ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমার বর্তমান উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য’

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 ‘আমার বর্তমান উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে উৎসর্গ করে বলেছেন, ‘আমার বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজেন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। তারাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়বে, এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই চলার গতিটা যেন কখনো থেমে না যায়। অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করব।’ প্রধানমন্ত্রী তরুণ প্রজন্মকে দেশের সব থেকে বড় শক্তি আখ্যায়িত করে এবং তাদের কর্মসংস্থানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনে তাদের ভোট চেয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের শাসনামলে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। কাজেই আমাদের সব থেকে বড় শক্তি তরুণ প্রজন্মের কাছে আগামী নির্বাচনের জন্য ভোট চাইব, যাতে করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকে। রবিবার গণভবনে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তরুণ প্রজন্মের প্রতি এ আহ্বান জানান। গণভবন থেকে মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলে ‘মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি’ (এমএনপি) সেবার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমাদের বর্তমান, আমরা তো চলেই যাচ্ছি। আমাদের বর্তমানে যতটুকু কাজ আমরা এগুতে পারি সেটা আমরা উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য। আলোকিত জীবন তারাই আমাদের দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসি তখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব। তবে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ প্রযুক্তি বহমান নদীর মতো। নতুন প্রযুক্তি আসবে, তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ছেলেমেয়েদের সেভাবে তৈরি করতে হবে। যাতে তারা সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারে। বেসরকারী খাতকে সরকার উৎসাহিত করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোন বেসরকারী খাতে দিয়েছিলাম বলেই আজ মানুষের হাতে হাতে মোবাইল। সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার পাঁচ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে। এতে ইন্টারনেট সার্ভিসের আওতায় এসেছে সারাদেশে। আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন কোথায় এসেছি। মাত্র ১০ বছরে এই পরিবর্তন হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে বলেই। আর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পেরেছে তরুণ প্রজন্ম ভোট দিয়েছে বলে। তিনি বলেন, বেসরকারী খাত উৎসাহিত করতে তার সরকার ৪৪টি টেলিভিশনের লাইসেন্স দিয়েছে। তবে তিনি জানান, এতগুলো টেলিভিশন লাইসেন্স দেয়ায় ভুক্তভোগী তারাই। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে বলে জানান তিনি। তরুণদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েদের এটাই বলব যে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শিখতে হবে। আর প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো অভ্যস্ত হতে হবে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। যতদিন যায় প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তি বের হয়। তরুণ প্রজন্মেরই দায়িত্ব পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে চলা। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটা সিম থেকে যে কোনো অপারেটরে আরেকটা সিমে নাম্বার পরিবর্তন করা বা একটা অপারেটর থেকে আরেকটা অপারেটরে যাওয়ার যে আধুনিক প্রযুক্তি, পৃথিবীর খুব সীমিত দেশ এটা ব্যবহার করে। আমরা সেই যুগে প্রবেশ করছি। যদিও এটি একটা জটিল বিষয়, সেটাকে আজকে সহজভাবে করে দেয়া হয়েছে। এই এমএনপি সেবা অনেকের জন্য সুবিধা হবে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ব্রড ব্র্যান্ড সার্ভিসটা একেবারে গ্রাম পর্যন্ত, জেলা উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্রতিটা গ্রামকে আমরা শহরে উন্নীত করছি। ই-ফাইলিং সুবিধা চালু হওয়ায় এখন যে কোনো জায়গায় বসে কাজ সারার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং তাতে আর কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে না। গত দশ বছরে বাংলাদেশ ডিজিটাল দুনিয়ায় কতখানি এগিয়েছে, সে কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরে বলেন, দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে খেলাধুলার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। তাহলে জঙ্গী-মাদক থেকে দূরে থাকতে পারবে। এই তরুণ এবং যুব সমাজই দেশের