ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইএনএফ থেকে প্রত্যাহারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় রাশিয়া ॥ ব্রিটেনের সমর্থন

এক মেরু বিশ্বের স্বপ্ন যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২২ অক্টোবর ২০১৮

এক মেরু বিশ্বের স্বপ্ন যুক্তরাষ্ট্রের

ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের আইএনএফ (ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস) চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ব্রিটেন বলেছে, রাশিয়া অনেক দিন ধরেই চুক্তির সঙ্গে উপহাস করছিল তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে করা ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক কাজ করেছে। অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, ‘এক মেরু বিশ্বের’ যে স্বপ্ন যুক্তরাষ্ট্র দেখে থাকে তারই অংশ হিসেবে চুক্তি থেকে তারা নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এএফপি ও গার্ডিয়ান। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ আইএনএফ চুক্তিটি সই করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, দু’দেশের পরমাণু ভান্ডার কিছুটা কমিয়ে আনা এবং ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা না করতে পরস্পর সম্মত হওয়া। চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষই এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭শ’ মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নির্মূল করেছে। এই চুক্তির জন্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিবাদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। ট্রাম্প শনিবার নেভাডায় এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘আমরা চুক্তির অবসান ঘটিয়ে এর থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, রাশিয়া চুক্তিটি মেনে চলছে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র এটি থেকে বেরিয়ে যাবে বলে ঠিক করেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তাদের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করতে দিতে পারি না, চুক্তি অনুযায়ী আমরা যে অস্ত্র তৈরি করতে পারি না, সেটি তাদের তৈরি করতে দিতে পারি না।’ এর ফলে উভয় দেশের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা নতুন করে শুরু হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করলেও যুক্তরাষ্ট্র্রের অন্যতম প্রধান মিত্র যুক্তরাজ্য সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পুরনো ও ঘনিষ্ঠ মিত্র। চুক্তি থেকে তাদের সরে আসার সিদ্ধান্ত আমরা সর্বাত্মক সমর্থন করি। রাশিয়া যে চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেনি, তাদের কাছে সে বার্তাটি আমরা দিতে চাই।’ তিনি চুক্তিভঙ্গের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেন। গ্যাভিনসন বলেন, মস্কো চুক্তির সঙ্গে উপহাস করেছে। বিমানবাহী ব্রিটিশ রণতরী এইচএমএস এলিজাবেথের নিউইয়র্ক উপকূল পরিভ্রমণ উপলক্ষে গ্যাভিনসন এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করে আসছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৪ সালে চুক্তিভঙ্গের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছিলেন । তবে চুক্তি হতে বেরিয়ে আসলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে ইউরোপ নেতারা তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করার পর তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। ক্রেমলিন অবশ্য ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধেও ওই চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করেছিল। আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘন করে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। উইলিয়ামসন বলেন, ‘চুক্তিটি কার্যকরভাবে বহাল থাকুক সেটি আমরাও চাই। কিন্তু এর জন্য চুক্তিভুক্ত উভয়পক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। বর্তমানে একটি পক্ষ চুক্তিটি অগ্রাহ্য করছে।’ ট্রাম্প অবশ্য রাশিয়া কিভাবে চুক্তিভঙ্গ করছে তার কোন উল্লেখ করেন নি। তবে গত বছর হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, রাশিয়া চ্ুিক্তভঙ্গ করে ক্রুজ মিসাইল তৈরি করছে। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ট্রাম্পের তৃতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন অনেক দিন ধরেই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলে আসছিলেন। বোল্টন বরাবর এই চুক্তির বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করেন, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা সীমিত করে দিয়েছে।
×