ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি

প্রকাশিত: ০০:১৮, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী, হেফাজতে ইসলাম, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। একই সঙ্গে আদালত থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করতে না পারে সে আবেদনও তারা জানিয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে তাঁর নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। পরে সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘জামায়াতকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি জামাতিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো আইনগত বাধা নেই। সেই জন্য তাদের পক্ষে এটা সুবিধা। আমরা আমাদের পজিশন ব্যাখ্যা করেছি। এ ব্যাপারে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না, সেটা আমরা দেখব। আরেকটি জরুরি বিষয় যেটা আমরা তুলেছি, কোনো কোনো দল যারা দাবি করছে, নির্বাচনে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে হবে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করবার কোনো সুযোগ নেই।’ শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, জঙ্গী, সন্ত্রাসী সংগঠনও যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামও যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তারা যে সন্ত্রাসী সংগঠন- তা আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারব।’ বিদ্যামান আইন অনুযায়ীই নিষিদ্ধ রাজনৈতিক কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে, স্বতন্ত্র বা জোটগতভাবে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাতে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার ইসির নেই বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনে যেহেতু তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না, রাজনৈতিক দল হিসেবে তাঁরা যাতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁরা যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে বিষয়ে তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটা বলেছেন যে, এটা আইনের বিষয়। এটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উনারা দেখবেন এবং উনারা আরো বলেছেন যে, বিদ্যমান যে আইন আছে, ওই আইনের মধ্য থেকেই তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তখন মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটা বললেন যে, এগুলো আমাদের অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, আইনকানুন যেগুলো আছে, বিদ্যমান, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরে তাদের অবহিত করা হবে। ’ এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন যে, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি তো কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তাঁরা এমন দাবি করতে পারে কি না? জবাবে ইসি সচিব বলেন,‘যেকোনো সংগঠন আলোচনার জন্য সময় চাইলে, সিইসি সময় দিলে, আলোচনা করা যেতে পারে। তারাও তো ভোটার। ভোটাররাও তো আমাদের স্টেকহোল্ডার।’এ ছাড়া আজকে ইসির কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঝুঁকিপূর্ণ সবচ নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হুমকি প্রদানকারীদের শাস্তির আওতায় আনা, জামায়াতের অনুসারীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলকে ঘোষণা করতে হবে যে, তাদের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই, নির্বাচনের সময় মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানবিরোধী এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্য, যারা সর্বোচ্চ আদালতের রায় অগ্রাহ্য করছে তাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা এবং সেনাবাহিনীকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করলে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে, তাই নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করা।
×