ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

ঢাকার দিনরাত

ঢাকার চেনাজানা বন্ধুদের অনেকেই দেখছি কণ্ঠসমস্যায় ভুগছেন। সর্দি-কাশিও সঙ্গী হয়ে উঠেছে। দিনের বেলা রোদের যে তেজ, আর রাতের বেলা তাপমাত্রার কিছুটা অস্বাভাবিক অবনমনÑ সব মিলিয়ে শরীর মহাশয় কিছুটা অসহায় হয়ে পড়বেন, সেকথা বলাই বাহুল্য। তার ওপর রয়েছে নিত্যজায়মান ধোঁয়া, ধুলো। আমার এসব কথাবার্তা বিরক্তিই ধরাবে তাদের যারা ঘরে থাকেন এসির মধ্যে, আর গাড়িও তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, কর্মস্থলও তাই। সে জন্য তারা বুঝবেন না হয়তো আমার কথার গূঢ় অর্থ। আচ্ছা এমন অধিবাসীর সংখ্যা কি বাড়ছে রাজধানীতে? জিম্মি ঢাকাবাসী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ কর্মদিবসে রাস্তা বন্ধ করে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামলে ঢাকার কর্মজীবীরা জিম্মি হয়ে পড়েন, কর্মস্থলে তাদের যাত্রা বিঘিœত ও বিলম্বিত হয়। একই পরিস্থিতি হয় পরিবহন শ্রমিকদের দাবি আদায়ের সংগ্রামে ধর্মঘট ডাকা হলে। তখন সমগ্র ঢাকাবাসীই জিম্মি হয়ে পড়েন। গত রবিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকাবাসী সড়কে নেমেই দুর্ভোগে পড়েন। গণপরিবহন বন্ধ, চলছে শুধু লালরঙা গুটিকতক বিআরটিসির বাস। হরতালে যেমন চলে আরকি। গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য নিয়ে আমরা নিয়মিতভাবেই লিখে থাকি, যদিও পরিস্থিতির লক্ষ্যযোগ্য তেমন উন্নতি সাধিত হয় না। গণপরিবহন ধর্মঘট হলে কাজের মানুষ তো আর বাসায় বসে দিন পার করতে পারেন না। তাদের কর্মস্থলে যেতেই হয়। হেঁটে, রিক্সায় চড়ে কিংবা ভাড়াগাড়ি (সিএনজি-কার-মোটরসাইকেল) করে গন্তব্যে রওনা দিতেই হয়। সেক্ষেত্রে তার ব্যয় বাড়ে, সময়ের অপচয় হয়। তবে এটি যে অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এরকম একটা অচলাবস্থায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কী ইতিবাচক ও উপকারী ভূমিকা রাখা যায় সে ব্যাপারে সরকারকে ভাবতে হবে; উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবহন ধর্মঘটে অসুস্থ ব্যক্তিদের পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। অসুস্থ মানুষ বহনকারী বাহনকে হরতালেও ছাড় দেয়া হয়। অথচ এবার তার ব্যতিক্রম দেখা গেল। মানুষ কী করে এত অমানবিক হয়ে উঠছে! মানুষের মুখে তারা কালি, আলকাতরা মেখে দিচ্ছে! এখন ঢাকায় পরিবহন ধর্মঘট মানেই যানজটবিহীন নগরী নয়। মাত্রাতিরিক্ত প্রাইভেট মোটরগাড়ির সঙ্গে ভাড়ায় চলা মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেলের আধিক্যও বিপুল। ফলে সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ গণপরিবহনের অনুপস্থিতি ঘটলেও ঢাকার সড়কগুলো যানবহুল ও ব্যস্তই থাকে। থাকে জানযটও। যাহোক, দেশের আইনের বিরুদ্ধে নেমে বেআইনী পরিবহন ধর্মঘট ডেকে পরিবহন নেতারা ৪৮ ঘণ্টার জন্য ঢাকাবাসীদের জিম্মি করে মহাঅন্যায় করলেন। পরিবহন