চেহারা বদলে দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। একটু উদ্যোগ নিলেই নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। বিদেশে গিয়ে দেখেছি তারা কীভাবে এরকম ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন এভাবে শিখবে না। ইতোমধ্যে প্রায় স্কুলে ডিজিটাল পদ্ধতি, মাল্টিলেভেল ক্লাসরুম করে দিচ্ছি। এতে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি শিখতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নাতনির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার তিন বছরের নাতিটাও মোবাইলের সব বোঝে। তার জন্য পিন অনেকবার পাল্টিয়েছি। কিন্তু কীভাবে যেন পেয়ে যায়। তাকে জিজ্ঞেস করেছি, কীভাবে পাও? সে বলেছে, তুমি যখন বাটনে টিপো দূর থেকে দেখেই তা টের পেয়ে যাই। একবার আমাকে এসে বলল, তিনটি নাম্বার পেয়ে গেছি, চতুর্থটা দাও না। আমি বললাম, তিনটি যেহেতু বের করতে পেরেছ চতুর্থটাও বের করতে পারবে, চেষ্টা কর।’ তিনি বলেন, শিশুদের প্রযুক্তির কিছু শেখাতে হয় না, তারা নিজেরাই দেখে দেখে শিখে নেয়। এরাই ভবিষ্যতে ডিজিটাল শিশু হিসেবে গড়ে বে। সরকার প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৮টি হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা। ইতোমধ্যে দুটি হয়েছে। ৩৫৫ একর জমির ওপর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস রফতানি করতে পারব। তরুণদের কর্মসংস্থানের আর অভাব হবে না। ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং’ এর মাধ্যমে ঘরে বসেই তরুণদের বৈদেশিক মুদ্রা কামানোর সুযোগ আছে। এজন্য তরুণদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা এবং প্রযুক্তির আপডেট জ্ঞান লাভ করার প্রতি তাগিদ দেন তিনি। ট্যাক্স কমানোর দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় ট্যাক্স কমানোর দাবি করলে উন্নয়ন হবে কীভাবে? ট্যাক্স দিচ্ছে বলেই বাজেট সাত গুণ বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় কথা বাইরের কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য সম্মানের। সেই সম্মানটা ধরে রাখতে চাই। আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তবে অর্থমন্ত্রী ট্যাক্স মাফ করে দিলে তাঁর করার কিছু নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিটিআরসি চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, নাহিম রাজ্জাক এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মোবাইল অপারেটর সার্ভিসের কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে এমএনপি সার্ভিসের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। বহুল প্রতীক্ষিত এই এমএনপি সার্ভিসের আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও পরীক্ষামূলকভাবে ১ অক্টোবর থেকে দেশে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্বে ৭২তম দেশ হিসেবে এই সার্ভিস বাংলাদেশে চালু করেছে সরকার। উপজেলা পর্যায়ে ৬৬ মিনি স্টেডিয়াম উদ্বোধন ॥ এদিকে দুপুরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে ৬৬টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, ৬ জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) মাল্টিমিডিয়া ইনডোর কমপ্লেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করতে। কিন্তু জায়গার অভাবে অনেক স্থানে মিনি স্টেডিয়াম করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি দলীয় নেতাদের কাছে স্টেডিয়ামের জায়গা খোঁজার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে পরিচিত করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে এনেছে। ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু সাভারে না রেখে প্রতিটি জেলায় নেয়া যায় কিনা সে চেষ্টা করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ আবার যদি ভোট দেয় এবং সরকার গঠন করার সুযোগ দেয় তাহলে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত করব। দেশের আরও উন্নয়নের জন্য নতুন প্রকল্প করা হবে। বাংলাদেশে একটি পরিবারও গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে। তিনি বলেন, প্রথম যখন নীলফামারীতে ইপিজেড স্থাপন করতে চাই তখন অনেকে ব্যঙ্গ করে বলেছিল ওখানে কে কাজ করতে যাবে। আমি কারও কোন কথায় কান না দিয়ে কাজ শুরু করি। আজ সেখানে ৩৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা বলছে, এখানে আমরা খুব ভালো আছি। আমরা এখন এখানে আর মঙ্গা দেখি না। প্রত্যেক বছর কার্তিক মাস এলে এ এলাকায় মঙ্গা শুরু হতো। এখন আর সেটা নেই। এ কথা শুনে খুব ভাল লাগল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্পোর্টসে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাক। যুব সমাজ সুস্থ-সুন্দর থাকুক। খেলাধুলা, লেখাপড়া সব দিক থেকে তারা নিজেদের গড়ে তুলুক। