ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও একটি মামলা

ডাঃ জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ, সাভারে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২১ অক্টোবর ২০১৮

ডাঃ জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ, সাভারে বিক্ষোভ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ শনিবার বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাভারের আশুলিয়া থানায় আরও একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ডাঃ জাফরুল্লাহর দখলে থাকা প্রায় চার একরের বেশি জমি উদ্ধার করেছে পুলিশ। চাঁদাবাজির মামলা দায়েরের পাশাপাশি শনিবার বিকেলে ভ‚মি দখলের অভিযোগে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। এই প্রথমবারের মতো ভ‚মিদস্যুতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এতদিন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে তার ভয়ে সবাই চুপ ছিল। অন্তত দুই থেকে তিনশ মানুষের কাছ থেকে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী নানা কৌশলে জমি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা তাদের জমি ফেরত পেতে সরকারের সহায়তাও কামনা করেছে। শুক্রবার রাতে ডেন্ডাবরের বাসিন্দা হাসান ইমাম বাদী হয়ে চাঁদাবাজি, ভাংচুর, জমি দখল ও সাইনবোর্ড চুরির অভিযোগে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ তিন জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অপর দুই আসামি হচ্ছেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচালক সাইফুল ইসলাম শিশির। এদিকে মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে জোরপূর্বক দখল করে নেয়া ৪ একর ২৫ শতাংশ জায়গা শনিবার দুপুরে উদ্ধার করে পুলিশ। মোহাম্মদ আলী জানান, ২০০৩ সালে তিনি বাইশমাইল এলাকার গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের সামনের জমিটি কিনেছিলেন। পরে সেটি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রভাব খাটিয়ে তার কাছ থেকে জোর করে দখলে নিয়েছিলেন। ঘটনায় তিনি গত ১৫ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত তার পক্ষে রায় দিলে জমিটি স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করে দেয়। এ ঘটনার পর শনিবার বিকেলেই নবীনগর বিশমাইল গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের এক পাশে ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেয় শত শত মানুষ। তাদের অনেকেরই হাতে ছিল জমির কাগজপত্র। ব্যানারে লেখা ছিল, তারা ভ‚মিদস্যু ডাঃ জাফরুল্লাহর হাত থেকে বাঁচতে চান। এজন্য তারা সরকারের সহায়তা কামনা করেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নাসির উদ্দিন বলছিলেন, জমি দখলের ক্ষেত্রে ডাঃ জাফরুল্লাহ কতটা ভয়ঙ্কর, তা কল্পনারও বাইরে। সে কোন একটি জমি দেখার পর তিনি আশপাশের কয়েক শতাংশ কিনে নেন। এরপর ভরাট করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন যে, বাধ্য হয়ে জমির মালিক কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গণস্বাস্থ্যের কেন্দ্রের পাশের তার মায়ের অন্তত ৫০ শতাংশ জমি তিনি সস্তায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ বিক্রি না করলে, তাও এক সময় কৌশলে দখল করে নিতেন জাফরুল্লাহ। তার জমি দখলের সময় যারা বাধা দেয়, তাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা ঠুকে দিয়ে হয়রানি করেন। লোকদের মধ্যে মারামারি করিয়ে লাশ ফেলে দেন। এরপর যারা জমি দখলে বাধা দেয়, তাদের সেই হত্যা মামলায় আসামি করে এলাকা ছাড়া করে। এরপর দখল করে নেয় জমি। প্রায় ৫০ বছর বয়সী নাসির উদ্দিন বলছিলেন, যতদূর জানি জাফরুল্লাহর বাড়ি চট্টগ্রামে। বাবা-মার কাছ থেকে শুনেছি, ডাঃ কাশেম ও ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বাধীনতার পরপরই এই এলাকায় আসেন। তারা বিনামূল্যে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে ছোট টেবিল আর একটি চেয়ার নিয়ে রাস্তার পাশের একটি খোলা জায়গায় বসতেন। সেখানে প্রজেক্টরে চিকিৎসার নানা কিছু দেখাতেন। আর মানুষের কাছে প্রচার করতেন, এলাকার লোকজন সহায়তা করলে, তারা শত শত এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে পারবেন। এমন কথায় স্থানীয়রা প্রথম তাদের একটি ছোট্ট ঘর করে দেন। সেই ঘর থেকেই আজ জাফরুল্লাহ অন্তত ৫শ’ বিঘার বেশি জমি নিজের করে নিয়েছেন। এরমধ্যে অধিকাংশ জমিই দখল করা। তবে অধিকাংশ জমিই সে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দখল করে নেয়া। রকি নামের একজন বলছিলেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ শত শত মানুষের জমি দখল করেছেন। তার মধ্যে তাদের বংশধরদেরই অন্তত ৪৬ বিঘা জমি রয়েছে। এসব জমি দখল করেছেন নানা কৌশলে। ভ‚মিদস্যুরা যেভাবে জমি দখল করে, ঠিক একই কায়দায় ডাঃ জাফরুল্লাহও জমি দখল করেছেন। প্রথমে কিছু জমির বায়না করেন। এরপর আস্তে আস্তে তা দখল করে নেন। বিক্ষোভকারীদের মতে, জাফরুল্লাহ খুবই প্রভাবশালী। যে ব্যক্তির দশ শতাংশ জমি দখল করেছেন, সে যদি জাফরুল্লাহর সঙ্গে লড়তে যায়, তাকে মামলা ছাড়াও নানাভাবে হয়রানি করে বিপুল অঙ্কের টাকার ক্ষতি করায়। এই ভয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল জমির মালিকরা ডাঃ জাফরুল্লাহকে ঘায়েল করতে পারে না। সামান্য ১৬ শতাংশ জমি উদ্ধার করতে গিয়ে জাফরুল্লাহর সঙ্গে মামলা মোকদ্দমা করে শেষ পর্যন্ত এলাকা ছাড়তে হয়েছেন কয়েক স্থানীয় লোকজন। এজন্য ভয়ে অনেকেই জাফরুল্লাহর সঙ্গে ঝামেলা পথ জড়াতে চায় না। জাফরুল্লাহর নানা অপকর্মের তদন্ত শুরুর পর ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে এসেছেন। এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ডাঃ জাফরুল্লাহ সময়ের পালাবদলে নিজেকে বদলে ফেলেন। ইতোমধ্যেই তিনি খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং সা¤প্রতিক জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পলিসিমেকার’ ও বিএনপির প্রভাবশালী ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন।
×