ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চক্ষু শিবিরে ‘চোখ হারানো’ ১৭ জনকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 চক্ষু শিবিরে ‘চোখ হারানো’ ১৭ জনকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা প্রাপ্ত ‘চোখ হারানো’ ১৭ জনের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অন্যদিকে তৃতীয় প্রফেশনাল থেকে পাস করার পর এক বছর পূর্ণ হলেই মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা দিতে পারবে মর্মে জারি করা সার্কুলার স্থগিত করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। ফলে আগের নিয়মানুসারে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রফেশনালে অকৃতকার্যদের পরীক্ষার পর এক বছর পূর্ণ না হলেও ফাইনাল প্রফেশনালের পরীক্ষা দিতে বাধা থাকল না। রবিবার আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছে। ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা প্রাপ্ত ‘চোখ হারানো’ ১৭ জনের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার ও আইরিশ কোম্পানিকে এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রবিবার রায় ঘোষণা করেন। এ ছাড়া চিকিৎসায় অবহেলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ওই কমিটিতে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট অথবা প্যাথলজিস্ট, একজন লিগ্যাল এক্সপার্ট অথবা সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এবং প্রাইভেট মেডিক্যালের একজন ডাক্তারসহ মোট সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত, সঙ্গে ছিলেন সুভাষ চন্দ্র দাস ও মোঃ শাহিনুর রহমান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম ও আইরিশ কোম্পানির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম। রায়ের পর আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে চোখ হারানো ১৭ জনকে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকা পরিশোধ করে সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। এর আগে গত ১৩ আগস্ট চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য রবিবার দিন ধার্য করে আদালত। ‘চোখ হারানো’ ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১ এপ্রিল রুল জারি করে হাইকোর্ট। এই ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শীর্ষক শিরোনামে ২৯ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। তবে বাসায় ফিরেই ২০ রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। এসব রোগী ও তাদের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ মার্চ অপারেশনের পর ৬ মার্চ তাদের প্রত্যেককেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়ি ফিরে ওই দিনই কারও বিকেলে, কারও সন্ধ্যায়, কারও রাত থেকে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় ও পানি ঝরতে শুরু করে। পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোন রকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইম্প্যাক্টে যান। সেখান থেকে তখন কয়েক রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরী ভিত্তিতে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। এদের মধ্যে চার রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে। ফেল করেও ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা ॥ তৃতীয় প্রফেশনাল থেকে পাস করার পর এক বছর পূর্ণ হলেই মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা দিতে পারবে মর্মে জারি করা সার্কুলার স্থগিত করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। ফলে আগের নিয়মানুসারে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রফেশনালে অকৃতকার্যদের পরীক্ষার পর এক বছর পূর্ণ না হলেও ফাইনাল প্রফেশনালের পরীক্ষা দিতে বাধা থাকল না। রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপীল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আবদুন নুর দুলাল জানান, এই আদেশের ফলে বিএমডিসির ২০১২ সালের সার্কুলার অনুসারে সারা দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষার পর কয়েক বিষয়ে অকৃতকার্যদের এক বছর পূর্ণ না হলেও ফাইনাল প্রফেশনালের পরীক্ষা দিতে বাধা থাকল না। এর আগে গত ৯ অক্টোবর তৃতীয় প্রফেশনাল (বর্ষ) থেকে পাস করার পর এক বছর পূর্ণ হলেই কেবল মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা ফাইনাল প্রফেশনালে পরীক্ষা দিতে পারবে মর্মে জারি করা বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সার্কুলার স্থগিত করে হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে ৩৬ রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুন নূর দুলাল।
×