ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক দলের মদদে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা জঙ্গীদের

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 রাজনৈতিক দলের মদদে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা জঙ্গীদের

শংকর কুমার দে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল জঙ্গীদের জন্য দলের দরজা খুলে দিয়ে অর্থ ও অস্ত্র যোগানদানের মাধ্যমে জঙ্গীদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। জাতীয় নির্বাচন এলেই যে অপশক্তির তৎপরতা বেড়ে যায় তার আলামত এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। নরসিংদীর মাধবদীর গদাইরচর ও সদরের শেখেরচরের দিঘিরপাড় এলাকায় দুটি জঙ্গী আস্তানায় দুজন আত্মঘাতী হয়ে নিহত ও দুই নারী জঙ্গী গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আগে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু জঙ্গী সংগঠনগুলো না, নির্বাচনের আগে যে কোন অপশক্তি তৎপর হয়ে উঠে। তবে যদি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জঙ্গীদের মতাদর্শ মিলে যায় আর তখন দলটি জঙ্গীগোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। ফলে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যায়। মূলত নির্বাচনের পরিবেশ বিঘিœত করাই তাদের উদ্দেশ্য। এ জন্য পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে, যেন কঠোর হস্তে অপশক্তির দমন করা হয়। গত ১৫ অক্টোবর নরসিংদীর মাধবদীর ছোট গদাইরচর গাঙপাড় এলাকার নিলুফা ভিলা ও সদর উপজেলার শেখেরচরের দিঘিরপাড় এলাকার বিল্লালের বাড়িটিতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। শেখেরচরের আস্তানায় আকলিমা আক্তার মনি ও তার স্বামী আবু আব্দুল্লাহ বাঙালী নিহত হয়। নিলুফা ভিলা থেকে গ্রেফতার হয় খাদিজা আক্তার মেঘলা ওরফে মেঘনা ও মৌ নামের দুই নারী জঙ্গী। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর নাজমুল ও হাফেজের সহায়তায় বাসা দুটি ভাড়া নিয়েছিল তারা। নাজমুল ও হাফেজকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সিটিটিসির দাবি। চলতি মাসেই চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের ‘চৌধুরী ম্যানশন’ নামক একটি বাড়িতে জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযান পরিচালনাকালে দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয়, যাদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। অভিযান শেষে ওই বাড়ি থেকে একটি একে-২২ রাইফেল, ৫টি অবিস্ফোরিত বোমা এবং তিনটি ছুরিসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের দাবি, চট্টগ্রামের আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল ওই জঙ্গীদের। জঙ্গী বিষয়ক বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনের আগে হঠাৎ জঙ্গী আস্তানা পাওয়া ও তাদের হামলার পরিকল্পনার কারণ হচ্ছে, নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনমুখী থাকে। নির্বাচন নিয়ে তাদের অনেক প্রস্তুতি থাকে, তাই কিছুটা হলেও মনোযোগ ঐ দিকে থাকে। হঠাৎ নজরদারি কমে যাওয়ার ফলে জঙ্গী সংগঠনগুলো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে চেষ্টা করে এবং তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। তবে নির্বাচনের আগে কোন রাজনৈতিক দল যদি জঙ্গীদের জন্য দলের দরজা খুলে রাখে এবং অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দেয় তাহলে জঙ্গীদের তৎপরতা বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জামা’আতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসার আল ইসলাম একসঙ্গে মুন্সীগঞ্জে লেখক-প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার পর সংগঠনটির পুনঃশক্তির বিষয়টি আবারও সামনে আসে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গীরা আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। শুধু দেশী গোয়েন্দা সংস্থা নয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপও (আইসিজি) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে ভোটের বছরে রাজনৈতিক বৈরিতা আবারও সহিংস জঙ্গীবাদের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। তারা বলছে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মেরুকরণ যে সঙ্কট তৈরি করবে জঙ্গীরা সেই সুযোগ নিতে পারে। অনেকের আশঙ্কা ভোট সামনে রেখে আবার জঙ্গী অভিশাপের মুখোমুখি হবে দেশ। চলতি বছরের শুরুর দিকেই আইসিজি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে ভোট সামনে রেখে রাজনৈতিক বৈরিতা হলে আবারও সহিংস জঙ্গীবাদের উত্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সতর্কও করেছে। মাঠ পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘাত ও তা নিরসনে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয় এই আন্তর্জাতিক সংস্থা। যদিও গোয়েন্দারা বলছেন, বড় ধরনের হামলা করার মতো সক্ষমতা জঙ্গীদের নেই। তবে এরপরও তারা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চান না। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি এরই মধ্যে সংগঠিত হয়ে অপতৎপরতা শুরু করেছে বলেও কিছু আলামত পেয়েছেন তারা। চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে তিনটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান লাভ, আত্মঘাতী হয়ে জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনা ও নারী জঙ্গীদের গ্রেফতার, জঙ্গী আস্তানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা অশুভ শক্তির তৎপরতার ইঙ্গিত বহন করে। পুরনো জেএমবি নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার বেশকিছু আলামত পাওয়া গেছে। তাদের কিছু নাশকতা পরিকল্পনাও এরই মধ্যে নস্যাৎ করা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরনো জেএমবি সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে ছক কষছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
×