ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

না’গঞ্জে ৪ যুবকের লাশ উদ্ধার, দুটি পিস্তল ও গাড়ি জব্দ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 না’গঞ্জে ৪ যুবকের লাশ উদ্ধার, দুটি পিস্তল ও গাড়ি জব্দ

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ ॥ আড়াইহাজারের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী দিঘিরপাড় এলাকার মহাসড়কের দুপাশ থেকে চার জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ এক রাইন্ড গুলিভর্তি দুটি বিদেশী পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে। রবিবার ভোরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুপাশ থেকে ওই চার জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, আঘাত করে নিহতের মাথা থেঁতলে দেয়া হয়েছে। তবে বিকেলে চার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তদন্তকারী চিকিৎসক মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, পেছন থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তিনজনের মাথায় গুলি পাওয়া গেছে। এদিকে নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে এবং একজন জব্দকৃত মাইক্রোবাসটির চালক লুৎফর মোল্লা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রাজধানীর রামপুরা থানার বাগিচারটেক এলাকার বাসিন্দা রেশমা বেগম নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে এসে তার স্বামীর লাশ শনাক্ত করেছেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ভোরে খবর পেয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী দিঘিরপাড় এলাকায় মহাসড়কের দুপাশে দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। চারজনের লাশের মাথা থেঁতলানো ছিল বলে পুলিশ জানায়। ঘটনাস্থল থেকে এক রাউন্ড গুলিভর্তি দুটি পিস্তল ও একটি সিলভার রঙের মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ-১৩-০৫০১) জব্দ করে। লাশে রক্তগুলো জমাট বাঁধা ছিল। তবে কী কারণে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ব্যস্ততম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এই চারজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করে। এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। নিহত ৪ জনের মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে ॥ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ছুটে এসে রাজধানী ঢাকার রামপুরা ওয়াপদা রোড এলাকার রেশমা বেগম। তিনি বলেন, কালো গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পড়া তার স্বামী লুৎফর রহমান মোল্লার লাশ বলে শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার স্বামী পেশায় মাইক্রোবাস চালক। গত শুক্রবার বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এর পর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি জিডিও করেছেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চারজনের মধ্যে তিনজনের এখনও পরিচয় পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বললেন পাঁচরুখীর দিঘিরপাড় এলাকায় বেলা ১১টায় সরেজমিন গিয়ে মহাসড়কের দুপাশে রক্তের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। লোকজনকে তখনও ঘটনাস্থলে ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে লাশ পড়ে থাকার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের লোকজনের মধ্যে আতঙ্কভাব দেখা দেয়। অনেকেই এ সময় কথা বলতে রাজি হননি। এলাকাবার বাসিন্দা রায়হান জানান, প্রকৃতির ডাকে তিনি সারা দিতে উঠতেই চারটি গুলির শব্দ শুনতে পান। রাতের বাসা থেকে বের হতে না পারলেও ভোরে বের হয়ে দেখেন মহাসড়কের দুপাশে দুটি করে চারটি মৃতদেহ পড়ে আছে। একটি মাইক্রোবাস সেখানে পড়েছিল। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। দুটি লাশের নিচ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে। পরে পুলিশ এসে নিহতের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন। পাঁচরুখী এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, ভোর ৫টায় মহাসড়কের দুপাশে দুটি করে ৪টি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। বৈদ্যুতিক খুঁটি সঙ্গে একটি নোয়া মাইক্রোবাসও রাখা ছিল। সকাল সাড়ে ৭টার পর পুলিশ এসে লাশ চারটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি মনে হয় রাত সাড়ে ৩টার দিকে হবে। একই এলাকার আরিফ মিয়া জানান, পুলিশ আসার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখি। লাশ পড়ে থাকার ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির নাম প্রকাশ্যে এক নারী জানান, আমাদের ধারণা রাত সাড়ে ৩টার দিকে উক্ত স্থানে লাশ ফেলে গেছে। তখন ভয়ে আমাদের বাড়ির লোকজন কেউ ঘটনাস্থলে যায়নি। একই এলাকার আনিছুর রহমান জানান, ভোরে একটি মাইক্রোবাস মহাসড়কের পাশে দাঁড়ানো থাকতে দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মহাসড়কের দুপাশে দুটি করে লাশ পড়ে থাকতে দেখি। তবে লাশগুলোর মাথা থেঁতলানো ছিল। লাশগুলো উপুড় অবস্থায় পড়ে ছিল। কোন কোন লাশের মস্তষ্ক (খুলি) বের হয়ে গেছে। ভোর থেকে শত শত লোকজন লাশ দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসছে। আড়াইহাজারের সাতগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুুদ মাহমুদ জানান, সকালে আমাদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্যের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মহাসড়কের দুপাশে দুটি করে চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। লাশগুলো মুখম-ল ক্ষতবিক্ষত। মস্তক বের হয়েছে এসেছে। ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে বুঝতে পারছি না। পুলিশের বক্তব্য ॥ আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল হক জানান, চারজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বয়স বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। নিহত চারজনের মধ্যে একজনের পরনে ছিল সাদা-নিল রঙের লুঙ্গি ও গাঢ় নীল রঙের গেঞ্জি পরা। অপর তিনজনের পরনে ছিল কালো গেঞ্জি ও নীল রঙের জিন্স প্যান্ট, জিন্ট প্যান্ট ও স্টাইপের লাল সাদা গেঞ্জি পরা ও বেগুনি কালো স্টাইপের রঙের গেঞ্জি ও জিন্স প্যান্ট পরা। লাশের সুরতকালে নিহতের চারজনের প্রত্যেকের মাথায় পেছন থেকে থেঁতলো ছিল। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জানান, চারটি লাশ ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় একটি হত্যা ও অন্যটি অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নিহত চারজনের মাথায় ক্ষতের চিহ্ন পেয়েছি। এছাড়া শরীরে আর কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। চার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন ॥ রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের চার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তদন্ত শেষে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, নিহত চারজনের মাথায় আঘাত ও গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাদের পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনজনের মাথায় গুলি পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের মাথায় পাওয়া গুলির ধরনের একই রকমের। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে কোন এক সময় এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে আড়াহাইহাজারে লাশের সঙ্গে জব্দকৃত মাইক্রোবাসের গাড়ির মালিক রফিক আকন্দ বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছেন। গাড়ির মালিক রফিক আকন্দ জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চালক লুৎফর রহমান মোল্লা একটি ট্রিপ পেয়ে রাজধানীর রামপুরা থেকে গাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু কোথায় ট্রিপ নিয়ে যাবেন তা জানায়নি। তিনি জানান, এক মাস আগে লুৎফর রহমান মোল্লা তার গাড়িটি চালানো শুরু করেন। তিনি জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে জানানো হয়েছে যে গাড়িটি পুলিশ জব্দ করেছে।
×