ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নোয়াখালীতে তিন আসনে শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ, অন্যগুলোয় হাড্ডাহাড্ডি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

নোয়াখালীতে তিন আসনে শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ, অন্যগুলোয় হাড্ডাহাড্ডি

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর ফল আগাম অনুমান করা কঠিন। অতীতে জেলার প্রায় সব আসনে বিএনপির অবস্থান ছিল শক্তিশালী। বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের তুলনায় অনেক এগিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে এবং সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থান মজবুত। অপর তিনটি আসনে হবে হাডাহাড্ডি লড়াই। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় ছয়টি আসনেই জয়লাভ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনটিতে বিএনপি, দুটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় মহাজোট এবং বিএনপি তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশগ্রহণ করলে ফল হবে মিশ্র। জেলার ছয়টি আসন ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ দারুণ সক্রিয়। বিএনপি চায় হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে। জেলার ছয়টি আসনে প্রার্থী হতে নেতারা দীর্ঘদিন থেকে মাঠে নেমে পড়েছেন। এক সময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত নোয়াখালীর আসনগুলোতে এবারও জয়ী হওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। জেলার ছয়টি নির্বাচনী আসনে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী আংশিক) ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় মহাজোট ও বিএনপি তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠছে নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঘন ঘন এলাকা সফর করে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করে চলেছেন। পুরো নির্বাচনী এলাকা, তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। এতে সর্বত্র নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। বিএনপি তথা নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় আপাতত একক প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগে কে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য এইচএম ইব্রাহিম ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ আসনে বিগত নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিন্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হবেন এটি অনেকটাই নিশ্চিত। সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল নেতাকর্মীর আইনী সহযোগিতা ছাড়াও তার নির্বাচনী এলাকায় এসে নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এসএ টিভির ব্যবস্থপনা পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদের। অপরদিকে জাসদের মনির হোসেন, প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ সুমন ও চাটখিল উপজেলা জাসদ সভাপতি অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বেশ সক্রিয়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে নির্বাচনী এলাকার আনাচেকানাচে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রচার সবচেয়ে বেশি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিশিষ্ট শিল্পপতি বেঙ্গল গ্রুপ ও বেসরকারী টেলিভিশন আরটিভি চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। গত প্রায় দশ বছরে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে এলাকার নানা উন্নয়ন কর্মকা-ে এখানে দলের জনসমর্থন অনেক বেড়েছে। এদিক থেকে এখানে আওয়ামী লীগ পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল অবস্থানে আছে। এই আসনে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রার্থী ও কর্মীরাও মাঠে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে তিন প্রভাবশালী নেতা বর্তমানে মাঠে কাজ করছেন। তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মোঃ আতাউর রহমান ভুইয়া মানিক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ এফসিএ। এই আসনে বিএনপি তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হবেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিগত ৪ বারের সংসদ সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক। এক সময় এখানে বিএনপির নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মফিজুর রহমানসহ কিছু নেতাকর্মী বিগত সময়ে ফারুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তারা এখন কোনঠাসা। অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মঞ্জু প্রার্থী হবেন। নির্বাচন করার জন্য তিনি এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করছেন। এ ছাড়া ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান এলাকাতে গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করছেন। নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সব দলের নেতাকর্মী। বিশেষ করে সরকারী দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন গ্লোব গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ মামুনুর রশিদ কিরণ। বিগত সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও বেগমগঞ্জে দৃশত কোন উন্নয়ন হয়নি। নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সংবলিত রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। প্রকাশ্যে গণসংযোগ, মতবিনিময়, সভা ও উঠোন বৈঠক করছে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা । একাদশ নির্বাচনে আওয়াম লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক বিশিষ্ট শিল্পপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনায়েত উল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আকতার হোসেন ফয়সল। এই আসনে বরকত উল্লাহ বুলুই বিএনপি তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন এটাই অনেকটা নিশ্চিত। যদি মামলাজনিত কারণে তিনি প্রার্থী হতে না পারেন সেক্ষেত্রে তার সহধর্মিণী শামিমা বরকত লাকী প্রার্থী হতে পারেন। এর পাশাপাশি বর্তমান বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য ও নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট আবদুর রহিম মনোনয়ন পেতে পারেন। অপরদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য ও বেগমগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ফজলে এলাহী সোহাগ মিঞা মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। জাসদ থেকে সাবেক দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জাসদ (রব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আবদুল জলিল চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) ॥ এই আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পর পর দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি নোয়াখালী জেলা শহরসহ পুরো তার নির্বাচনী এলাকাকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত করে অনন্য নজির গড়েন। ফলশ্রুতিতে এ আসনে এখন আওয়ামী লীগের জোয়ার বইছে। জেলা শহরে এই আসনের প্রভাবে পুরো জেলার রাজনীতি অনেকটা সরকারী দলের আওতায় চলে গেছে। অপরদিকে এক সময় জেলা বিএনপির সভাপতি পরবর্তিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান একজন ভাল-সফল সংগঠক হলেও জেলার রাজনীতিতে সময় দিতে না পারায় পাশাপাশি দলের মধ্যে জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদের সঙ্গে মতদ্বৈধতার কারণে এখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভক্ত। প্রথমবারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবার পর একরামুল করিম চৌধুরী প্রতিটি পাড়া, মহল্লা, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দুর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে গিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। একই সঙ্গে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও প্রাণ ফিরে পায়। দল গঠনের পাশাপাশি নিজেই তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে দলের অবস্থান দৃঢ় করেন। এই আসনে বিএনপির তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান। বিএনপির প্রতিষ্ঠা থেকে দলের সঙ্গে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ শাহজাহান। কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ সর্বশেষ সম্মেলন পর্যন্ত তিনি দলের জেলার দায়িত্বভার পালন করেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নোয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিও আগাম নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে। তবে দলটির নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত থাকায় প্রচার চালাচ্ছে অনেকটা ধীরগতিতে এবং গোপনে। জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রায় সবাই অসংখ্য বিভিন্ন মামলার আসামি থাকায় তারা প্রকাশ্যে কাজ করতে পারেন না। এখন পর্যন্ত বিএনপির তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে রয়েছেন মোঃ শাহজাহান। অপরদিকে, এই আসনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম তেমন নেই। এদের মধ্যে জাসদ ইনু থেকে নির্বাচনে নোয়াখারী-৪ থেকে জেলা জাসদের সাবেক সভাপতি এক সময়ের ছাত্রনেতা নুর আলম চৌধুরী পারভেজ দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে এখানে মনোনয়ন পেতে পারেন জাপা নেতা মোবারক হোসেন আজাদ। নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট) ॥ এ আসনটি জেলার ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। আসনটির জয়-পরাজয়ের দিকে চেয়ে আছে জাতীয় আন্তর্জাতিক মহল। এ আসনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় মহাজোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান সরকারের সফল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অপরদিকে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক আইনমন্ত্রী বিএনপি তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালী -৫ আসনে এ দুজনই দু’দল তথা জোট থেকে লড়বেন এটি নিশ্চিত করে বলা যায় । ফলে এখানে অন্য কোন প্রার্থী বা দলের তেমন কর্মকা- নেই। দুই দলের সেরা দুই নেতার প্রাণবন্ত লড়াই দেখার অপেক্ষা করছে নোয়াখালী-৫ আসনের জনগণসহ সারা দেশের আপামর মানুষ। আগামী একাদশ নির্বাচন সামনে রেখে দুদলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে, তারা বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, বৈঠক করে তাদের সমর্থকদের উজ্জীবিত করছেন। ওবায়দুল কাদের বর্তমান সরকারের আমলে কোম্পানীগঞ্জের উপকূলীয় এলাকায় নদীভাঙ্গন রোধে ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুছাপুর ক্লোজার প্রকল্প বাস্তবায়ন, ৩২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালী জেলার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়ক ও সেতু প্রকল্প, নোয়াখালী খাল পুনঃখনন বাস্তবায়নসহ বড় বড় কাজের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক কাজ করায় ওবায়দুল কাদের এই আসনে নিজেকে ভাল অবস্থানে নিয়ে গেছেন বলে তার সমর্থকরা মনে করেন। এছাড়া পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন সড়কের মতো বড় বড় প্রকল্প ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হওয়ায় সাধারণ মানুষ মনে করে, এলাকার উন্নয়নে তিনিই উপযুক্ত। অপরদিকে বিএনপি তথা নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনে করে বিগত সময়ে মওদুদ ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনিও এলাকায় রাস্তাঘাট, অবকাঠামো উন্নয়ন, বেকারদের পুর্নবাসন করার পাশাপাশি এই এলাকাটি বিএনপির পাশপাশি জামায়াতের যথেষ্ট ভোট রয়েছে, তাই তারা তাদের আসন ফিরে পাবে। নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) ॥ মেঘনাবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নোয়াখালী-৬ আসন। একাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এ দ্বীপে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তৎপরতা শুরু করেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রার্থীর ব্যানার, পোস্টার হাতিয়া দ্বীপের বিভিন্ন বাজার- ঘাটসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে শোভা পাচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে হাতিয়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, বিশিষ্ট শিল্পপতি হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনিযুক্ত সহসভাপতি মাহমুদ আলী রাতুল এবং ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। বিএনপি থেকে এ আসনে মাঠ পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নেতা তেমন নেই। এদিকে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা কমিটির সহসভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। হাতিয়ায় বিএনপি দলীয় কর্মকা-ে তার উপস্থিতি লক্ষণীয়। হাতিয়া উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপি কমিটি গঠিত হয়েছে। একসময় স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লেও বর্তমানে অনেকটা শক্তিশালী বলে তৃণমূল পর্যায়ে জানা গেছে।
×