ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস ইমরুলের

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২২ অক্টোবর ২০১৮

ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস ইমরুলের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে ক্রিকেটে তার পুনর্জন্ম হয়েছে এবার এশিয়া কাপ থেকে। টানা এক বছর দলের বাইরে ছিলেন। এরপর ফিরতি ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবিতে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। অথচ টপঅর্ডার হিসেবে পরিচিত বাঁহাতি ইমরুল কায়েস প্রথমবারের মতো সেই ম্যাচে নেমেছিলেন ৬ নম্বর পজিশনে। এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একই ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হলে রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে। এবার পুরনো পজিশন ওপেনিংয়ে ফিরে দলের বিপর্যয়ের মুখে একাই লড়াই চালিয়ে খেলেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় এই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইনিংসের ৪৯তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন ১৪০ বলে ১৩ চার, ৬ ছক্কায় ১৪৪ রান করে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে এই ৪৪তম সেঞ্চুরিটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এবার এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুবাইয়ে ১৪৪ রান করা মুশফিকুর রহীমও আছেন তার কাতারে। তবে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে তামিম ইকবালের করা ১৫৪ রানই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ওয়ানডে ইনিংস। ফিরে আসার পর টানা তিন ম্যাচ ওপেনিংয়ে জায়গা হয়নি ইমরুলের। ৩১ বছর বয়সী খুলনার এ ক্রিকেটার একটা সময় উদ্বোধনী জুটিতে অপরিহার্য তামিমের সঙ্গী হিসেবে জমজমাট করে তুলেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবটা বেশ কয়েকবার থমকে দিয়েছে তাকে। সে জন্য ওপেনিং থেকে ওয়ানডাউনেও নামতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে মূলত ওপেনার হিসেবেই তার পরিচিতি এবং এবার এশিয়া কাপের আগে কখনই ৩ নম্বর পজিশনের নিচে ব্যাট হাতে নামেননি। সর্বশেষ গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর বাদ পড়েন তিনি ওয়ানডে থেকে। অথচ খুব বাজে ফর্মে ছিলেন, বিষয়টি এমনও নয়। সেই সফরটি পুরো বাংলাদেশ দলেরই বাজে কেটেছিল। তবে ইমরুল তিন ম্যাচে করেছিলেন ৩১, ৬৮ ও ১ রান। অবশেষে এবার এশিয়া কাপের প্রথম ঘোষিত দলে না থাকলেও তামিমের ইনজুরিতে আরব আমিরাত গিয়ে একদিন পরেই ভ্রমণক্লান্তি নিয়ে মাঠে নামেন। আশ্চর্যজনকভাবে আফগানদের বিপক্ষে সেই ডু-অর-ডাই ম্যাচে তাকে নামানো হয় ৬ নম্বরে। কিন্তু সেই ম্যাচে তিনি চমক দেখান মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে। নতুন এ পরিচয়টা অবশ্য দেখানোর পরেও এশিয়া কাপে নিজের তৃতীয় ম্যাচেই (ফাইনালে) তিন নম্বরে নেমে টপঅর্ডার পজিশন ফিরে পান। রবিবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আবার ওপেনিংয়ে ফেরেন ইমরুল। এবার তার সঙ্গী লিটন। তামিম ইনজুরির কারণে নেই পুরো সিরিজে। লিটন দ্রুত সাজঘরে ফিরলেও ইমরুল শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। তিনি একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে লিটনসহ একে একে ৬ জন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরে যেতে দেখেছেন। দলীয় রান তখন মাত্র ১৩৯! বাংলাদেশকে চরম বিপদে ফেললেও কিন্তু ইমরুলকে দমাতে পারেননি প্রতিপক্ষ বোলাররা। স্বাচ্ছন্দ্যে তিনি মোকাবেলা করেছেন প্রতিপক্ষ বোলারদের। সপ্তম উইকেটে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ১২৭ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। তাতক্ষণে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন ইমরুল মাত্র ১১৮ বলে। ৮ চারের পাশাপাশি এর মধ্যে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৩টি। ২০০৮ সালে অভিষেক হওয়ার মাত্র দেড় বছরের মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ক্রাইস্টচার্চে ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ১৩৮ বলে করেছিলেন ১০১ রান। পরের বছর ১৩ এপ্রিল মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৩ রানে আউট হয়ে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন অল্পের জন্য। এরপর তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬ বছর। মিরপুরে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ অক্টোবর ২০১৬ তিনি ১১৯ বলে ১১ চার ২ ছক্কায় করেন ১১২ রান। এবার সেটিকে ছাড়িয়ে গিয়েও থামেননি তিনি বরং ঝড় তুলেছেন। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর একে একে বাংলাদেশের অন্য সেঞ্চুরিয়ানদের পেছনে ফেলতে শুরু করেন। এক সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসটি বেরিয়ে আসবে তার উইলো থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৮ বল বাকি থাকতে কাইল জারভিসকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে পিটার মুরের হাতবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ততক্ষণে বাংলাদেশের পক্ষে মুশফিকের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় সেরা ওয়ানডে ইনিংস হয়ে গেছে তার। সেঞ্চুরির পর ৪৪ রান করেন মাত্র ২২ বলে। তার এমন বিধ্বংসী রূপের কারণেই বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দল পেয়ে যায় বিশাল ইনিংস। ১৪০ বলে ১৩ চার, ৬ ছক্কায় ১৪৪ রান করে বিদায় নেন ইমরুল। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে ১৫৪ করে তামিম এক নম্বরে, ১৪৪ রান করে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে ইমরুল ও মুশফিক।
×