ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুর-৬ আসনে নৌকার প্রার্থীরা মাঠে, জামায়াত বিএনপি মুখোমুখি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২২ অক্টোবর ২০১৮

 দিনাজপুর-৬ আসনে নৌকার প্রার্থীরা মাঠে, জামায়াত বিএনপি মুখোমুখি

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট এই চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৬ জাতীয় সংসদের ১১ নম্বর আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন কোন্ দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তা নিয়ে অন্য দলের উৎসাহ খুব একটা দেখা না গেলেও আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা চারটি উপজেলার মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে জোটগত নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াত। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন কিনা, এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা শহর-গ্রামে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তারা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে রংবেরঙের পোস্টার ছেপে নিজ নিজ সংসদীয় আসনের ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এবং দোয়া চাচ্ছেন। সরেজমিন এই চারটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা নয় জনের মতো হতে পারে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যশীদের দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ আজিজুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোঃ আলতাফুজ্জামান মিতা, বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা আলহাজ পারভেজ কবির, নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মন্ডল, বিরামপুরের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আক্কাস আলী, আইনুল হক চৌধুরী ও মাকসুদুর রহমান লাবু চৌধুরী। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দু’জন। তারা হলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু ও চিকিৎসক নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন। জোটভিত্তিক নির্বাচন করলে বিএনপিকে আসনটি জামায়াত ছেড়ে দেবে না বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম। জাতীয় পাটি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের বড় চাচা দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ দেলোয়ার হোসেন। জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুর রহমান। ন্যাপ প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ লুৎফর রহমান চৌধুরী গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন শিবলী সাদিক। নির্বাচনের পর নানা কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। নবাবগঞ্জের ইউনএনওর ওপর হামলার ঘটনাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলের ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে, এই সংসদ সদস্য বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে তাদের বিজয়ী করছেন। তবে এসব অভিযোগ এমপি শিবলী সাদিক নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, চার উপজেলার সভাপতি-সম্পাদক মিলে আটজন। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। তাদের মধ্যে দু’একজন আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দলে কোন দ্বন্দ্ব নেই। চার উপজেলায় সমান উন্নয়ন করা হয়েছে। উন্নয়নের অন্যতম প্রমাণ হলো, চার উপজেলায় ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একজন হলেন আলতাফুজ্জামান মিতা। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই বর্ষীয়ান নেতার বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের মনোভাব বেশ ইতিবাচক। অনেকের মুখে এমনই কথা শোনা গেল, তিনি প্রার্থী হলে ভোট পাবেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নৌকা পেলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আসনটি বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে তুলে দিতে পারব। এছাড়া এই জনপদের মানুষের লালিত স্বপ্ন ও প্রাণের দাবি পূরণে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আলতাফুজ্জামান মিতা বলেন, এমপি শিবলী সাদিকের ভুল কাজের শেষ নেই। বঙ্গবন্ধুর ছিটেফোঁটা আদর্শ লালন করেন না তিনি। এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। নানা দুর্বলতার কারণে এমপি শিবলী সাদিকের জন্য এক সময় ছাত্রলীগ করা বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ পারভেজ কবির আলাদা একটি অবস্থান তৈরি করেছেন। সাধারণ নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি দলীয় কর্মকা-সহ বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে আগামী সংসদ সদস্য নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় তার নামটি জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমান ম-ল ছাত্র রাজনীতি থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্ত খুঁটি ধরে আছেন। তিনি বর্তমান বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে আছেন তিনি। বিরামপুরের কৃতী সন্তান আক্কাস আলী বিরামপুর পৌরসভার সাবেক পৌর চেয়ারম্যান তার এই নির্বাচনী আসনে বেশ পরিচিতি রয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে পৌর মেয়র নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। অধ্যাপক আক্কাস আলী বলেন, বর্তমান এমপি শিবলী সাদিক নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান করায়, পৌরসভা ও ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে। আগামীতে আমি দলের মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা রয়েছেন অনিশ্চিত অবস্থায়। তাদের প্রশ্ন, দল কি এবারও জামায়াতের প্রার্থীকে আসনটি ছেড়ে দেবে, নাকি নিজের অবস্থান শক্তিশালী করে ঘুরে দাঁড়াবে। দলীয় মনোনয়ন নিয়েও রয়েছে দ্বিমত। দলের নেতাদের মধ্যে বিএনটির শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে চিকিৎসক নেতা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক নেতা দলের জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু। তিনি বলেন, জামায়াতের অতীত কর্মকা-ে আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও বিব্রত। তাদের জন্য আমাদের দুর্নামের শেষ নেই। লুৎফর রহমান মিন্টু বলেন, এবার এ আসনটি জামায়াতকে কোনভাবেই ছাড়া হবে না। আগামীদিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীই জিতবেন। দিনাজপুর জেলা দক্ষিণের জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরিজিত হন। এই আসনের জামায়াতের একক প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগামী দিনে যে কোন কারচুপি জনগণ রুখে দেবে। এ আসনে জোটের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে, এটাই এখন বাস্তবতা।
×