ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল যুক্তরাষ্ট্রের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ১৯৮৭ সালে রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক মাঝারি পাল্লার পরমাণু শক্তি চুক্তি (ইন্টারমিডিয়েট- রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি) বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে এ ঘটনার জন্য বরং রাশিয়াকে দোষারোপ করেন। স্থানীয় সময় শনিবার নেভাদা অঙ্গরাজ্যে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মস্কো এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে আসছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। এদিকে রাশিয়া এই চুক্তি থেকে সরে আসার মার্কিন সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত বিপজ্জনক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে। রবিবার রাশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রেইকভ সাফ জানান, ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এছাড়া এ ঘটনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন রবিবার থেকে মস্কো সফর শুরু করছেন। সফরে তার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এ বিষয়ে সের্গেই রেইকভ বলেন, জন বোল্টনের এই সফরের সময় আমরা তার কাছ থেকে আইএনএফ চুক্তি থেকে সরে আসার বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আশা করছি। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ট্রাম্পকে আইএনএফ চুক্তি থেকে বেড়িয়ে আসতে চাপ দেন। তিন দশক আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্ভাচেভ স্বাক্ষরিত আইএনএফ চুক্তির আওতায় ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। রাশিয়া অনেক দিন ধরেই চুক্তিটির ‘লঙ্ঘন’ করে আসছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের। নেভাদায় ট্রাম্প আরও বলেন, আমি জানি না কেন প্রেসিডেন্ট ওবামা এটি নিয়ে মধ্যস্থতা করেননি, কিংবা বেরিয়ে আসেননি। মস্কো অনেক বছর ধরে এটি লঙ্ঘন করে আসছে। মস্কো ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে এমন খবর পাওয়ার পর ২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আইএনএফ চুক্তিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিলেন। চুক্তিটি থেকে সরে আসতে ইউরোপের নেতারা সে সময় তাকে চাপ দিলেও ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা পুনরায় শুরু হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে’ ওবামা তাতে সায় দেননি। রাশিয়ার সরকারী বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, ‘বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হওয়ার বাসনায় এককেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থার স্বপ্নে তাড়িত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়া আইএনএফ চুক্তির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নোভাতর -৯-এম-৭২৯ নামে নতুন একটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে। নেটোর কাছে রাশিয়ার এ ক্ষেপণাস্ত্রটি এসএসসি-৮ নামে পরিচিত। নতুন এ ক্ষেপণাস্ত্র মস্কোকে স্বল্প সময়ের নোটিসেই ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে হামলার সুযোগ করে দেবে বলে আশঙ্কা ওয়াশিংটনের। অপরদিকে চুক্তি লঙ্ঘনের কথা অস্বীকার ছাড়া নিজেদের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে প্রায় তেমন কিছুই বলেনি রাশিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচলিত বাহিনীর বিপরীতে রাশিয়া এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকেই তুলনামূলক সস্তা বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএনএফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার মূল লক্ষ্য রাশিয়া নয়, চীন। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেজিংয়ের বিস্তৃত সামরিক উপস্থিতির কারণেই ওয়াশিংটনের চুক্তি থেকে সরে আসার এ ভাবনা। আইএনএফে স্বাক্ষরকারী দেশের তালিকায় না থাকার কারণে চীনের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে বাধা নেই।
×