ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেরেবাংলায় ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২১ অক্টোবর ২০১৮

শেরেবাংলায় ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ওয়ানডে দিয়ে আজ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হবে। আজ ‘হোম অব ক্রিকেটে’ প্রথম ওয়ানডে হবে। এরপর চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় ও শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। দুটি ম্যাচই দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে। এ সিরিজে জিততে চায় দুই দলই। কোন্ দল সিরিজ জিতবে? সেই প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন ওঠার পেছনে কারণও আছে। জিম্বাবুইয়ে দলটি এবার শক্তিশালী। যদিও দলটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলে বাংলাদেশে এসেছে। একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো পরিস্থিতিতেও ছিল না জিম্বাবুইয়ে। সেই দলটি বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় তুলে নেবে তা কী সম্ভব? তাছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচেও তো বিসিবি একাদশের কাছে নাজেহাল হয়েছে জিম্বাবুইয়ে। তবে জিম্বাবুইয়ের জয়ের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশ দলে নেই তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। দেশের দুই সেরা ক্রিকেটার না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলের শক্তি কমেছে। যদি কোনভাবে সেই কমে যাওয়া শক্তির অভাব পূরণ না করা যায় তাহলে হারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশ দল এ দুইজনকে ছাড়াও জেতার ক্ষমতা রাখে। এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারানো এবং ফাইনালে ভারতকে হারানোর কাছাকাছি যাওয়া ম্যাচ দুটি সেই প্রমাণ বহন করে। কিন্তু আটমাস পর দেশের মাটিতে খেলতে নামা বাংলাদেশ দলকে যদি কোনভাবে বিপাকে ফেলে দেয় জিম্বাবুইয়ে? তাহলে বাংলাদেশের জন্য জয় তুলে নেয়া কষ্টকরই হতে পারে। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। বলেছেন, ‘অনেকদিন পর হোমে (আটমাস পর) খেলতে নামছি। অবশ্যই সবাই আত্মবিশ্বাসী। সাকিব তামিম থাকবে না এটা আগে থেকেই সবাই জানে। সেভাবেই সবাই প্রস্তুতি নিয়েছে। সেরা পারফর্মেন্স দেয়ার জন্য যা যা দরকার করেছেন। কাল (আজ) খেলা। সবাই যেটা (জয়) চাচ্ছে সেটা যেন করতে পারে।’ জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাও আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে হারানোর সামর্থ্য অবশ্যই আছে। সিরিজটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। আমাদের খেলোয়াড় আছে ভাল করার মতো। আমাদের কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার উঠে এসেছে। একই সঙ্গে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাও আছে। হ্যাঁ, আমি মনে করি এখানে ম্যাচ জেতার মতো দল আমাদের আছে।’ তামিম-সাকিব না থাকাতেই যেন জিম্বাবুইয়ে আশা দেখছে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে যে ক্রিকেটাররা তামিম ও সাকিব না থাকায় সুযোগ পেয়েছেন তারাও নিজেদের মেলে ধরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ফজলে মাহমুদ রাব্বি যেমন প্রথমবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। সাকিবের বদলি হিসেবে রাব্বিকে নেয়া হয়েছে। তিনি খেলার সুযোগ পেলেই তা কাজেও লাগাতে চান। বলেছেন, ‘সাকিব ভাইয়ের জায়গা তো আর কারও পক্ষে নেয়া সম্ভব না। আমি মূলত ব্যাটিং প্রধান অলরাউন্ডার। ব্যাটিংটা করতে ভালবাসি। পাশাপাশি আমি দলের প্রয়োজনে বোলিং করতে পারি। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই এই রোলটা পালন করার চেষ্টা করব। তবে সাকিব ভাইয়ের জায়গা নেয়া না, আমি যেটা পারি সেটাই করার চেষ্টা করব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমার একদমই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। আমি জানি না জিম্বাবুইয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোন দলের সঙ্গে খেলছি। আমি আমার মতোই খেলব, যদি সুযোগ পাই। আমি কার সঙ্গে খেলছি এটা বড় না। কি খেলছি এটাই বড়।’ সাকিব না থাকায় মেহেদী হাসান মিরাজকে স্পিন অলরাউন্ডারের ভূমিকা নিতে হবে। তিনিই মূল স্পিন অলরাউন্ডার। সেই ভূমিকায় নিজেকে মেলে ধরতে চান মিরাজ, ‘এটা আমার কাছে বাড়তি দায়িত্বের মতো। যেহেতু সাকিব ভাই নেই, দায়িত্ব থাকবে বোলিংটা আরেকটু বেশি ভাল করার। আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। কঠিন অবস্থার চ্যালেঞ্জ আমি উপভোগ করি।’ তামিম না থাকায় এবং এশিয়া কাপে ওপেনাররা ব্যর্থ হতে থাকায় ফাইনালে লিটন কুমার দাসের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজকে নামিয়ে দেয়া হয়। তাতে সাফল্যও মিলে। এবারও কী তাই হবে? তাই যদি হয় তাহলে মিরাজ সবসময়ের মতোই প্রস্তুত থাকবেন। তবে তামিমের অনুপস্থিতিতে আসল কাজটি তো লিটনকেই করতে হবে। ঠিক যেমনটি এশিয়া কাপের ফাইনালে ১২১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে করেছিলেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে কী সম্ভব তা করা? তিনি কতটা প্রস্তুত? লিটন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান, ‘হ্যাঁ, আমার মূল লক্ষ্য এটাই (ধারাবাহিকতা)। আমি চেষ্টা করছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাওয়ার। আমিও জানি যে আমাকে রান করতে হবে। দলের সদস্যরাও চাইবে, যেহেতু আমি ভাল খেলেছি, সেটা যেন ধরে রাখি।’ তামিম না থাকায় লিটনের দিকে এবং সাকিব না থাকায় মিরাজ ও রাব্বির দিকে নজরটি বেশি থাকবে। এ তিন ক্রিকেটার যদি নিজেদের মেলে ধরতে পারেন এর সঙ্গে যদি মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মিঠুন, ইমরুলরাও ব্যাটিংয়ে নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে পারেন তাহলে স্কোরবোর্ড মজবুত হবেই। বল হাতে মাশরাফি, মুস্তাফিজ, নাজমুল, মিরাজ, রাব্বিরা যদি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে পারেন তাহলে জয় বের করে নেয়া সম্ভব। খুব ভালভাবেই জেতা সম্ভব। যদিও জিম্বাবুইয়ে দলের কাইল জারভিস বাংলাদেশকে হারানোর আশা দেখছেন। সাকিব-তামিম না থাকাতেই সেই আশা ভাল করে দেখছেন জারভিস। বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব কঠিন সফর ছিল। তবে আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এসেছি। সেই ইতিবাচক মানসিকতার মধ্যে আছে ম্যাচ জেতা। আমার মনে হয় আমাদের ভাল সুযোগ আছে। সাকিব-তামিমের মতো দুইজন বড় মাপের খেলোয়াড় বাংলাদেশে নেই। সুতরাং আমরা ইতিবাচক কিছুর দিকেই তাকিয়ে আছি। কেউ হারার প্রত্যাশা করে না। আমরা অবশ্যই জেতার আশা করছি। জেতার ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই আমরা নামব।’ জিম্বাবুইয়ে কী সত্যিই হারিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশকে? বাংলাদেশ দলের কোচ স্টিভ রোডস তো জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটারদের আহত পশুর মতোই দেখতে চান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ওয়ানডে, দুই টি২০’র সবকটিতে হারা জিম্বাবুইয়ে এখন সেইরকম অবস্থাতেই আছেন। কোচ বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জিম্বাবুইয়ে জয়ের দেখা পায়নি। কোন দলেরই এটা ভাল লাগার কথা নয়। আমি আশাকরি তারা একটি পশুর মতোই সিরিজটিতে খেলবে। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে তারা বাজেভাবে হেরেছে, অতএব এখানে তারা ঘুরে দাঁড়াতে চাইবেই। তাই আমাদের সেরা খেলাটিই খেলতে হবে।’ বাংলাদেশের কোচ হওয়ার পর প্রথমবার বাংলাদেশের মাটিতে কোন হোম সিরিজ হচ্ছে। তাই তিনি রোমাঞ্চিতও। তবে প্রতিপক্ষ নিয়ে বেশি না ভেবে নিজেদের নিয়েই ভাবতে রাজি তিনি, ‘এটা বাংলাদেশের হয়ে আমার জন্য প্রথম হোম সিরিজ। আমি খুবই রোমাঞ্চিত। তবে আমাদের কাজটা সঠিকভাবে করতে হবে। আমরা প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা করছি না। আশা করছি দুর্দান্ত একটা সিরিজ হবে। বাংলাদেশের দর্শকদের মুখে ছেলেরা হাসি ফুটাতে পারবে।’ তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান নেই সিরিজে। বিষয়টি একটু হলেও জিম্বাবুইয়ে শিবিরে স্বস্তি দিচ্ছে। তবে কোচ মনে করছেন বাংলাদেশ দলের জন্যও ইতিবাচকই, ‘এটিকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। অন্যদের জন্য এটি সুযোগ। যারা দলে এসেছে, যদি সুযোগ কাজে লাগাতে পারে সেটা আমাদের স্কোয়াডের গভীরতা বাড়াবে। দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে যদি প্রতিযোগিতা তৈরি হয়, খেলোয়াড়রা সবসময়ই তাদের সেরা পারফর্মের চেষ্টা করবে। এই প্রতিযোগিতাটা স্বাস্থ্যকর। আমরা দলে গভীরতা বাড়াতে চাই।’ সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদের কাছ থেকে নৈপুণ্য আশা করছেন কোচ। তা পূরণ হলে তো জয়ও আসবেই। প্রথম ওয়ানডে দিয়ে যে আজ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে, এই ম্যাচটিতে জিতলে তো সিরিজেও শুভ সূচনাই হয়ে যাবে।
×