ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে শোক

সংসদ অধিবেশন চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ অক্টোবর ২০১৮

  সংসদ অধিবেশন চলবে ২৫  অক্টোবর  পর্যন্ত

সংসদ রিপোর্টার ॥ চলতি সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন মাত্র ৫ কার্যদিবস চলবে। রবিবার বিকেলে শুরু হওয়া এই অধিবেশন আগামী ২৫ অক্টোবর শেষ হবে। প্রতিদিন বিকেল সোয়া ৪টায় অধিবেশন বসবে। অধিবেশনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিলসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী বিল পাস হবে। এটিই হচ্ছে চলতি সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল ও প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন। কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকারের অনুপস্থিতিতে অধিবেশন পরিচালনার জন্য ৫ সদস্যের সভাপতিম-লী নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেনÑ এ বি তাজুল ইসলাম, ফরিদুল হক খান, সাধন চন্দ্র মজুমদার, মোঃ ফখরুল ইমাম ও সেলিনা জাহান লিটা। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও তা গ্রহণ করা হয়। সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় সদ্যপ্রয়াত জনপ্রিয় ব্যান্ডসঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে। একইসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আজিজুর রহমান, সাদির উদ্দিন আহমেদ, শাহ মোঃ আবদুর রাজ্জাক, আবদুল গণি ও শাহ মোস্তানজিদুল হক খিজিরের নামে শোক প্রস্তাব আনা হয়। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র ওসমান গণিসহ ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামিতে, তানজানিয়ায় ফেরি ডুবিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ঘূর্ণিঝড় মাইকেল, ভারতের ওড়িশা ও অন্ধপ্রদেশে ঘূর্ণিঝড় তিতলি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের নামে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এরপর প্রয়াত ওই সব ব্যক্তির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। সংসদ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। সকাল থেকেই চারপাশে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে জলকামান থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখে প্রশাসন। এমনকি সংসদ ভবনে প্রবেশেও ছিল কঠোর ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। এ হিসেবে আগামী বছর ২৮ জানুয়ারি সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর নির্বাচনকালীন সরকারের আমলে সংসদ অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা নেই। তাই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর অধিবেশন বসবে না। ফলে এটিই হবে চলতি সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন। গ্রামীণফোনের কলড্রপ নিয়ে সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ ॥ বেসরকারী মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনের কলড্রপ নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ ব্যাপারে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, গ্রামীণফোন ব্যবসার জন্য কলড্রপ করে। একটা কলে ৪ থেকে ৫ বার কলড্রপ, এটা বাস্তবসম্মত না। এর বিরুদ্ধে একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণফোনকে বেসরকারী খাতে ব্যবসার জন্য লাইসেন্স দিয়েছিলেন। ইদানীং একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গ্রামীণফোনের প্রত্যেকটা কলে ‘কলড্রপ’ হয়। এক একটা কলে তিন থেকে ৪-৫ বার পর্যন্ত কলড্রপ হয়। দেখা যায় একটা কল বারবার করতে হয়। এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও করেছি। তিনি বলেন, দেখায় যায় আমরা মোবাইলে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি, কিন্তু হঠাৎ কলড্রপ। এ ছাড়া আমরা যখন বিদেশে যাই আমাদের ফোন রোমিং থাকে। বিদেশ থেকেও একটা ফোন করলে একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তারা ব্যবসার জন্য কলড্রপ করে। তাও একবার দুইবার না ৪-৫ বার কলড্রপ হয়। সুতরাং গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এর একটি ব্যবস্থা করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, এখানে অনেক মোবাইল ফোন কোম্পানি আছে। রবি আছে, আরও অনেক ফোন কোম্পানি আছে। গ্রামীণফোন এত অন্যায়ভাবে ব্যবসার জন্য কলড্রপ করবে, এটা বাস্তবসম্মত না। একাত্তর বিধিতেও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নূর জাহান বেগমও কলড্রপ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। অন্ধ ও প্রতিবন্ধীদের চলাচলের উপযোগী ফুটপাত তৈরি হবে ঢাকায় ॥ আদালতের নির্দেশনার আলোকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সর্বদা ফুটপাত হতে অবৈধ উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও নতুনভাবে নির্মাণ/উন্নয়নকালে ফুটপাতসমূহ অন্ধ ও প্রতিবন্ধীদের চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকারী দলের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ তথ্য জানান। মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে সংসদে প্রশ্নের উত্তর দেন প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা। তিনি জানান, পথচারীদের চলাচলের জন্য রাজধানীতে ফুটপাত সর্বদা উন্মুক্ত থাকে। কিন্তু কিছু দখলদার বেআইনীভাবে মাঝে মাঝে ফুটপাত দখল করে নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনা করেন। জনস্বার্থে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় অবৈধ দখল ও ফুটপাত উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার প্রতিবন্ধীবান্ধব ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশের হাওড় এবং নিচু এলাকার যে সকল সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে যেতে পারে সে সকল সড়কে সাবমারসিবল রিগ্রিড প্রেভমেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে, যা বর্ষাকালে ডুবে থাকে এবং শুষ্ক মৌসুমে সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাজার এলাকায় ফ্লেক্সিবল পেভমেন্টের যে অংশ দ্রুত পানি নিষ্কাশন সুবিধার অভাবে নষ্ট হয়, মেরামতের সময় সড়কের সে অংশে রিগ্রিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হয়। বিগত এক বছর যাবত এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারী দলের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের ছিন্নমূল ও ভিক্ষুকসহ সকল হতদরিদ্র এবং দরিদ্র পরিবারকে প্রকল্পর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের ৩য় সংশোধিত মেয়াদ জুন, ২০২০ সালের মধ্যে ছিন্নমূলসহ সকল হতদরিদ্র মানুষকে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পের উপকারভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ী তহবিল গঠন ও আত্ম-কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন করা হবে। ৮১টি রাষ্ট্রীয় কারখানা বেসরকারী খাতে- মতিয়া চৌধুরী ॥ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে সংসদ কার্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী জানান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশন গঠনের পর হতে উক্ত কমিশনের সুপারিশে মোট ৮১টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিল কারখানা বেসরকারী খাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি জানান, এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯টি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৪টি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীলে ৩০টি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের সরকারী শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ২০টি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের সরকারী শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ৩টি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করা হয়েছে।
×