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায়। মাদকাসক্তি ও জঙ্গীবাদ থেকে তরুণদের রক্ষায় পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের যত বেশি খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চায় সম্পৃক্ত করতে পারব, তত বেশি তাদের চরিত্র আরও অনেক দৃঢ় হবে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। মাদক অথবা জঙ্গী এ ধরনের কোনো বিপথে যাবে না। সেজন্য তাদের আমরা খেলাধুলার দিকে আরও সম্পৃক্ত করতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা লেখাপড়ার ওপর গুরুত্ব দেই। জাতিকে শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলা একান্তভাবে অপরিহার্য। খেলাধুলার সঙ্গে শিশু-কিশোররা যত বেশি সম্পৃক্ত হবে, আমি মনে করি, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে, মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হবে, একটা মনোবল তারা ফিরে পাবে এবং দেশ ও জাতির জন্য গৌরব বয়ে আনবে। প্রতিটি উপজেলায় সারা বছর যেন ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে সেজন্য একটি করে ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, খেলাধুলার সঙ্গে ছেলেমেয়েরা সম্পৃক্ত থাকবে সেখানে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হবে। ছোট্ট একটা জায়গা থাকবে, বাকি জায়গাটা সম্পূর্ণ উš§ুক্ত থাকবে, যেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও, কেউ দেখতে পারে সেখানে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে। তৃণমূলের তরুণ ক্রীড়াবিদরা যেন জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারে সেজন্য এই মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৪৯০টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় জায়গার অভাবে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা দয়া করে জায়গা নির্দিষ্ট করে দেন। এটা কিন্তু কোন স্কুলের জায়গা, মাঠ, কলেজের মাঠে হবে না; এটা সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় হবে। এই কারণে ১২ মাস খেলাধুলা চলতে পারে, সব জায়গায় খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে সেটা আমরা চাই।’ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে সাভারের বিকেএসপি ও যুব উন্নয়ন কেন্দ্র সফরে গিয়ে চরম দুরবস্থা দেখার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ ক্রীড়াবিদদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সরকার দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপির শাখা খুলবে। যুব উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো সংস্কার করে তাতে সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করার হবে। আমাদের লক্ষ্য, যুবকরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সবাই উচ্চশিক্ষা নেবে তা নয়। প্রত্যেকের একটা প্রশিক্ষণ দেয়া শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তারা যেন নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে ক্রীড়ামোদীদের জন্য বিভিন্ন টুর্নামেন্ট চালু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে আয়োজনের পাশাপাশি স্থানীয় দেশী খেলাধুলা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য সেগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ক্রিকেট, দাবা, হকি খেলাগুলোতে ধারাবাহিক সাফল্যের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য ও স্পেশাল অলিম্পিকে প্রতিবন্ধীদের সাফল্যের প্রশংসাও করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের খেলাধুলার জন্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। তিনি বলেন, প্রথম থেকে চতুর্থ পর্যায় পর্যন্ত ৬৪টি উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী সমাপ্ত করেছি। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্যায়ে আরো ৬৪টি উপজেলায় কাজও শুরু হয়েছে। কাজেই ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে তারা ট্রেনিং যা পাচ্ছে, সেটাই তাদের পুঁজি। কাজের শেষে তারা উপযুক্ত কাজ পেয়ে যাবে, সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তরুণ উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র পরিসরে নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন শুরু করতে পারে, সেজন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে তাদের কোন জামানত দিতে হবে না। বেকার হয়ে যেন ঘুরে বেড়াতে না হয়, সেজন্য এই ব্যবস্থা। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আমরা এই কর্মসংস্থান ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার গণভবন প্রান্ত থেকে এবং উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বারহট্ট থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় গণভবনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এবং যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
×