ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্রীজ আছে রাস্তা নেই দুর্ভোগে ৩৫ হাজার গ্রামবাসী

প্রকাশিত: ০২:১৮, ২২ অক্টোবর ২০১৮

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্রীজ আছে রাস্তা নেই দুর্ভোগে ৩৫ হাজার গ্রামবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ীহাট এলাকায় একটি ব্রীজ নির্মাণের সাত মাস অতিবাহিত হলেও তার দুই পার্শ্বে মাটি ভরাট না করার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ। জেলার ঐতিহ্যবাহী হাট লাহিড়ী বাজারে যেতে ব্রীজের মরণফাঁদ অতিক্রম করতে হচ্ছে উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের পরদেশীপাড়া, ভোটপাড়া, ঝাঁড়গাঁও, খেকিডাঙ্গা, গুঞ্জরা হাট, আখানগর, পতিলাভাষা সহ আশপাশের প্রায় ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষকে। ব্রীজ পারাপার হওয়ার সময় ইতোমধ্যে দুজনের হাত ও একজনের পা ভেঙ্গে গেছে। এলাকাবাসী জানান, আশপাশের পায় ৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ লাহিড়ী হাট যাতায়াতের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভোটপাড়া গ্রামের রাস্তায় একটি ব্রীজ। রাস্তা ভেঙ্গে পানিতে ভেসে যাওয়ায় ব্রীজের অভাবে বর্ষার সময় জেলার ঐহিত্যবাহী লাহিড়ী হাটে যাতায়াতে চরম অসুবিধায় পড়তে হতো পথচারীদের। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, গত বছর প্রায় দুই কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ভোটপাড়া দিয়ে লাহিড়ী যাওয়ার রাস্তায় ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু হয়। রামবাবু কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ করে। ব্রীজ নির্মাণের পর ব্রীজের দুইপার্শ্বের রাস্তায় মাটি ভরাট করা হয়নি। চলাচলের জন্য বিকল্প কোন রাস্তা না থাকার কারণে ব্রীজ পারাপার হওয়ার জন্য উভয় পার্শ্বে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সিঁড়ি তৈরী করে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। সেই বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে প্রতিদিন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণিপেশার প্রায় ৪-৫ হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাইকেল কাধে নিয়ে পারাপার হচ্ছে। গত ৭ দিনে দু’জনের হাত ও একজনের পা ভেঙ্গেছে বলে জানা গেছে। ব্রীজ দিয়ে সাইকেল কাধে নিয়ে পার হওয়ার সময় হাত ভেঙ্গে যাওয়া পতিলাভাষা গ্রামের সমশের আলী জানান, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। এর আগেও দুইদিন পড়ে গিয়েছিলাম। ঔষধপত্র সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেছেন দুইমাস। আমার সংসার নিয়ে এখন কষ্টে আছি। ছাগল ব্যবসায়ী আখানগর গ্রামের মকবুল হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে জানান, আগে ব্রীজ ছিল না, দু-চারদিন পানিতে কাপড় ভিজে গেলেও তেমন কোনো সমস্যা হতো না। এখন ব্রীজ নির্মাণের পর কাধে বাইসাইকেল নিয়ে মরণফাঁদ পার হচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। আশার আলো কিন্ডার গার্টেনে পড়ুয়া ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী রতন চন্দ্র বলেন, ৫-৬ জন বন্ধু ছাড়া আমরা ব্রীজের সিড়ি দিয়ে সাইকেল পারাপার করতে পারি না। সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ ব্রীজটির দুইপাশে যেন দ্রুত মাটি ভরাট করে দিয়ে আমাদের স্কুলে যাতায়াত সুবিধা করে দেন। ওই এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবুল কাসেম জানান, আওয়ামীলীগ সরকার উন্নয়ন এলাকায় হচ্ছে ব্যাপক হারে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম, অবহেলা এবং সরকারী কর্মকর্তাদের উদাসীনতা বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্থ করছে। চাড়োল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলিপ কুমার চ্যাটার্জী বলেন, গত কয়েকমাস ধরে স্থানীয় লোকজন পরিষদে এসে দুর্ভোগের কথা বলেছে। আমি নিজেও ব্রীজটির অবস্থা দেখেছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে একাধিকবার অবগত করার পরেও জানিনা কি কারণে মাটি ভরাট কাজটি হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই ইউয়িনের এক ইউপি সদস্য বলেন, মাটি ভরাট কাজের টাকা নিয়ে স্থানীয় প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও স্থানীয় ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিলে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি মীমাংসা এখনও হয়নি তাই মাটি ভরাট কাজ বন্ধ। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম বলেন, মাটি ভরাট কাজটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রামবাবু স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। একপার্শ্বে একটু মাটি ভরাট করার পর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব শ্রীঘ্রই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের দিন শেষ হবে।
×