ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতারে অনুমতির বিধান রেখে সংসদে সরকারী চাকরি বিল উত্থাপন

প্রকাশিত: ০৮:১১, ২২ অক্টোবর ২০১৮

গ্রেফতারে অনুমতির বিধান রেখে সংসদে সরকারী চাকরি বিল উত্থাপন

সংসদ রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্মচারীকে গ্রেফতারের আগে সরকার তথা ওই কর্মচারীর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে-এমন বিধান রেখে ‘সরকারী চাকরি বিল-১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। রবিবার রাতে ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সংসদে আরও পাঁচটি নতুন বিল উত্থাপিত হয়েছে। প্রসঙ্গত ১৯৬৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী দুদক অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়েও যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫ ধারায়ও এ বিধান বলবত রাখা হয়েছে। তবে এই বিধান কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না মর্মে বিধান করা হয়েছে সংসদে উত্থাপিত বিলে। বিলের একাদশ অধ্যায়ের সরকারী কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধ শীর্ষক ৪১ ধারার উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে ‘কোন সরকারী কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পূর্বে, তাহাকে গ্রেফতার করিতে হইলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’ বিলের একই ধারার ৩ উপধারায় বিচারাধীন কোন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারী কর্মচারী বলে দৃষ্টিগোচর হলে তা সরকার ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার বিধান রাখা হয়েছে। একই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধের কারণে এক বছরের অধিক মেয়াদে কারাদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হলে রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আদালত কর্তৃক কারাদন্ড প্রাপ্ত ও চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারণকৃত ব্যক্তিকে অনুরূপ বরখাস্ত বা অপসারণ থেকে অব্যাহতি প্রদানের বিশেষ কারণ বা পরিস্থিতি রয়েছে- তা হলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ওই শাস্তি থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে ওই কর্মচারী পুনরায় চাকরিতে বহাল হবেন। বিলের চতুর্থ অধ্যায়ে ৭ ধারায় সরকারী চাকরিতে নিয়োগ লাভের একমাত্র মানদন্ড ও ভিত্তি হিসেবে মেধা ও উন্মুুক্ত প্রতিযোগিতা স্থির করা হয়েছে। পদোন্নতির মানদন্ড ধরা হয়েছে কর্মচারীর মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ এবং সন্তোষজনক চাকরি। আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন কোন ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ করা যাবে না। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে আবশ্যিকভাবে পদের বেতন, কর্মপরিধি, নিয়োগ পরীক্ষার ধরন, বিষয়, নম্বর বিভাজন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ন্যূননতম নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নহে এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগের সুপারিশ করা যাবে না। আর পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করলে কিংবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কাউকে পদোন্নতি দেয়া যাবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে। কোন পদে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে সুস্পষ্ট বিধান না থাকলে বা জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সম্ভব না হলে কর্তৃপক্ষ যা উপযুক্ত মনে করবে, তার ভিত্তিতেই জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে পারবে। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কাউকে আত্মীকরণ করা যাবে না। বিলে কোন সরকারী কর্মচারী আচরণ, শৃঙ্খলা জনিতকারণে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে লঘু ও গুরুদন্ড আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। বিলের দশম অধ্যায়ে ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, লঘুদন্ড হিসেবে তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা, বেতন স্কেল নিম্নধাপে অবনমিতকরণ করা হবে। গুরুদন্ড হিসেবে নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনতিমকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। কোন কর্মচারীর ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে সরকারী অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হলে দায়ী ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। প্রয়োজনে তার বেতন ভাতা থেকে আদায় করা হবে। তাতেও সম্ভব না হলে কর্মচারীর বিরুদ্ধে পাবলিক ডিমান্ড রিকোভারি এ্যাক্ট ১৯১৩ এর অধীন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অভিযুক্ত কর্মচারী, শাস্তির বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আপীল করতে পারবেন এবং কর্তৃপক্ষ যে রায় দেবেন তা বহাল থাকবে। সেক্ষেত্রে শাস্তি বহাল থাকা বা বাতিল করার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের। বিলে কোন কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার্থে শারীরিক বা অন্য কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ পাবেন। এছাড়া সরকারী কর্মচারীরা অনুদান, সহায়তা, সুদমুক্ত ঋণ এবং অগ্রিম প্রদান সুবিধা পাবেন। সরকারী কর্মচারীর পরিবার বলতে- কর্মচারী পুরুষ হলে স্ত্রী বা স্ত্রীগণ, মহিলা হলে তার স্বামী, কর্মচারীর সঙ্গে বসবাসরত এবং তার ওপর নির্ভরশীল সন্তান সন্তুতিগণ, পিতা-মাতা, দত্তক সন্তান, নাবালগ ভাই, অবিবাহিতা, তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা বোন পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। বিলে আরও বলা হয়েছে, চাকরি বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে, যে কোন কর্মচারী অবসরে যাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করতে পারবেন। একবার লিখিত আবেদন করলেই তা চ‚ড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনভাবে তা আর সংশোধন করা হবে না। ইতোপূর্বে তৈরি করা খসড়ায় অবসরের বয়স নির্ধারণ করা হয় ২০ বছর। চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করার পর পর অবসরে গেলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই কর্মচারী ভবিষ্যত তহবিলে জমা দেয়া চাঁদা, চাঁদারসুদ ছাড়া অন্য কোন সুবিধাদি পাওনা হবেন না। তবে সরকার বিশেষ বিবেচনায় অনুকম্পা হিসেবে অর্থ প্রদান করতে পারবে। অবসর সুবিধাভোগী কোন কর্মকর্তা গুরুতর অপরাধে দন্ডিত হলে বা গুরুতর কোন অসদাচরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে সরকার তার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে স্থগিত বা প্রত্যাহার করতে পারবে। আরও ৫ নতুন বিল উত্থাপন ‌॥ আইন প্রণয়ন কার্যাবলীতে সংসদ অধিবেশনে আরও পাঁচটি নতুন বিল উত্থাপিত হয়েছে। উত্থাপিত বিলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অধিবেশনে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে বিলগুলোর ওপর জনমত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের আনা প্রস্তাবগুলো কন্ডভোটে নাকচ হয়ে যায়। উত্থাপিত বিলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বিল, ২০১৮, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বিল, ২০১৮, বাংলাদেশ (শ্রম) (সংশোধন) বিল, ২০১৮, মৎস্য সঙ্গনিরোধ বিল, ২০১৮ এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিল, ২০১৮। বিলগুলো উত্থাপন করেন যথাক্রমে- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
×