস্ময়ের আবহমান রূপরেখায় চড়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় ফিরে আসার পরই অভূতপূর্ব বিস্ময় থেকে বিস্ময়কর গল্পের জন্ম হতে থাকে বাংলাদেশে। আর এই বিস্ময়ের রূপকার আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিস্ময় শুধু বিস্ময়ের মধ্যেই থেমে থাকেনি, যেন বিশ্বখ্যাত জাদুকর ‘ডেভিড কপার্ড ফিল্ডের’ অতিবিস্মিত জাদুময়তার ঘোরকেও হার মানিয়ে এক অবিশ্বাস্য জাদুর কাঠির স্পর্শে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেলে রূপান্তরিত করে বাঙালীকে বিশ্বে এক অমিততেজী জাতি হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। যার ভিত্তি দক্ষতা, সুচিন্তিত-বিচক্ষণ নেতৃত্ব এবং দেশপ্রেমের অন্তরীক্ষসম ভালবাসা। ২০০৮ থেকে ২০১৮। এই দশ বছরে গণতন্ত্রের মানসকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক অভাবনীয় সাফল্যকে বাংলাদেশ স্পর্শ করেছে। যার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের জনগণ। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের স্বপ্নের সফলতাকে এখন দোরগোড়ায় নিয়ে আসার শেষ সীমায় এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর অর্থনীতিকে এমন এক ভিত্তি প্রদান করেন যার নিমিত্তে দেশে দারিদ্র্যের হার একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ১৮ হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন সক্ষমতা স্পর্শ করেছে। শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিকল্পিত পরিবার, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ৭-এর ওপরে প্রবৃদ্ধির হার, কৃষিপণ্যের মজুদ চাহিদার নির্দিষ্ট রেখা অতিক্রম করে বর্তমানে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। পোশাক খাতে বৈপ্লবিক সাফল্যের সূত্র ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। রেমিটেন্সও অভূতপূর্ব রেকর্ডের মাত্রা গত দশ বছরে এতটাই আলো ছড়িয়েছিল যার উজ্জ্বলতার ছোঁয়াটি লাগে বিশ্ব দরবারেও। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বিশাল সমুদ্র বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্ব রাজনৈতিক পরিম-লে অন্য এক মাত্রা যুক্ত করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে (বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত দেশ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের জোরালো অবস্থান বাংলাদেশের সুনাম আরও বাড়িয়ে দেয়। উন্নয়নের মহাসড়কে বিশ্বব্যাংকের ক্রীড়নকদের চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু এক বিশাল গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক হিসেবে আজ আলোচ্য বিষয়। শেখ হাসিনার সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে, যা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অপেক্ষায়। বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস আর দেশপ্রেম তার ললাটে এঁকে দিয়েছে সাফল্যের রাজচিহ্ন এবং মহাসমারোহে নিজস্ব অর্থায়নে আজ পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে, যা দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প হিসেবে পরিগণিত। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় বিশ্বের দরবারে এক বিরল ঘটনা হিসেবে বিবেচিত আজ। সাফল্যের অনন্যতায় শেখ হাসিনা বিশ্বের শীর্ষ চিন্তাবিদের শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছেন এবং বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ সৎ রাষ্ট্রনায়কের তালিকায় তৃতীয় স্থানে নাম লিখিয়ে তাঁর সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়েছেন। জঙ্গীবাদ নির্মূলে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন দেশের সুনাম দক্ষিণ এশিয়ার গ-ি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তদুপরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মানুষ যে ভাল থাকে তার উজ্জ্বল প্রমাণ রেখে চলেছেন শেখ হাসিনা। মাদার অব হিউম্যানিটিতে ভূষিত মহান এই নেত্রী প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মহত্ত্বের এক বিরল রেকর্ড স্থাপন করেছেন, যা শেখ হাসিনার মানবতাবোধকে বিশ্ববাসীর কাছে আরও সমুন্নত করেছে। মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশ উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর উৎক্ষেপণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি সমুদ্র বিজয়, ছিটমহল সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান, মা ও শিশুদের জন্য কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক স্থাপন, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের হাতে প্রায় ৩৪ কোটি বই বিনামূল্যে অর্পণের মহৎ উদ্যোগ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত, যোগাযোগ, অবকাঠামো, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, সাবমেরিন ক্রয়, সুদক্ষ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী গড়ে তোলা, আধুনিক পুলিশী ব্যবস্থা গ্রহণসহ অজস্র ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব সাফল্য বাংলাদেশ অর্জন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই অভাবনীয় সাফল্যের পথ বেয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশকে আরও মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে রূপ দেবে যদি আওয়ামী লীগ পুনরায় জয়লাভ করতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই সরকারের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ থাকলে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজনীতি, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক ধারাও থাকবে সুষ্ঠু প্রবাহে প্রবাহিত। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক, ডিজিটাল ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি এবং উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা, সততার চিত্রটি আন্তর্জাতিক জনমত জরিপে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠনের জরিপে বাংলাদেশের ৬৬% মানুষ তাঁর উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতি ও দেশ পরিচালনার দক্ষতাকে সমর্থন জানিয়েছে। আসলে বঙ্গবন্ধুর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের সাড়ে তিন যুগের বিশাল ক্যানভাসের সাফল্যগাথা ও উন্নয়নের ছবিটা রংধনুর সমস্ত রং মিশিয়েও যেন বিস্ময়ের ছবি আঁকা শেষ হবে না। এই হলো আমাদের গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মুক্তিযুদ্ধের বাতিঘর, উন্নত বাংলাদেশের বিশ্বজয়ী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাঁর কাছে ঋণী এই বাংলাদেশের আকাশ, দিগন্ত, প্রকৃতি, নদী, ধূলিকণা, হাওয়া। ঋণী বাংলার সবুজ-শ্যামল ছবি আর নদী, মাঠ, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। শেখ হাসিনার তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর নামের পাশে আজ লিপিবদ্ধ হয়েছে শুধুই তাঁরই নাম বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরতœ শেখ হাসিনা। লেখক : আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ
×