ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী সপ্তাহে বাজারে আসছে আইসিবির ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

আগামী সপ্তাহে বাজারে আসছে আইসিবির ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলমান শেয়ারবাজারে পতনের পেছনে যৌক্তিক কোন কারন খুঁজে পায়নি শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা। তবে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। যাতে বিনিয়োগকারীরা ভয়ে লোকসানেও শেয়ার বিক্রয় করে দিচ্ছেন। এর ফলে শেয়ারবাজারে পতন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সহায়তা করতে বন্ডের ২ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি)। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে আইসিবিতে স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শেয়ারবাজারে পতন হচ্ছে। এই সময়ে মূল্যসূচক কমেছে সাড়ে ৩০০ পয়েন্ট। তবে গত ২ কার্যদিবসে সেই পতন বড় আকার ধারন করেছে। ওই ২ কার্যদিবসে মূল্যসূচক কমেছে ১৩০ পয়েন্ট। আর সেপ্টেম্বরের ৬৩৩ কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে ৪৩৫ কোটিতে নেমে এসেছে। এই পতনের কারন খুঁজতে আইসিবিতে স্টেকহোল্ডাররা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আইসিবির এমডি কাজী সানাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েকদিনের বাজারে পতন নিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পতনের কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই পতনে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা বাজার নিয়ে আশাবাদি। সামনে শেয়ারবাজার ভালো হবে। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের স্বার্থে বন্ডে ইস্যু করা ২ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই এই বাজারে বিনিয়োগ করার কথা চিন্তা করছি। যদিও দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া চীনা কনসোর্টিয়ামের টাকাটা দ্রুত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে। বাজারের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করার জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন কাজী সানাউল হক। শেয়ারবাজারের যেসব বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয় না বা হয়নি, সেগুলো নিয়ে এই কমিটি কাজ করবে। অনেকটা সমন্বয় কমিটির মতো। বিএসইসি এই কমিটি গঠন করে দেবে। বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে এমন কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, যার কারনে শেয়ারবাজারে পতন হতে পারে। ৫ বছর পরপর নির্বাচন হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তিনি বলেন, বাজারকে তারল্য সংকট থেকে উত্তোলনে আইসিবিকে ২ হাজার কোটি টাকার ফান্ড দেওয়া হয়েছে। এই ফান্ডের টাকার আগামী সাপ্তাহে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে। পাশাপাশি চীনা কনসোটিয়ামের সাড়ে ৯শ কোটি টাকার ১০ শতাংশ গেইন ট্যাক্স ছাড়ের প্রজ্ঞাপন আগামী সপ্তাহে হবে। ফলে এই টাকাও আগামী সপ্তাহের পর থেকে বাজারে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক রয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এমডি কেএএম মাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, যে কোনো দেশের নির্বাচনের আগে কিছু কিছু বিনিয়োগকারীরা সর্তকতা অবলম্বন করে। এ কারণে আমাদের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এখন কম। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, ভারত, চীন, শ্রীলংকাসহ প্রায় সব দেশেই হয়। ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, অতিতে রাজনৈতিক কারণে শেয়ারবাজারের কোন সমস্যা হয়নি। আর আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে শেয়ারবাজারে পতন হচ্ছে এটা ঠিক না। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। যেটা স্বল্পমেয়াদি। চীনা কনসোর্টিয়ামের থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্রুত বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর আহমেদ। যা বিনিয়োগে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর বিনিয়োগকারীদেরকে স্বল্প মেয়াদির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করার তাগিদ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) প্রাপ্য শেয়ার শুরুতেই বিক্রয় না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নূর আহমেদ বলেন, সরকারি বিভিন্ন পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আইসিবির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন। তাহলে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সীমা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য বলা হয়েছে।
×