ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের চাকরি পেতে ‘কুমারীত্বে’র পরীক্ষা

প্রকাশিত: ১৮:২১, ২২ অক্টোবর ২০১৮

ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের চাকরি পেতে ‘কুমারীত্বে’র পরীক্ষা

অনলাইন ডেস্ক ॥ ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশে চাকরি পেতে হলে নারীদের কুমারী হতে হবে। শুধু কুমারী নয়, হতে হবে সুন্দরীও। পুলিশে যেসব নারী যোগ দিতে চান তাঁদের ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নামের একটি আদিম ও অপমানজনক পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হবে ওই নারী আসলেই কুমারী কি না। পুলিশ বাহিনীতে নারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিতে নারীদের জন্য কুমারীত্বের পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। আর এটা করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি। বলা হচ্ছে, পুরুষশাসিত সমাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুলিশে চাকরি পেতে হলে নারীদের কুমারী হতে হবে। শর্তে শুধু কুমারী হলেই চলবে না, হতে হবে সুন্দরীও। ইন্টারনেটে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে। আর তখনই শুরু হয়েছে সমালোচনা। এসব পরীক্ষার কারণে এটিকে নৈতিকতাবিরোধী শারীরিক পরীক্ষা বলা হচ্ছে। পুলিশে যেসব নারী যোগ দিতে চান, তাদের ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নামের একটি আদিম ও অপমানজনক পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হবে ওই নারী প্রকৃতই কুমারী কি না। ইন্দোনেশিয়ার এমন সিদ্ধান্তে নড়েচড়ে বসেছে তাবৎ বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মুখপাত্র আন্দ্রে হারসোন জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ বাহিনী মনে করছে, সক্রিয় যৌন জীবন আছে, এমন কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। এটা নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় অন্যতম বাধা। জাকিয়া নামে ইন্দোনেশিয়ার এক নারী (পরিচয় গোপন রাখার জন্য তাঁর শেষ নামটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি) হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, তিনি এ বছরের শুরুতে পুলিশ অফিসার হওয়ার জন্য ওই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। জাকিয়ার দাবি, তার কুমারীত্বের পরীক্ষা কোনো চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত হয়নি। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা... অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। আমি কাঁদছিলাম ... প্রতিটি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমি আর বাঁচতে চাই না।’ জাকিয়া ছিলেন ক্রীড়াবিদ। এই মার্শাল আর্ট ক্রীড়াবিদ জানিয়েছেন বহু বছর ধরে তাঁকে অনেক ব্যায়াম করতে হয়েছিল, ‘আমার মা আমাকে এটা নিয়ে চিন্তা না করার জন্য বলেছিলেন...। আমি পুলিশ কর্মকর্তাদের নেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছি যে পরীক্ষার কারণে আমি ব্যথা অনুভব করছি। এরপর আমার সাক্ষাৎকার শেষ হয়ে যায়।’ উল্লেখ্য, এর আগে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে বিশ্বজুড়ে। অনেকেই এই পরীক্ষাকে অপমানজনক ও অবৈজ্ঞানিক বলে বর্ণনা করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এভাবে পরীক্ষা করা কোনো নারীর জন্য যৌন হেনস্তার শামিল। ২৭ বছর বয়সী আনিসা পুলিশ বাহিনীতে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে এ পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া উচিত। পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি। এর ফলে আমরা অন্যদের (মানুষ) সুরক্ষা দিতে সক্ষম।’ আন্দ্রে হারসোনও বলেন, পুলিশ বাহিনীতে নারী কর্মী নিয়োগের এই ব্যবস্থাটি ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীতেও ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ পরীক্ষা যাঁদের দিয়ে হয় তাঁদের ৭০ শতাংশ চিকিৎসকই পুরুষ। তথ্যসূত্র: নিউজউইক ও এবিসি নিউজ।
×