ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রূপসা তীরে লাখো মানুষের প্রাণের মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ অক্টোবর ২০১৮

রূপসা তীরে লাখো মানুষের প্রাণের মেলা

অমল সাহা ॥ ছিপখান তিন দাঁড়/ তিনজন মাল্লা/ চৌপর দিনভর/ দেয় দূর পাল্লা .. নৌকাবাইচের কথা এলেই মনে পড়ে যায় শৈশবে পড়া এই ছড়াটি। লাখো মানুষের সমাগমে খুলনার রূপসা নদীতে অনুষ্ঠিত হলো নৌকা বাইচ। গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় খুলনা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এবং নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে শনিবার রূপসা নদীতে ঐতিহ্যবাহী ত্রয়োদশ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এবার নিয়ে টানা ৫ বার গ্রামীণফোন এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা প্রদান করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ২৪টি বাইচ দলের অংশগ্রহণে এই প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়। নৌকার মাপের ওপর ভিত্তি করে বাইচগুলোকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রতিটি দল থেকে বিজয়ী ১ম, ২য় ও ৩য় দল জিতে নেয় নগদ পুরস্কার। লাখো মানুষ রূপসা নদীর দুই ধারে উপস্থিত থেকে এবং ট্রলারে অবস্থান নিয়ে এই নৌকাবাইচ উপভোগ করে। রূপসার দুই পাড়ে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে যেন লাখো মানুষের প্রাণের মেলা বসেছিল। এবারের প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, কালিয়া, নড়াইল থেকে ৯টি বড় এবং ৭টি ছোট বাইচ দল অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়াও গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুর এলাকার ৮টি বাচারি নৌকা নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। বড় দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এক লাখ টাকা জিতে নেয় খুলনার কয়রার সুন্দরবন টাইগার। দ্বিতীয় হয়ে ৬০ হাজার টাকা পুরস্কার পায় খুলনার তেরখাদার ভাই ভাই জলপরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা পান ওই একই এলাকার আল্লাহ ভরসা। ছোট গ্রুপে প্রথম হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পান খুলনার পাইকগাছার ভাই ভাই দুরন্ত। দ্বিতীয় বিজয়ী দল কয়রার সোনারতরী পায় ৩০ হাজার টাকা। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পাইকগাছা, খুলনার দুরন্ত পায় ২০ হাজার টাকা। বিশেষ বাছারি দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে ৫০ হাজার টাকা জিতে নেয় খুলনার সোনাডাঙ্গার ফলিয়া এন্টারপ্রাইজ। দ্বিতীয় হিসেবে ৩০ হাজার টাকা পায় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সোনারতরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা পায় ওই একই এলাকার মা-বাবার আশীর্বাদ। সকালে এই নৌকাবাইচকে ঘিরে নগরীতে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক র‌্যালি উদ্বোধন করেন। র‌্যালিতে বিভিন্ন স্তরের অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করে। দুপুর ২টায় নগরীর রূপসা ১ নং কাস্টম ঘাটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন। গ্রামীণফোনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সার্কেল বিজনেস হেড মোঃ আওলাদ হোসেন, হেড অব ব্র্যান্ড এ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং নাফিস আনোয়ার চৌধুরী, খুলনা সার্কেল মার্কেটিং হেড আবুল হাসনাত, খুলনা রিজিওনাল হেড আহসান হাবিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম, প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামানসহ অন্যরা। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সর্দার রকিবুল ইসলাম, খুলনার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ। অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের মোঃ আওলাদ হোসেন বলেন, ‘গ্রামীণফোন সবসময়ই বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষক। গ্রামীণফোন মনে করে যে একটি দেশের উন্নয়নে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিরাট ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে গ্রামীণফোন তাই সব সময় এ ধরনের অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে’। নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান উপদেষ্টা বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে-এই স্লোগান নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আসুন নদীকে ভালবাসি, নদীকে ভাল রাখি।’। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক বিল্লাল হোসেন খান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ রেজাউল করিম, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহসভাপতি নিজাম উর রহমান লালু, খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য মোঃ মোতালেব হোসেন মিয়া। সন্ধ্যায় রূপসা ফেরি ঘাট চত্বরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুরো আয়োজনটি খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, নৌ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বন বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুত বিভাগ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, রূপসা সেতু কর্তৃপক্ষ ও ট্রলার মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা হয়।
×