স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে যুগোপযোগী আইন উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার বলেছেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দিলে বা আইনের অপপ্রয়োগ করা হলে প্রয়োজনে বিধি প্রণয়ন করে সমস্যা সমাধান করা হবে। বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই আইন করা হয়েছে। আইন নিয়ে গর্ব করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৫৭ ধারার কোন অস্তিত্ব নেই। এই ধারায় আর কোন মামলা গ্রহণ করা হবে না। আজকে যারা ডিজিটাল আইন নিয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের জানতে হবে অফিসিয়াল সিক্রেসি আইনে কতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫৭ ধারার যখন অপপ্রয়োগ শুরু হয় তখন পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই আইনে কোন মামলা করা যাবে না। এরপর থেকেই ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ রোধ করা হয়। নতুন ডিজিটাল আইনের ক্ষেত্রে যদি কোন অপপ্রয়োগের আশঙ্কা থাকে তাহলে সাংবাদিকসহ কারও বিরুদ্ধে মামলা করার আগে একটি পদ্ধতি বের করেই অপপ্রয়োগ রোধ করা হবে।
এ সময় যারা এই আইন নিয়ে সমালোচনা করছেন সেই সাংবাদিকদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা চায় সবার জন্য এই আইন থাকলেও তাদের জন্য যেন না থাকে। কিন্তু দেশের সব মানুষ আইনের চোখে সমান। সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী কেউ আইনের ক্ষেত্রে আলাদা নয়। এই আইনে কেউ অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন।
তিনি ডিজিটাল আইন প্রয়োগের যৌত্তিকতা উল্লেখ করে বলেন, দেশে বাইরে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ৪ হাজারবারের বেশি হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার চায় না তাদের এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কেউ আঘাত করুক। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী বাইরের কারো জন্য উন্মুক্ত করার ইচ্ছে সরকারের নেই। দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই ধরনের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফেসবুকে আমার কাছে প্রত্যেকদিন প্রায় ৪০টির বেশি বার্তা আসে যেখানে ফেসবুকে নারীদের নানা হয়রানির তথ্য উল্লেখ থাকে। এ থেকে মুক্তির জন্য তারা আমাকে দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে। এছাড়া ফেসবুকে কাউকে যদি হয়রানি করা হয় তাহলে সামাজিকভাবে তাকে কতটা অপমানিত বোধ করতে হয়। এটা যাতে আর না ঘটে সেজন্য এই আইনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। তিনি এই আইনকে একটি লিগ্যাল ফ্রেম উল্লেখ করে বলেন, আইনে কোন ত্রুটি দেখা দিলে বিধি প্রণয়ন করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
এখন এই আইনের ফলে কেউ ফেসবুকে গুজব রটাতে পারবে না। গুজব রটালে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। জিগাতলায় আওয়ামী লীগের অফিসে যারা গুজব রটিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ্যাকশন নেয়া সম্ভব হয়েছে। এখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হবে। এখন আমাদের দেশে ফেসবুকের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা সম্মত হয়েছে। এতদিন তারা আমাদের কথা শুনত না। এখন আমাদের অফিসের সামনে এসে বসে থাকে। এখন তারা বলছে বাংলাদেশের আইন মেনে চলতে তারা রাজি আছেন। ডিজিটাল আইনও তাদের মানতে হবে। তিনি বলেন, আগামী মাস থেকেই আমরা ফেসবুক, ইউটিউব নিয়ন্ত্রণ করতে পারব আমাদের মতো করে। তখন কেউ আর গুজব রটনা করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা প্রচার করতে পারবে না। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তালিকা পেলে তারা ফেকআইডি ভেরিফাই করে প্রয়োজনে বন্ধ করে দেবে। যেসব ফেক আইডি থেকে গুজব রটানো হবে এখন থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে যারা প্রচার চালাবে তাদের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, নিজের আর অসহায় ভাবার কোন কারণ নেই। সমন্বিত উপায়ে কাজ করলে ভয়ের কিছু নেই।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপহাস করার কোন সুযোগ নেই। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যেদিন মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সেদিন থেকে দাবি উঠেছিল ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্যের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে। এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাদের মোকাবেলায় এই আইন তৈরির দাবি তখন থেকেই উঠেছিল। এখন এই আইনটি তৈরি হয়েছে। এটি যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা না হয়। আইন হয়েছে। এখন আইনের অপপ্রয়োগ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন শহীদ সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, মোহাম্মদ আরাফাত, কবীর চৌধুরী তন্ময়, লেখক মারুফ রসুল প্রমুখ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: