ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজেন্দ্র কলেজের শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ অক্টোবর ২০১৮

বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজেন্দ্র কলেজের শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২০ অক্টোবর ॥ ‘প্রিয় রাজেন্দ্র কলেজ এলো যে পেরিয়ে শতেকবর্ষ/ মনে নেই কারও বিষাদ কালিমা কেবলই মধুর হর্ষ’ গানটি যখন পরিবেশিত হচ্ছিল তখন সমবেত রাজেন্দ্র কলেজের প্র্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত হন। সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা তখন ফেলে আসা অতীত দিনের স্মৃতিতে ফিরে যান। শনিবার ছিল ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে এই গানটি পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। এ গানটি রচনা করেছেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তপন বাগচী ও সুর দিয়েছেন বাদল দাস। সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের শতবর্ষ পালন উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এ অঞ্চলের সকল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ। এই কলেজের শতবর্ষ উৎসব পালন এ অঞ্চলের মানুষদের একটি বড় অর্জন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজের শহর শাখার ক্যাম্পাসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজেন্দ্র কলেজকে সমহিমায় রেখে ফরিদপুরে একটি সরকারী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য আন্দোলন করা হবে। তিনি বলেন, আজ থেকে এ আন্দোলন আমি শুরু করে দিলাম। আমার এ আন্দোলনে সহযোগী হবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, রাজেন্দ্র কলেজকে উচ্চতার সর্বোচ্চ শিখরে ওঠানোর জন্য যা যা করণীয় করা হবে। গত দশ বছরে শিক্ষাখাতে অনেক বড় উন্নয়ন ঘটেছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অর্জনের মাধ্যমে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আজকের শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা বিনিয়োগ করতে হবে। আর সে লক্ষ্যে নিজেকে একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়তে হবে। খন্দকার মোশাররফ বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ সময় প্রধান অতিথি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অনেক সীমবদ্ধতার মাঝে শিক্ষাজীবন পার করতে হয়েছে আমাদের। তোমরা এখন হাত বাড়ালেই অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের জন্য তোমরা তোমাদের মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা নিয়োগ করবে বলে আমার বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, পড়াশুনার মাধ্যমে ভাল ফল করাটা জীবনের স্বার্থকতা নয়। আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য হতে হবে জ্ঞানার্জন। ‘মানুষ তৈরির কারখানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’-মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এর জন্যই একাডেমিক শিক্ষা পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ক্রীড়াসহ অন্য বিষয়েও চর্চ্চা করতে হবে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়তে শিক্ষা ও সংস্কৃতির কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কি আসলেই আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যদি চাই তাহলে তাদের মানুষের মতো মনুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পুথিগত শিক্ষার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা যাবে না। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। আগে উত্তর বঙ্গকে বলা হতো মঙ্গা কবলিত এলাকা। এখন ‘মঙ্গা’ শব্দটি শুধুমাত্র অবিধানেই খুঁজে পাওয়া যায়। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতায় এজন্য দেশের উন্নতি হচ্ছে। আমাদের কামনা করতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব যেন অব্যাহত থাকে। এ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অবসরপ্রাপ্ত সচিব বীর প্রতীক মোঃ হেমায়েতউদ্দিন তালুকদার বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু এ দেশের সব স্বপ্ন আমরা পূরণ করে যেতে পারিনি। এজন্য আমরা আমাদের হাতের পতাকা তুলে দিচ্ছি নতুন প্রজন্মের হাতে, তারা আমাদের বাকি কাজ সম্পন্ন করে দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, মানুষকে যে ভালবাসতে জানে না সে যতই কৃতী শিক্ষার্থী হোন না কেন সমাজের কোন উপকার করতে পারেন না। মেধাবী হতে হলে মানুষকে ভালবাসতে হবে। ভালবাসা না থাকলে মানুষের জন্য দেশের জন্য কিছুই করা যায় না। সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোঃ জাকির হোসেন খান, ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিঞা লুৎফার রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা প্রমুখ। এছাড়া মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জামাতা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর ছেলে খন্দকার মাশরুর হোসেন ওরফে মিতু এবং মেয়ে শারিতা মিল্লাত ঋতু । এর আগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও কলেজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে শতবর্ষ স্মারকস্তম্ভ স্থাপন, বৃক্ষরোপণ বেলুন ও পায়রা উড়ান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও সংস্কৃতিমন্ত্রী। একটি বৃক্ষও রোপণ করেন দুই মন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আলোকের এই ঝর্ণা ধারায়’ গানটি পরিবেশন করা হয়। এরপর শতবর্ষের থিম সঙ্গীত, ‘প্রিয় রাজেন্দ্র কলেজ এলো যে পেরিয়ে শতেকবর্ষ/ মনে নেই কারও বিষাদ কালিমা কেবলই মধুর হর্ষ’ গানটি পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। এ গানটি রচনা করেছেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তপন বাগচী ও সুর দিয়েছেন বাদল দাস। এরপর বিভিন্ন গানের সুরে কলিওগ্রাফি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন কলেজের অধ্যক্ষ এবং সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। এর আগে সকাল ৯টার দিকে শতবর্ষ উপলক্ষে শহরে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে ব্র্রহ্মসমাজ সড়ক, মুজিব সড়ক, জনতা ব্যাংকের মোড়, থানারোড, মহাকালী পাঠশালার মোড় পাড় হয়ে, সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের সামনে দিয়ে অনাথের মোড় হয়ে আবার কলেজ চত্বরে ফিরে যায়। মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিকেল ৩টায় উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পী অদিতি মহসিন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পরে নগর বাউল হিসেবে খ্যাত জেমস এর কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মোনালী ঠাকুরের সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক এই পর্ব উপস্থাপন করেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পূর্ণিমা। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় র‌্যাফেল ড্র। র‌্যাফেল ড্রতে এক শ’ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
×