ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

একাত্মতা প্রকাশ ওবায়দুল কাদেরের

ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেফতার দাবি, অবাঞ্ছিত ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২১ অক্টোবর ২০১৮

ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেফতার দাবি, অবাঞ্ছিত ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলায় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশের নারী সাংবাদিকসহ পুরো সাংবাদিক সমাজ। সাত দিনের মধ্যে মইনুলের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে রাজধানীতে আয়োজিত সমাবেশ থেকে। মইনুলের বাড়ি ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়ে দাহ করা হয়েছে কুশপুতুল। মইনুলের খবর গণমাধ্যমে সাত দিনের জন্য বয়কটে সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নারী সাংবাদিকরা। এদিকে মইনুলের আচরণকে দ-নীয় অপরাধ অভিহিত করে সাংবাদিকদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিক কলামিস্ট মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের খবর সব গণমাধ্যমে সাত দিনের জন্য বয়কটে শনিবার সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নারী সাংবাদিকরা। খোলা চিঠিতে তারা সম্পাদকদের উদ্দেশে লিখেছেন, গত ১৬ অক্টোবর মধ্য রাতে একাত্তর টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন একাত্তর জার্নালে রাজনৈতিক সংবাদের বিশ্লেষণ চলছিল। এ সময় ব্যারিস্টার মইনুলের কাছে মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে যে, সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব আপনি করছেন কি না? এর জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের এই বক্তব্য শুধু নারীর জন্য নয় সব নাগরিকের জন্য অবমাননাকর, আপত্তিকর ও চরম অসহনশীলতার পরিচায়ক। তার মতো যারা রাজনৈতিক সহনশীলতার কথা বলেন, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের শব্দচয়ন উদ্বেগজনক এবং ভবিষ্যতে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য বিপজ্জনকও বটে। এই বক্তব্য প্রত্যাহারপূর্বক তার কাছ থেকে একটি প্রকাশ্য মার্জনা প্রার্থনা দাবি করা হচ্ছে দেশের সব সচেতন নাগরিকের পক্ষ থেকে। কিন্তু এখনও ব্যারিস্টার মইনুলের কাছ থেকে সেরকম কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী সাংবাদিকদের প্রতি চরম অবমাননাকর প্রচার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মাসুদা ভাট্টিকে লক্ষ্য করে চালানো অপপ্রচার সীমা অতিক্রম করছে। তার নিরাপত্তা সঙ্কটও তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এই আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ায় এবং এখনও জনসম্মুখে ক্ষমা না চাওয়ায় তাকে সব ধরনের সংবাদ, অনুষ্ঠান এবং টক শো থেকে বয়কট করার জোর আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষার্থেই এই দাবি সঙ্গত বলে উল্লেখ করেছেন নারী সাংবাদিকরা। মইনুল হোসেনকে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন সংগঠন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। কর্মসূচীর আয়োজন করে সংগঠন গৌরব ’৭১। মানববন্ধনে প্রতিবাদকারীরা বলেছেন, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটাক্ষ করার দায়ে মইনুল হোসেনকে সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। না হলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল সংগঠন মইনুলের বাসভবন ঘেরাও করবে। এক ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধনের পর বিক্ষোভ প্রদর্শন করে গৌরব ’৭১। পরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কুশপুতুল দাহ করা হয়। এ সময় অনেকেই তার কুশপুতুল জুতাপেটা করেন। মানববন্ধনে নারী বক্তারা বলেন, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে প্রকাশ্যে চরিত্রহীন বলা মানে গোটা নারী জাতিকে চরিত্রহীন বলা। গোটা নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে। এর অপরাধে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মাসুদা ভাট্টির কাছে নয় পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে ১/১১-এর কুশীলব আখ্যা দিয়ে বক্তারা বলেন, উনি তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানপাপী। সাংবাদিক মানিক মিয়ার কুলঙ্গার সন্তান। তাকে রাজনীতি থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করতে হবে। গৌরব ’৭১-এর উপদেষ্টা অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, মইনুল হোসেনের বিচার না করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল অর্জন বিতর্কিত হবে। কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জামাল বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আপনি নিজের চরিত্র সংশোধন করুন। যত ঐক্যফ্রন্ট করুন, মুক্তিযোদ্ধারা আপনাকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে। জুতাপেটা খাওয়ার আগে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। আপনাকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নামে আপনি জামায়াতে ইসলামীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। নারী নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, আমরা দেখেছি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামায়াতের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে। ওই অনুষ্ঠান তার কি