ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুরা রোগের টিকা

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

খুরা রোগের টিকা

এবার গবাদিপশুর খুরা রোগ প্রতিরোধে টিকা তথা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ্য, দেশের গো সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম একটি প্রতিবন্ধক এই খুরা রোগ। বৃষ্টি-বন্যা-জল-কাদা অধ্যুষিত একটি দেশে স্বভাবতই গবাদিপশুর খুর সংক্রমিত হয় ভাইরাসে। যে কারণে পশুটি আক্রান্ত হয় এ রোগে এবং তীব্র সংক্রমণে মারাও যায়। এই রোগের কারণে দেশে প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ ১২৫ মিলিয়ন ডলার। এতদিন এ রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আমদানি করে মেটাতে হতো অভ্যন্তরীণ চাহিদা। আমদানিকৃত প্রতিটি ভ্যাকসিনের দাম পড়ে কমপক্ষে ১২০ টাকা। যথাসময় তা পাওয়াও যায় না। টিকার উচ্চ মূল্যের কারণে খামারিরাও উৎসাহিত হন না গবাদিপশুকে টিকা দিতে। এখন দেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের দাম পড়বে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। ফলে স্বভাবতই সাশ্রয় হবে খামারিসহ দরিদ্র কৃষকদের। তদুপরি খুরা রোগের যে তিনটি ভাইরাসের সেরোটাইপ বাংলাদেশে বিদ্যমান তা প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক হবে দেশীয় ভ্যাকসিন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ জনের একটি গবেষক দল এই টিকা আবিষ্কারে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। তাদের এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প। যা হোক, স্বদেশেই এই টিকা আবিষ্কার ও উৎপাদনের ফলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি গবাদিপশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ থেকে উপজাত আহরণের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে নিঃসন্দেহে। যেমন সাফল্য অর্জিত হয়েছে পাট, ইলিশ মাছ প্রভৃতির জেনোম তথা জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে। খুরা রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন উৎপাদন এ রকম একটি অগ্রগতি। সত্য বটে, দেশে বর্তমানে রাজধানীসহ প্রায় সর্বত্র ছোট-বড় গবাদিপশুর খামার গড়ে উঠেছে। এসব স্থানে দুধেল গরু ও কোরবানির পশুও প্রতিপালিত হচ্ছে। এবারের ঈদ-উল-আযহায় এর সম্যক প্রমাণ মিলেছে। কোরবানির হাটবাজারে দেশীয় গবাদিপশুর সমারোহ ছিল চোখে পড়ার মতো। চাহিদার তুলনায় আমদানিও হয়েছে প্রচুর। দেশীয় গরুর কাছে এমনকি মার খেয়েছে ভারত ও মিয়ানমারের গরু। এ সবই আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার অবদান। ইতোমধ্যে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশও হয়েছে বিস্তর। হাঁস-মুরগি-ডিমের ব্যাপক চাহিদা মেটানো হচ্ছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প থেকেই। তবু এসব ক্ষেত্রে আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর সংক্রমণরোধে আধুনিক প্রযুক্তি চালুসহ রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন, ওষুধ ও সুষম পশুখাদ্য উৎপাদন এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বিজ্ঞানীদের সে জন্য নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। সরকারকেও গবেষণার নিমিত্ত ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মাছ, দুধ-মাংস-ডিম জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনের বিপুল ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পটি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গণমুখী। মূলত, এর মাধ্যমেই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও সুষম খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। এ জন্য ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। বরং চাই সুষ্ঠু, সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আধুনিক সমবায় প্রথাও সংযুক্ত হতে পারে। এর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কৃষি ও খামার ব্যবস্থাপনায় কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানীদের সম্পৃক্ত করা বাঞ্ছনীয়।
×