ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেড়ার চরপেঁচাকোলা গ্রাম যমুনার ভাঙ্গনে বিলীন

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২১ অক্টোবর ২০১৮

বেড়ার চরপেঁচাকোলা গ্রাম যমুনার ভাঙ্গনে বিলীন

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা ॥ যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনের তা-বে বেড়ার চরপেঁচাকোলা গ্রাম বিলীন হতে চলেছে। গত ১৫ দিনের ভাঙ্গনে মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আড়াই শতাধিক বসতবাড়ি যমুনার গর্ভে হারিয়ে গেছে। প্রতিদিনই এ ভাঙ্গন চলছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বণ্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, কবরস্থানসহ অসংখ্য বসতবাড়ি হুমকির মধ্যে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার চরপেঁচাকোলা গ্রামের পূর্ব প্রান্তে বিশাল চর জেগে উঠেছে। যমুনার স্রোতধারা পশ্চিম প্রান্তে সরে সরাসরি চরপেঁচাকোলা গ্রামে আঘাত করছে। এতে দুই কিলোমিটার এলাকায় প্রচ- ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন এলাকায় পানির গভীরতা দাঁড়িয়েছে ৪০ ফুট। পানি উন্নয়ন বিভাগ ভাঙ্গন এলাকায় ডাম্পিংয়ের জন্য ১৭ হাজার ৬৩৬টি জিও ব্যাগ বরাদ্দ দিয়েছে। একটি মাত্র ট্রলারের সাহায্যে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে শুধু টাকার অপচয় হচ্ছে, ভাঙ্গন রোধে কোন কাজেই আসছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ভাঙ্গন রোধের নামে শুধু আই ওয়াশ করা হচ্ছে। দুই কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ৮-১০টি গ্রুপে ৮০ থেকে ৯০ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলে ভাঙ্গনরোধ সম্ভব হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। গত ১৫ দিনে চরপেঁচাকোলা গ্রামের ইউনুস ব্যাপারী, নূর মোহাম্মদ, নূর ইসলাম, জাহাঙ্গীর, মজিদ মোল্লা, রফিক মোল্লা, মজিবর মোল্লা, মিজানুর মেম্বর, শিবলু সরদার, নাসিম সরদারের বাড়িসহ প্রায় আড়াই শতাধিক বসতবাড়ি একটি মাদ্রাসা ও কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থান থেকে যমুনা নদী কোথাও ১০ ফুট কোথাও বা ১৫ ফুট দূর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই স্থাপনাগুলো যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিতদের মাঝে ভাঙ্গন আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সামছুল হক টুকু, বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী, এসি ল্যান্ড মাহবুব হোসেন ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম ভাঙ্গনকবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। চরপেঁচাকোলা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ মাওলানা আঃ সোবহান জানান, গত ৫০ বছরে যমুনার এমন ভয়াবহ ভাঙ্গন তিনি দেখেননি। চোখের পলকে ঘর গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চোখে না দেখলে নদীভাঙ্গা মানুষের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করা যায় না। গত ১৫ বছরে নদী ভাঙ্গনে অনেক গ্রাম, মসজিদ, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ হাজার পরিবার সহায় সম্বল হারিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তারা অন্যত্র জমি কিনে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই তারা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে যমুনা নদী ১০ ফুট দূর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোন সময় বাঁধ ধসে যেতে পারে এ আশঙ্কায় বসতিরা ঘরদোর সরিয়ে নিচ্ছে। চরপেঁচাকোলা গ্রামের প্রবীণ মজিদ মোল্লা জানান, গত এক যুগে দুই দফা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন। এক সময় ২০ বিঘা জমি ও সাজানো ঘরবাড়ি ছিল তার। এখন কিছুই নেই, সবই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বেড়া পৌর সদরে শ্রমিকের কাজ করে কোনরকম চলছে তার পাঁচ সদস্যের সংসার। হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বর চরপেঁচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, হুড়াসাগর ও যমুনা নদীর মোহনা থেকে ড্রেজার ও ভলগেটের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে চরপেঁচাকোলা গ্রামের ভাঙ্গন ঠেকানো যাবে না। ভাঙ্গনরোধে বেড়া পাউবো বিভাগ যে পরিমাণ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলেছে তা কোন কাজেই আসছে না। ফলে ব্যাপক ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করা হলে ভাঙ্গন রোধ সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। বেড়া পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ভাঙ্গন রোধ প্রকল্পের সাইড ইঞ্জিনিয়র মোঃ ওসমান গনি জানান, চরপেঁচাকোলায় ভাঙ্গন রোধ কাজে ১৭ হাজার ৬৩৬টি জিও ব্যাগ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আরও বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যাপক ভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধ করা হবে।
×