ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চকরিয়ায় সেলো মেশিন বসিয়ে চলছে জলাধার ভরাটের মহোৎসব

প্রকাশিত: ০০:০৬, ২২ অক্টোবর ২০১৮

চকরিয়ায় সেলো মেশিন বসিয়ে চলছে জলাধার ভরাটের মহোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ার উপকুলীয় এলাকা বদরখালীতে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে সেলো মেশিন বসিয়ে জলাধার ভরাটের মহোৎসব চলছে। মেশিন বসিয়ে সাগর চ্যানেলের তলদেশ থেকে উত্তোলন করা কাদামাটি পাইপের মাধ্যমে জলাধারে ফেলা হচ্ছে। এতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র। ভরাটের পর সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতি। অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাটের ফলে ওই এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা চরম হুমকিতে পড়ছে। জলাধার ভরাট হলে বর্ষাকালে পানি চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সম্ভাবণা রয়েছে। এতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সঙ্গে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল। জলাধার ভরাটের পর বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দখাতে বড় ধরণের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় পরিবেশ বিধ্বংসী একাজে নেপথ্য ভুমিকায় রয়েছেন বদরখালী সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার ও সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী। তাঁরা পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিব্যি এ অপর্কমটি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য পরিবেশ আইন লঙ্ঘনে জলাধার ভরাটের প্রস্তুতি নেয়ার আগমুহুর্তে গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ বিষয়টির আলোকে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বদরখালী সমিতির সভ্য ও স্থানীয় পরিবেশ সচেতন নাগরিক মো: রিদুয়ানুল হক। অভিযোগটি দাখিল করার পর একমাস সময় অতিবাহিত হলেও অদ্যাবদি পরিবেশ অধিদফতর রহস্যজনক কারণে কার্যকর কোন ধরণের প্রদক্ষেপ নেয়নি। পরিবেশ অধিদফতরের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। বদরখালী সমিতির সভ্যরা জানিয়েছেন, সমিতির মালিকানাধীন বাজারের পশ্চিম অংশে শতবছরের পুরনো একাধিক গর্ত (বর্ধিত খাই জায়গা) রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এসব গর্তে অন্তত ২০ একরের মতো জায়গা আছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে বাজারের বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পশ্চিম অংশের ওই গর্ত গুলোতে জমাট হয়। ক্রমান্নয়ে তা পশ্চিম অংশের সাগর চ্যানেলে নেমে যায়। ফলে বাজার ও আশপাশ এলাকা জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত থাকে। সমিতির সভ্যদের মতে, বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে জমাটের পাশাপাশি সমিতির পক্ষ থেকে খাই গর্তের উল্লেখিত পরিমাণ জায়গা প্রতিবছর নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ডাককারীকে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে উল্লেখিত পরিমাণ খাই গর্তের জায়গা দুইবছর (২০১৮ ও ১৯ সালের জন্য) মেয়াদে ১৬ লাখ ১০ টাকা সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে সমিতির সভ্য বদিউল আলম মানিক নামে একজনকে ইজারা দেয়া হয়েছে। ডাককারী মানিক সেই সময় সমিতির কাছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা রিসিভমুলে পরিশোধ করে যথারীতি মৎস্য চাষও শুরু করেছেন। সর্বোচ্চ ডাককারী ইজারাদার বদিউল আলম মানিক বলেন, দুইবছর মেয়াদে আমি উল্লেখিত খাই গর্তের জায়গা সমুহ মৎস্য চাষের জন্য সমিতির কাছ থেকে ইজারা নিই। প্রথমবছর আমি সমিতির কাছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করে চাষও শুরু করি। এখনও মেয়াদ শেষ হতে একবছর দুইমাস সময় অবশিষ্ট আছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ইজারা মেয়াদ বাকি আছে। কিন্তু এখন দেখি আমার মৎস্য চাষের ওই খাই গর্তের জায়গায় সেলো মেশিন বসিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বিষয়টি সমিতির সভাপতি সম্পাদকের কাছে জানানোর পরও কোন ধরণের প্রতিকার পাইনি। বদরখালী সমিতির মালিকানাধীণ শতবছরের পুরনো খাই গর্তের জলাধার ভরাটের ঘটনায় ইতোমধ্যে সমিতির সভ্য রিদুয়ানুল হক কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বদরখালী সমিতির একাধিক সভ্য ও পোষ্যরা অভিযোগ তুলেছেন, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাজারের পশ্চিম অংশে সাগর চ্যানেলে সেলো মেশিন বসিয়ে পরিবেশের সুরক্ষা নিধনের মাধ্যমে জলাধার ভরাটের কাজটি শুরু করেছেন সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার ও সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরীসহ একটি চক্র। মুলত ভরাটের পর ওই জায়গায় বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দখাতে বড় ধরণের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তারা পরিবেশ বিধ্বংসী একাজের নেপথ্যে নাটের গুরুর ভুমিকায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে জলাধার ভরাটে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই চক্র। বদরখালী সমিতির জলাধার ভরাটের ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের পরির্দশক মো: মুমিনুল হক বলেন, জলাধার ভরাটের ঘটনায় বদরখালী সমিতির সভাপতি সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রিদুয়ানুল হক নামে একজন লিখিত অভিযোগ করেছেন। জনবল সল্পতা আবার দাফতরিক বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে অভিযোগটি যথাসময়ে ফলোআপ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আশাকরি চলতি সপ্তাহেই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করব। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পরিবেশ অধিদফতর। চকরিয়া থানার ওসি বলেন, জলাধার ভরাটের মাধ্যমে পরিবেশের সুরক্ষা নিধনের ঘটনায় আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও বিষয়টি যেহেতু জনস্বার্থে তাই পরিবেশ অধিদফতর চাইলে থানা পুলিশ অভিযানকালীন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। জলাধার ভরাটের অভিযোগ অস্বীকার করে বদরখালী সমিতির সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী বলেন, যেখানে মাটি ফেলা হচ্ছে মুলত ওই জায়গাটি অনেক আগের ভরাট জায়গা। ওখানে কোন ধরণের জলাধার নেই। তবে বাজারের গড়িয়ে পড়া ময়লা পানি জমে জায়গার কিছু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সমিতির উন্নয়ন ও সভ্যদের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা পতিত এই জায়গাটির সংস্কার করছি।
×