অবস্থান ছিল- আমরা জানি। মাসুদা ভাট্টি এ মর্মেই তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে শাহবাগে আনতে হবে। বিচার করতে হবে, নইলে সরকারের সকল অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। মানববন্ধনের শেষে কবি অসীম সাহা মইনুল হোসেনকে ব্যঙ্গাত্মক কবিতা আবৃত্তি করেন। যা মানববন্ধনকে হাস্যরসাত্মক করে তোলে। বিক্ষোভ শেষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। মানববন্ধনে অংশ নেন যুব সমিতির কয়েক শ’ তরুণ। তারাও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামায়াতে ইসলামীর এজেন্ট আখ্যা দিয়ে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। শাহবাগের ওই মানববন্ধনে সবুজ, হলুদ ও সাদা রঙ্গের টুপি পরে অসংখ্য শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। টুপিতে লেখা ছিল, মইনুলের বিচার চাই। তারা ব্যারিস্টার মইনুলের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন, একাত্তরের দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান। ১/১১-এর দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান। গৌরব ’৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা মইনুলের পাকিস্তার প্রীতির উদাহরণ দিয়ে তাকে পাকিস্তান চলে যাওয়ার আহ্বান জানান। এদিকে মইনুলের অশালীন আচরণকে আইন অনুযায়ী দ-নীয় অপরাধ অভিহিত করে সাংবাদিকদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তনি বলেছেন, একটি টেলিভিশন টক শোতে নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে এক-এগারোর কুশীলব, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন যে অশালীন, অশোভন আচরণ করেছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। ব্যারিস্টার মইনুল মাসুদা ভাট্টিকে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দ-নীয় অপরাধ। আমরা নারী সাংবাদিকদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছি। শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে জোট হয়েছে, এটা সাম্প্রদায়িক ও অশুভ শক্তির জোট। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতা নয়, শেখ হাসিনাকে হটানো। নীতিগতভাবে তাদের সঙ্গে আমাদের সংলাপ হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন বলেছে, নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হবে, তার মানে বাকি আছে ১০-১২ দিন। এর মধ্যে কিসের সংলাপ? সংলাপ করার সময় কোথায়? ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের আগে সিলেটের মাজার জিয়ারত আমাদের দেশের রাজনৈতিক ট্র্যাডিশন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি মাজার জিয়ারতের জন্য সেখানে যায়, সেটা কোন বিষয় নয়। যদি সেখানে যায়, যেতে পারে। কিন্তু মাজার জিয়ারতের নামে কোন প্রকার নাশকতা-সহিংসতা সৃষ্টির পরিকল্পনা যদি থাকে, তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতিই নির্ধারণ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে। অন্যদিকে কামাল হোসেন, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না ও মইনুল হোসেনকে রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আপনারা আগে নিজেদের চরিত্র ঠিক করে তারপর অন্যদের সমালোচনা করুন। আ স ম রব বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র জাসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু তাদের সভাপতি মেজর জলিল মারা যাওয়ার আগে বলে গেছেন তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেন না। অর্থাৎ তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলে জনগণের সঙ্গে যা করেছে সেটা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট শেখ রাসেলের ৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ এ মন্তব্য করেন। হাছান মাহমুদ বলেন, ড. কামাল হোসেন গণতন্ত্রের চর্চার কথা বলেন কিন্তু তার নিজের দল গণফোরামের ১৮ বছর ধরে কোন সম্মেলনই নাই। উনি ১৮ বছর কোন সম্মেলন ছাড়াই সভাপতি। মাহমুদুর রহমান মান্না বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র থেকে আওয়ামী লীগে এসে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েও দলে স্থির হতে পারেন নাই। তারপর ১/১১ কুশীলবদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন। অর্থাৎ তারা নিজেদের রাজনীতিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেউই স্থির থাকতে পারেন নাই। সুতরাং এরা রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ড. কামাল হোসেন কথায় কথায় বলেন তিনি নাকি বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন অথচ তিনি আজকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, শেখ রাসেলের হত্যাকারী, সুকান্ত বাবুর হত্যাকারী এবং ৭৫-এ নারী ও শিশু হত্যাকারীদের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এমনকি তিনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের কথা বলেন যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত বেগম জিয়ার মুক্তি চান। তিনি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন অথচ জঙ্গীদের পাশে বসে তিনি সাত দফার দাবি দিয়ে বললেন জঙ্গীবাদ দমন করতে হবে। এটি দেশের জনগণের সঙ্গে মশকরা ও ভাঁওতাবাজি করা ছাড়া অন্য কোন কিছু নয়। আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সারাহ বেগম কবরির সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ।
×