ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন সিনেটের নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

মার্কিন সিনেটের নিয়ন্ত্রণ

আগামী নবেম্বরে আমেরিকার মধ্যমেয়াদী নির্বাচনে ফ্লোরিডার দুই মেয়াদের গবর্নর রিপাবলিকান রিক স্কট এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তিন মেয়াদের সিনেটর বিল নেলসনের মধ্যে লড়াইয়ে কে জিতবেন কে হারবেন তার দ্বারাই নির্ধারিত হতে পারে কোন্ দল সিনেট নিয়ন্ত্রণ করবে। দুই দলই বিশ্বাস করে যে রাজ্যের জনগোষ্ঠীর ২৫ শতাংশ এবং নিবন্ধিত ভোটারদের ১৭ শতাংশ হিসপ্যানিক ভোটারদের পক্ষে টানতে কে বেশি সাফল্যের পরিচয় দেয় তার ওপর নির্ভর করতে পারে ভোটের ফলাফল। বিশেষজ্ঞদের মতে এদিক দিয়ে নেলসনের অবস্থান সুবিধাজনক হওয়ার কথা। কারণ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভোটিং কোয়ালিশনে হিসপ্যানিক ভোটারদের নিয়মিত হিসেবে নেয়া হয়। তাছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈধ ও অবৈধ নির্বিশেষে অভিবাসীদের প্রতি বৈরী ব্যবস্থা নিয়ে দেশের ৫ কোটি ৮০ লাখ ল্যাটিনোর অনেকের কাছেই বিরাগভাজন হয়েছেন। সেটা জেনে-বুঝেই রিক স্কট হিসপ্যানিকদের মধ্যে সমর্থন গড়ে তোলার জন্য রাতদিন খেটে চলেছেন। সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে প্রকাশিত দুটো জরিপে দেখা যায় হিসপ্যানিকদের মধ্যে তাঁর জনসমর্থন দুই ডিজিট বেড়েছে। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের শেষদিকে তিনটি জরিপে দেখা যায় যে নেলসন দুই ডিজিট এগিয়ে আছেন। অর্থাৎ দুই প্রার্থীর মধ্যে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে স্কট ফ্লোরিডাজুড়ে ল্যাটিনো সম্প্রদায়গুলোতে, বিশেষ করে পুয়ের্টো রিকোর ভোটারদের মধ্যে নেলসনকে যে কোনভাবে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ এসব জনগোষ্ঠীর ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ভোট দেয়ার একটা প্রবণতা আছে। এখন স্কট তাদের ভোট বাগাতে চাইছেন। এক বছর আগে হ্যারিকেন মারিয়ার হিং¯্র ছোবলে পুয়োর্টো রিকো তছনছ হওয়ার পর থেকে নেলসন যেখানে গেছেন তিনবার সেখানে স্কট গিয়েছেন ৮ বার। তিনি অরল্যান্ডো ও মায়ামি এয়ারপোর্টে নবাগতদের সাহায্যার্থে অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপনের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিদিন তার এক সহকর্মীর কাছ থেকে স্প্যানিশ ভাষা শিখছেন। বলাবাহুল্য রাজ্যের ২০ শতাংশ ভোটার স্প্যানিশ ভাষী। তার এসব কর্মকা-ের পরিণতিতে পুয়ের্টো রিকোর মানুষদের মধ্যে স্কটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। উপরন্তু হিসপ্যানিকদের প্রতি তার এ জাতীয় শুভেচ্ছার হাত বাড়িয়ে দেয়া থেকে নতুন এক প্রবণতার আঁচ পাওয়া যেতে পারে যার পরিণতিতে সিনেট হয়ত রিপাবলিকানদের হাতেই থেকে যাবে। এ্যারিজোনা, নেভাদা এমনকি হয়ত টেক্সাসসহ অন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যেও ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীরা হিসপ্যানিক ভোট পাওয়ার ব্যাপারে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দু’বছর আগে হিসপ্যানিকদের মধ্যে দলটির অবস্থান যা ছিল তা থেকে এখন পিছিয়ে আছে। এটা ঠিক যে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি ও তাদের প্রতি তার নানা ধরনের বৈরী কথাবার্তায় ৭২ শতাংশ ল্যাটিনো ভোটার তার ওপর বিরক্ত ও বিরূপ। কিন্তু সারা যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে রিপাবলিকান প্রার্থীরা ভোটারদের ট্রাম্প সম্পর্কিত এই নেতিবাচক মনোভাব কাটিয়ে তোলার জন্য হিসপ্যানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে জোরেশোরে প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন। বিশেষ করে ফ্লোরিডায় রিক স্কটের প্রচারাভিযান চোখে পড়ার মতো। এদের ভোট কে টানতে পারবেনÑ স্কট না নেলসন তার ওপর নির্ভর করছে ফ্লোরিডায় কে জয় পাচ্ছেন আর ফ্লোরিডায় কে জয়ী হচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করতে পারে সিনেট কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেÑ রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাটদের। হিসপ্যানিকদের মধ্যে রিক স্কট যে বেশ খাটাখাটি করছেন এতে তাদের মধ্যে তাঁর জনসমর্থন যে কিছু বেড়েছে সে সম্পর্কে নেলসনও অবগত। তিনি জানেন যে, পরিবেশ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও শিক্ষা এই তিনটি ইস্যুই ভোটারদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই তিন ইস্যুতে তাদের মন জয় করতে পারলে সিনেট নির্বাচনেও জয় অবধারিত। তাই এসব ইস্যু নিয়ে তাকেও প্রচুর খাটাখাটনি করতে হবে। এদিকে মায়ামির প্রথম পুয়ের্টো রিকান মেয়র মরিস ফেরে স্বাস্থ্য পরিচর্যা, কর্মসংস্থান ও আবাসনের ওপর দৃষ্টি দিয়ে নেলসনকে প্রচারাভিযান চালাতে পরামর্শ দিয়েছেন। অপরদিকে কোটি কোটি ডলারের নেতিবাচক টিভি বিজ্ঞাপন সহ্য করার পর ডেমোক্র্যাটরাও এখন পাল্টা আঘাত হানার জন্য তৈরি হচ্ছে। এক ডেমোক্র্যাট প্রচার ম্যানেজার বলেছেন, নেলসনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র স্কট ও ট্রাম্প পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ট্রাম্প মার্কিন অভিবাসী সমাজের কাছে একটা অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই নন। তবে স্কট ও ট্রাম্প পরস্পরের বন্ধু হলেও গবর্নর কিছু কিছু ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। ট্রাম্প যেখানে বলেছেন হ্যারিকেন ম্যারিনায় কত লোক মারা গেছে তা নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষাগুলো ভুল সেখানে স্কট তাঁর এই বক্তব্যের নিন্দা করেছেন। কয়েকদিন পর পুয়ের্টো রিকো সফরকালে তিনি এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি কি প্রেসিডেন্টের টুইটের সঙ্গে একমত হয়েছি? না হইনি।’ আবার পর মুহূর্তেই রাজ্যের রেজিস্টার্ড ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশ যে শ্বেতাঙ্গ ভোটার তাদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার দিকটা চিন্তা করে তিনি বলেন, ‘তার সঙ্গে একমত হতে পারলে আমি একমতই হব।’ সূত্র : টাইম
×