ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসন

মাঠে ব্যস্ত মোশাররফ ॥ চলছে নতুন মুখের তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২২ অক্টোবর ২০১৮

মাঠে ব্যস্ত মোশাররফ ॥ চলছে  নতুন মুখের তৎপরতা

রাজিব মজুমদার, মীরসরাই ॥ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার এই মীরসরাই। পাহাড় ও সমুদ্রবেষ্টিত বাংলাদেশের বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল সমৃদ্ধ এই মীরসরাই আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বর্তমান সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। ইতোমধ্যে তিনি মীরসরাই ১নং করেরহাট থেকে ১৬ নং সাহেরখালী পর্যন্ত ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় বিভিন্ন পথসভা, উঠান বৈঠকসহ গণসংযোগ করছেন। সম্প্রতি জোরারগঞ্জের তাজপুরে আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন দিদারের বাড়িতে এসে তার সৌজন্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসংযোগ শুরু করেন মন্ত্রী। চট্টগ্রাম-১ মীরসরাই এই আসন থেকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক সদস্য নির্বাচিত হন সেই সময়ের তরুণ বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে জাসদের হারুনুর রশিদকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন মোশাররফ হোসেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির ওবায়দুল হক খন্দকার (প্রকাশ ওবায়েদ বলীর) কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি। ১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় পার্টির এ্যাডভোকেট আবু ছালেককে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পার্টির একতরফা (বিরোধী দল বর্জিত) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এ্যাডভোকেট আবু ছালেক এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির এম এ জিন্নাহ এমপি নির্বাচিত হন। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দল বর্জিত নির্বাচনে বিএনপির মঞ্জুরুল আলম নির্বাচিত হন। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন যুবদলের এম এ কাশেম। একই বছরের (১৯৯৬ সাল) ১২ জুন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। পরবর্তীতে এই আসনটি খালেদা জিয়া ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে বিএনপির এম এ জিন্নাহকে হারিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন মোশাররফ হোসেন । ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেনকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির এম এ জিন্নাহ। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির প্রফেসর কামাল উদ্দিনকে হারিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ । এই আসন থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার নেতৃত্ব থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আসীন হয়েছেন। পাশাপাশি মন্ত্রিত্বেও আছেন। বর্তমানে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী চট্টগ্রামের মতো সাংগঠনিক জেলায় তার প্রভাবও বিদ্যমান। বয়সও হয়েছে। কিন্তু কর্মে তৎপর। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচনে মীরসরাই (চট্টগ্রাম-১) আসনে তার মনোনয়ন যে নিশ্চিত এতে তেমন কারও সন্দেহ নেই। মীরসরাই আসনে আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটি নিজেদের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নাম প্রচার করছে। পাশাপাশি যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে তার মেজ ছেলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মাহবুব রহমান রুহেলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে দলের উপজেলা পর্যায়ে মূল স্রোতের বাইওে থেকে এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিন। তিনিও গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জুনিয়র চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য তরুণ শিল্পোদ্যেক্তা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের নাম দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় আলোচিত হচ্ছে। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, ক্লিফটন গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন চৌধুরী। তবে উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব থাকায় দলের অভ্যন্তরে তাকে নিয়ে আলোচনা কম। তবে দলের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং এবং নেতাকর্মীদের মন পেতে এলাকায় ব্যাপক সক্রিয় রয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমিন। মনোনয়ন চাইবেন মীরসরাই উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান (সাময়িক বহিষ্কৃত) নুরুল আমিন। এছাড়া বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়ন কারা পাবেন, আর কারা পাবেন না সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আগ্রহীদের সকলেই যে যার পথে লবিংয়ে ব্যস্ত। কিন্তু লবিংয়ে নেত্রীকে তার নিজ সিদ্ধান্ত থেকে টলানো যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এবার পুরনোদের সঙ্গে মনোনয়ন লাভের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন নতুন নতুন বহু মুখ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পর্যন্ত যা বলেছেন তা হচ্ছে, কারও মুখের দিকে তাকিয়ে নয়, যোগ্যরাই মনোনয়ন পাবেন। অপরদিকে সঙ্কটের আবর্তে ঘূর্ণায়মান বিএনপি। বিএনপির সাবেক চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কি না আবার করলে কারা মনোনয়ন দেবে এই নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়।
×