ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ অক্টোবর খসড়া চূড়ান্ত

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২১ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তির উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ দীর্ঘ দশ বছর পর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ট্রানজিট চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তায় ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। ট্রানজিট চুক্তির ফলে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করছে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালকে নিয়ে চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি (বিবিআইএন) থেকে সরে আসার পর বাংলাদেশের কাছে দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তির প্রস্তাব দেয় ভুটান। চুক্তিটি করা হলে বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথ ব্যবহার করে নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবে দেশটি। আর ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে ভুটানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হলে তখন এই ট্রানজিট সুবিধায় ভুটানের ভেতর দিয়ে চীনে পণ্য পরিবহন করবে বাংলাদেশ। আগামী ২৫ অক্টোবর ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে ট্রানজিট বিষয়ে ভুটানের সঙ্গে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চুক্তি সইয়ের বিষয়ে এবার বেশ অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে সরকার। বিবিআইএন থেকে সরে আসলেও ট্রানজিট চুক্তিটি করার বিষয়ে ভুটানের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। ভুটানের পক্ষ থেকে চুক্তিটি করার আগ্রহ দেখিয়ে এ বছর তিনবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দেশটি। সর্বশেষ সুবিধাজনক সময় বিবেচনা করে আগামী ২৫ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, ২০১৩ সালে ভুটানকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার সার-সংক্ষেপে সই করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন এ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার লক্ষ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রানজিট এ্যান্ড প্রটোকল গঠন করা হয়। এরপর চার দেশের মধ্যে বিবিআইএন নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট সুবিধার বিষয়টি নিয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি। তবে ১৯৮০ সালে ১০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী এটি আরও ১৮ বছর বহাল থাকার পর ২০০৮ সালে মেয়াদ শেষ হয়। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন নতুন করে চুক্তি করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে সব ধরনের অবকাঠামো ব্যবহারের সুবিধা পাবে দেশটি। এটি হবে ট্রানজিট সংক্রান্ত বহুমুখী সমন্বিত চুক্তি। চুক্তির ফলে রেল, সড়ক, নৌ, বিমান পথ ও বন্দর ব্যবহারের বিনিময়ে বাংলাদেশ পাবে রাজস্ব। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম (এফটিএ) জনকণ্ঠকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের একটি চুক্তি করার উদ্যোগ রয়েছে। এটি নতুন কোন বিষয় নয়। কারণ ভুটানের সঙ্গে আগেও ট্রানজিট চুক্তি ছিল। মেয়াদ শেষে আর করা হয়নি। চুক্তি হলে ভুটান বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা নিতে পারবে। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে ভুটানের সংযোগ হলে বাংলাদেশ ভুটানের ভূখ- ব্যবহার করে চীনে পণ্য পরিবহনের সুবিধা নেবে। প্রস্তাবে যা আছে ॥ মূলত ভুটানের আগ্রহেই এ চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। চারদেশীয় মোটরযান চুক্তি থেকে সরে আসার পর ভুটান নতুন করে আবার ট্রানজিট চুক্তি করার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশকে। প্রস্তাবে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়- বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে নৌ ও সড়ক পথে ভারতের ওপর দিয়ে নিজ দেশে পণ্য নিয়ে যাওয়া হবে। গত ২০১৪ সালে ভুটান চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশকে দিয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশও ভুটানকে চুক্তির একটি খসড়া দিয়েছিল। বিবিআইএন চুক্তি অনুসমর্থন না করায় এখন আবার বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করতে চাচ্ছে ভুটান। শর্তানুযায়ী, যানবাহন ব্যবহারের ফিসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে অন্যান্য খরচ আদায় করতে পারবে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর থেকে ১৫ টনের যানের জন্য প্রতি কিলোমিটারে প্রতি টনে ২.৩০৩ টাকা মাসুল ধরার কথা বলা হয়েছে। আর ১৫ টন থেকে ২৫ টন পর্যন্ত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে প্রতি টনে ২.৫৮৪ টাকা এবং ২৫ টনের বেশি ওজনের যানবাহনের জন্য প্রতি টনের জন্য কিলোমিটার প্রতি ৫.৩৭৯ টাকা আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে মাসুল কত নির্ধারণ করা হবে, তা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্ধারণ করা হবে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৯০টি পণ্যে ভুটান শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, বাংলাদেশ দিয়েছে ভুটানের মাত্র ১৮টি পণ্যে। জানা গেছে, গত ৫ বছরে ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট বাণিজ্য হয়েছে ২ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ভুটান থেকে বাংলাদেশ ২ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে এবং রফতানি করেছে ১৮ লাখ মার্কিন ডলারের। রফতানি বাণিজ্য ভুটানের অনুকূলে রয়েছে। ভুটান থেকে বাংলাদেশ প্রধানত ফলমূল, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাথর, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল (ফেরো সিলিকন) ও মশলা জাতীয় পণ্য আমদানি করে থাকে। বিপরীতে রফতানি হচ্ছে জুস, বিস্কুট, প্লাস্টিক পণ্য, ফার্নিচার, তৈরি পোশাক, ওষুধ ও তৈজসপত্র।
×