ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ফারহানার চিত্রপটে বহুমাত্রিক অভিব্যক্তিময় নারীর মুখচ্ছবি

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 ফারহানার চিত্রপটে বহুমাত্রিক অভিব্যক্তিময় নারীর  মুখচ্ছবি

মনোয়ার হোসেন ॥ দেয়ালের গায়ে ঝুলে থাকা সব ক্যানভাসেই ভেসেছে নারীর মুখ। তাই বলে একরকম নয় সব চেহারা। প্রতিটি মুখাবয়বেই রয়েছে ভিন্নতা। প্রতিটি চিত্রপটে দৃশ্যমান পৃথক পৃথক অভিব্যক্তি। শিল্পীর কল্পনা আশ্রিত চিত্রকর্মগুলো আবেগে ভরপুর। ভাবনায় স্বতন্ত্র। মুখগুলো কল্পিত হলেও রং-তুলির আঁচড়ে নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধির রূপায়ন ঘটিয়েছেন চিত্রকর। কখনও বা চরিত্র চিত্রণে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের। শিল্প সৃজনে খুঁজে নিয়েছেন পাঠক পরিচিত নানা নারী চরিত্রকে। রৈখিক বিন্যাসে বর্ণের বৈভবে নারীর মুখচ্ছবিময় এসব ছবি এঁকেছেন ফারহানা ইয়াসমিন। সেসব ছবি নিয়ে ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে চলছে এই শিল্পীর তৃতীয় একক প্রদর্শনী। শিরোনাম ইভানেসেন্স বা অদৃশ্য । ফারহানার চিত্রপটে নারী এসেছে বহু রূপে। সেখানে মুখের অভিব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চোখের ভাষা। অনেকগুলো গাঢ় রং মিশ্রিত জমিনের একটি ক্যানভাসে নারীর মুখের একপাশ উজ্জ্বল আর অপরদিকটি অনুজ্জ্বল। চেহারার অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে ঢেকে গেছে নয়নখানি। আর আলোকিত অংশে যেন জ্বলে উঠে প্রখর দৃষ্টিময় চোখটি। কাঁধের কাছে ঝুলে থাকা খোঁপার ফুলে আবৃত মুখটি দারুণ নজরকাড়া। নাকফুল পরা পাশ ফিরে থাকা মুখচ্ছবিটি যেন বলে যায় গভীরতর কোন ভাবনার কথা। সেই ভাবনায় সহজেই শামিল হতে পারে শিল্পকে ভালবাসা মানুষেরা। অশ্রুতে দুই চোখ ছলছল করা কিশোরীর মুখটি শিল্পরসিকের কাছে ধরা দেয়া মায়ার খেলা রূপে। নিকষ কালো জমিনের অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহের ভেতর উদ্ভাসিত মুখটি সহজাতভাবেই কাছে টানে দর্শককে। আঁধারের মাঝে জ্বলে ওঠা চোখজোড়া বলে যায় নারীর অন্তর্গত শক্তির কথা। শিল্পীর কল্পিত নানা গড়নের এসব মুখচ্ছবির সঙ্গে প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের নায়িকা হৈমন্তী। এছাড়াও কল্পনার ডানায় ভর করে উঠে আসা সাহিত্যনির্ভর চরিত্রের মধ্যে আছে কাজলরেখা, লাবণ্য, মেহেরজান কিংবা গাজী কালুর চম্পাবতী। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে কথা হয় ফারহানা ইয়াসমিনের সঙ্গে। নবীন এই চিত্রকর জনকণ্ঠকে বলেন, যেসব ছবি আমি এঁকেছি সেগুলো এসেছে আমার অবচেতন মন থেকে। আমার ক্যানভাসের চরিত্রগুলো জাগতিক নয়। এগুলো আসলে জীবনের পথচলায় খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিগত উপলব্ধির শিল্পিত ফসল। চরিত্রগুলো চিত্রণে প্রভাবিত করেছে আমার নিজস্ব মানসিক অবস্থান। আছে আবেগের বহিঃপ্রকাশ। রয়েছে অন্তর্গত শক্তির প্রকাশ। সহজ-সরলভাবে শিল্পের শরীরে মেলে ধরেছি মনের ভেতর থেকে পাওয়া ভাবনাকে। সহজবোধ্য ছবির মাঝেও রহস্যময়তার বিস্তার ঘটাতে চেয়েছি। তেল রং ও এ্যাক্রেলিকের ব্যবহারে শিল্পানুরাগীর নয়নজুড়ানো ছবিগুলো এঁকেছেন ফারহানা ইয়াসমিন। মূর্ত ও বিমূর্ত আঙ্গিকের ছোট-বড় ফ্রেমের ৩১টি চিত্রকর্মে সজ্জিত হয়েছে প্রদর্শনী। তেরো দিনব্যাপী চলমান এ শিল্পায়োজনের শেষ দিন আগামী ২৭ অক্টোবর। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে দর্শনার্থীর জন্য।
×