ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী-১ আসন

মাঠে ফারুক চৌধুরী, মনোনয়ন যুদ্ধে নতুনরাও

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২১ অক্টোবর ২০১৮

মাঠে ফারুক চৌধুরী, মনোনয়ন যুদ্ধে নতুনরাও

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিএনপির কব্জা থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে রাজশাহীর সবকটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তানোর-গোদাগাড়ী নিয়ে গঠিত রাজশাহী-১ আসনটিও দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখলে রাখে দলটি। আগামী একাদশ নির্বাচনেও সে ধারায় থাকতে চায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এখান থেকে নির্বাচিতরা স্থান পান মন্ত্রিসভায়। দুটি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভা নিয়ে আসনটির বিন্যাস। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। পরের বার বিএনপি ভোট বর্জন করায় সংসদে যেতে তাকে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি। এবারও এ আসন থেকে তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে এরপরও সেখান থেকে দলের আরও সাত নেতা মনোনয়নের দৌড়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করছেন। নেতৃত্ব ডিঙ্গিয়ে কালের পরিক্রমায় ওপরে উঠে আসার চেষ্টা তাদের। ২০০৮ সালের আগে এ আসনে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হক। তিনি ছিলেন বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী। তবে এ আসন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে নাম লিখিয়েছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরীও। ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত এ আসনে এবারো ভোটযুদ্ধ হতে পারে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হকের সঙ্গে বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর। শুরু থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী সক্রিয় থাকলেও মাঠে তেমন দেখা নেই ব্যারিস্টার আমিনুল হকের। তবে একাদশ নির্বাচনে এ আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর পাশাপাশি একই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাতজন নেতাও মাঠে নেমেছেন। এরা হলেনÑ তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদরুজ্জামান, মকবুল হোসেন খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আতাউর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আবদুল ওহাব। মাঠে রয়েছেন তারাও। তবে এদের মধ্যে মাঠের প্রচারে এগিয়ে আছেন মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন যিনি পাবেন তার পক্ষেই কাজ করবেন। তবে তার দাবি এবার নতুনদের মধ্য থেকেই মনোনয়ন দিতে হবে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান। তার ভাগ্নে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বর্তমানে এ আসনের এমপি। এ আসনে উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীর। এখানে একবার জামায়াতের এমপিও ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলে সেক্ষেত্রে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাবে বলেও ধারণা স্থানীয়দের। স্থানীয় বিএনপি নেতারা মনে করেন, বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হকের বিকল্প নেই এখানে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির মজিবুর রহমান একসময় এখানে এমপি ছিলেন। তাই এবারের নির্বাচনে তাকেই জোটের প্রার্থী হিসেবে পেতে তৎপর জামায়াত। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৬ সালের আগ পর্যন্ত আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের। প্রথম জাতীয় সংসদের মতো দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। এখানে একবার জাতীয় পার্টির এমপিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ১৯৯১ সাল থেকে পাল্টে যায় এখানকার রাজনৈতিক দৃশ্যপট। ওই বছরে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ঠাঁই পান খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায়। ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হন। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জঙ্গী মদদদাতার অভিযোগ ছাড়াও আমিনুলের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা হয়। এতে গ্রেফতার এড়াতে তিনি আত্মগোপন করেন। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন তারই বড় ভাই সাবেক পুলিশ প্রধান এনামুল হক। তিনি ফারুক চৌধুরীর কাছে হেরে যান। এবার এখন পর্যন্ত মাঠে না থাকলেও আমিনুল হকের পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত সচিব জহুরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনী ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন। বর্তমানে এ আসনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। টানা ১০ বছর ধরে এমপি তিনি। আগের টার্মে প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। ফলে এলাকায় উন্নয়ন করেছেন। তার আশা এবারও তিনি দলের (আওয়ামী লীগের) মনোনয়ন পাবেন এবং নির্বাচনেও জয়ী হবেন। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম রাব্বানী বলেন, মাঠে রয়েছি। মাঠেই থাকব। ‘তবে সিদ্ধান্ত যাই হোক, হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনে চলব। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আলম মামুন বলেন, এই আসন থেকে বর্তমান এমপি ফারুক চৌধুরী এবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন- এ বিষয় আমরা শতভাগ আশাবাদী। আর তার নেতৃত্বেই একাট্টা হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই আসনটি আবারও জয়ী হবে। সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, এই আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগের পতাকা উর্ধে তুলে ধরেছি। যা এখনও সমুন্নত রয়েছে। এলাকার উন্নয়ন করেছি। ‘আমার দায়িত্ব এখানে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাখা। সেটাই আমি পালন করে যাচ্ছি। এখন নেত্রী (শেখ হাসিনা) মনে করলে মনোনয়ন দেবেন। আওয়ামী লীগ বড় দল তাই অনেকের অনেক রকম প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
×