ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনমুখী বগুড়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে রাজনীতির খবর

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২১ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচনমুখী বগুড়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে রাজনীতির খবর

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার মানুষ নির্বাচনমুখী। মাঠ পর্যায়ে বইছে ‘ভোটের জোয়ার’। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের খবরের স্র্রোতধারা। সংবাদপত্র ও টিভি সংবাদের রাজনীতির খবরগুলোই গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। শুধু খবর পড়া আর শোনা নয় এ নিয়ে হাটে মাঠে ঘাটে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণের মোড়কে তর্কবিতর্ক। যা শুনলে মনে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর স্র্র্রোত একবার উজানের দিকে একবার ভাটির দিকে। কে কখন কোন দলকে যে এগিয়ে নিচ্ছে তা বুঝে ওঠা বেশ কঠিন। তবে এ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, ভোটাধিকার প্রয়োগে সাধারণের উৎসাহ বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো ; দশম সাধারণ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে মাত্র একটি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ চারটি আসন জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ও একটি আসন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে বগুড়া-১ ও বগুড়া-৫ আসন পায় আওয়ামী লীগ। দশম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্তদের আসন ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এ নিয়ে ওই সময় চাপা ক্ষোভ ছিল দলের মধ্যে। একাদশ সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে মাঠ ছাড়বে না তা একেবারে স্পষ্ট। প্রতিটি আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। লোকমুখে বলাবলি, আওয়ামী লীগের এত প্রার্থী। যা প্রমাণ করে গত ক’বছরে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ যথেষ্ট সংগঠিত হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীগণ সকাল থেকে অনেক রাত অবধি নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে লিফলেট বিলি করছেন। এই প্রচারপত্রে প্রার্থীর ছবি সংবলিত কথা আছে। নির্বাচনে যে তিনি প্রার্থী হতে চাইছেন তা বোঝা যায় মাঠ পর্যায়ে তার জনসংযোগে ও সমাবেশে। বগুড়ার সাতটি আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ৩৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে আছেন। সাতটি আসনে একজন করেই মনোনয়ন পাবেন। বাকি ৩১ জনকে ঝরে পড়তে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তার একটিই পুরস্কার (!) দল থেকে বহিষ্কার। এমন হুঁশিয়ারিতে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠ পর্যায়ে গিয়ে জনসংযোগের গতি বাড়িয়েছেন। তবে একটি আসনে এই গতি বাড়িয়ে কোন লাভ হচ্ছে না। সেটি হলো বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসন। এই আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) প্রতিটি এলাকায় উন্নয়ন দৃশ্যমান। সাধারণের কথা : এবারের নির্বাচনে ভোটাররা উন্নয়ন দেখে ভোট দেবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরের উন্নয়নের চিত্র উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এক দশকের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন। লোকজন বলাবলি করে, এর আগের কোন সরকার এত উন্নয়ন করেনি। যা বিশে^র কাছে বাংলাদেশকে বড় সম্মান দিয়েছে। এক সূত্রের কথা : আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাগণ কে কোথায় কি কাজ করছেন তা দলীয় সভানেত্রীর নখদর্পনে আছে। এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভাল কাজের নথিপত্র (বা আমলনামা) মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করবে। এদিকে যে বগুড়াকে এক সময় বলা হতো বিএনপির ঘাঁটি আজ আর তা নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে পাল্টা কথাও আছে। বিএনপির ক’জন সমর্থক বললেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বোঝা যাবে চিত্রটি কেমন আছে। এই সমর্থকরা মনে করে, বিএনপি দশম নির্বাচন বর্জন করায় কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে। তারা যে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এই কথাতেই তা বোঝা যায়। বগুড়ার প্রবীণ সুধীজন মনে করেন, পঁচাত্তরের আগে বগুড়ার রাজনৈতিক অবস্থান এ রকম ছিল না। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান সেনা প্রধান থেকে ক্ষমতায় এসে বিএনপি গঠন করার পর বগুড়ায় বিএনপির রাজনীতি শুরু। বগুড়ায় বিএনপির রাজনীতির বড় কারণ জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়ার গাবতলীর গ্রামে। তাই বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি এমন কথা বলা হয়। মনোপলি এই ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটতে শুরু করেছে। যা বোঝা যায় বিএনপির কর্মসূচীগুলো (প্রতিবাদ মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি) দেখে। ঢাকা থেকে কোন কর্মসূচীর ডাক দিলে বিএনপি অফিসের সামনে দলীয় নেতা কর্মীরা সমবেত হয়। পুলিশ বেরিক্যাড দেয়। কাঁটাতারের ওপারে নেতাকর্মীরা স্লোগান দেয়। তারপর অফিসের সামনে সমাবেশ করে। টিভি ক্যামেরা ও ফটো সাংবাদিকদের ছবি তোলা শেষ বিএনপির কর্মসূচীও শেষ। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা এ নিয়ে দলের মধ্যে কোন কথা নেই। তবে নেতাদের বেশিরভাগই নির্বাচনের পক্ষে। যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা নীরবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছেন। কখনও সরাসরি গিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করছেন। লোকজন নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি জানতে চাইছে। উত্তর পাচ্ছে এ রকম- দেখা যাক পরিস্থিতি কি দাঁড়ায়। এই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই জোরেসোরে মাঠে নামবেন তাও তাদের আচরণে কথা বার্তায় ফুটে উঠছে। এই বিষয়ে একজন নেতা পত্রিকায় নাম না ছাপানোর অনুরোধ জানিয়ে বললেন, ‘বিএনপির ঘাঁটি বগুড়ায় যদি বিএনপি নির্বাচন না করে তাহলে দলটি টিকে থাকবে কী করে ! বগুড়ার মানুষ তো নির্বাচনে ভোট দিতে চায়।’ তার কথাতেই বুঝে নেয়া যায় একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, এমন অনেক সমর্থক আছেন যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এদিকে বগুড়ায় জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অজানা অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত নির্বাচনে জাপার কোন প্রার্থীকেই ভোট করতে হয়নি। বিষয়টি ছিল এমনই ‘ওয়ান ফাইন মর্নিং’ কোন এক সুন্দর সকালে তারা ঘুম থেকে জেগে দেখলেন এমপি হয়ে গেছেন। যার মধ্যে জেলা জাপার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আছেন। তাদের আসন যথাক্রমে বগুড়া-২ ও বগুড়া-৬। বগুড়া-৩ ও বগুড়া-৭ আসনের জাপা এমপিগণও জেলা পর্যায়ের মধ্যম সারির নেতা। দশম নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছিল শুধু বগুড়া-৪ আসনে। আওয়ামী লীগ এই আসন জাসদকে ছেড়ে দেয়। হুট করে আরেকজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করলে ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে জাসদের জেলা সভাপতি বিজয়ী হন। একাদশ নির্বাচনে জাপার অবস্থান কি হবে এই বিষয়ে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক, বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ নূরুল ইসলাম ওমরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বললেন, জাপা একক ও জোটবদ্ধ দুইভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। জোটবদ্ধ মনোনয়ন পেলে তিনি ফের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। জাপা এককভাবে নির্বাচন করলেও দেশের ৩শ’ আসনেই তাদের প্রার্থী প্রস্তুত আছে। একাদশ নির্বাচনে জাপা কৌশলী হবে। হটকারী কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। জাপা অবশাই চায় দেশে নির্বাচন হোক। এদিকে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জে। তিনি একসময় এই আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হালে তাকে নিয়ে এলাকায় কৌতুহল শুরু হয়েছে। তিনি কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন ! জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে তো বিএনপিও আছে। তাহলে বিএনপির অবস্থানটি কী। এ নিয়ে সাধারণের মধ্যে ধোঁয়াশা আছে। তারা ডাঃ বি চৌধুরী ও তার ছেলে মাহি বি চৌধুরীর কর্মকা- নিয়েও কৌতুহলী। ইউটিউবে মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে মাহি বি চৌধুরীর ভাইরাল হওয়া কথোপকথনটিও আলোচনায় আসছে। তবে এই ঐক্য যে শেষ পর্যন্ত কোন দিকে ছিটকে পড়ে সেই কৌতুহল লক্ষ্য করা যায়।
×