সেক্টরের নেতা-কর্মীরা বাড়াবাড়ির পথ পরিহার করে গণমানুষের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন না এটাই প্রত্যাশিত। প্রস্থান ও পুনরাগমন মাঝখানের বাস্তবতা তিনটে দিন ঢাকার বাইরে ছিলাম পারিবারিক প্রয়োজনে। সেই সুবাদে আবারও বুঝলাম ঢাকার দিনরাত কত ব্যস্ততা, উৎকণ্ঠা আর বিড়ম্বনায় ভরপুর। বলাবাহুল্য ঢাকার বাইরে জীবন এখনও অনেক শান্ত, স্থির, স্নিগ্ধ। সড়কপথে গিয়েছিলাম যশোরে। তাই অনেক কিছুই উপভোগ করেছি। সে যাক। ঢাকায় ফেরার সময় সাভার পেরুনোর পর ঢাকা যত নিকটবর্তী হচ্ছিল, তত যেন বাড়ছিল যানবাহনের সংখ্যা এবং তার জট। তবে সবচেয়ে যেটা লক্ষ্যযোগ্য তা হলো দূর থেকে বায়ুম-লের দিকে তাকিয়ে যেন অনুভব করে উঠতে পারছিলাম ধোঁয়া-ধুলো চাদরে কী পরিমাণ ঢাকা পড়ে আছে আমাদের সাধের রাজধানী! বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে, অথচ সব যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। রাজধানীর বায়ুদূষণের যে চিত্র আমরা পাই, তা উদ্বেগজনক। আর এই অবনতির অন্যতম কারণ পরিবেশ অধিদফতর, নগর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর নজরদারিহীনতা। পরিবেশ অধিদফতরের দায়িত্ব যেন গণবিজ্ঞপ্তি জারিতেই শেষ! দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ খুব কমই দেখা যায়। এক্ষেত্রে নগরবাসীও কি অসচেতন নয়? বাধ্য না করা পর্যন্ত কেউ আইন মানতে চায় না। আমরা নিজেরা অসুস্থ হচ্ছি, আমাদের সন্তানরাও শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির মতো অসুখে পড়ছে। এর পরও আমরা সচেতন হব না? ঢাকায় ফিরে সেই চিরচেনা দৃশ্য : ফুটপাথ ও রাস্তায় পিঁপড়ের সারির মতো মানুষের আনাগোনা সন্ধ্যাবেলা অফিস ছুটির পর। গায়ে গা লাগা দশা। চরম বিরক্তিকর। ঢাকা নগরীর অধিকাংশ বহিরাগতই এসেছেন গ্রাম থেকে। গ্রামে বাড়ি হলেই গ্রাম্য হবেন এমন কোন কথা নেই। আবার নগরে জন্ম নিলেও বহুজনই নাগরিক হয়ে ওঠেন না। ঢাকার রাস্তায় যারা পথ চলেন তাদের ভেতর নাক-ঝাড়া আর থুঁতু ফেলার রোগ আছে প্রচুর লোকের। তারা আড়াল আবডাল খোঁজেন না, গর্ত কিংবা নর্দমাও নয়। পথের ওপরেই নাক ঝাড়েন, থুঁতু ফেলেন। ঠিক পাশেই যদি আপনি থাকেন, তাহলে নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। তা না হলে গায়ে বা কাপড়ে এসে পড়তে পারে দেহ-বর্জ্য। গাড়ির ভেতরে থাকলে ধোঁয়া-ধুলো ছাপিয়ে দুর্গন্ধ নাকে আসে না। কিন্তু ঢাকার বড় বড় রাস্তায় হাঁটার সময় অবধারিতভাবে আপনার নাকে এসে লাগবে বিচিত্র দুর্গন্ধ। মানুষের মলমূত্র আর খাবারের পচনশীল উচ্ছিষ্টের দুর্গন্ধে ঢাকার নবাগত আগন্তুকের বমনের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। তবে অনেকেরই এসব সয়ে যায় কালে কালে। তা না হলে রাস্তায় নাক চেপে বা নাক ঢেকে ক’জনকেই বা আপনি পথ চলতে দেখেন! ঢাকার বাইরে থেকে যখন এ মহানগরীতে প্রবেশ করি, আমরা ধাক্কা খাই বিবিধ কারণে। ধোঁয়া-ধুলো (আর শীতকালে কুয়াশাও) মিলেমিশে ধ্বংসাত্মক অস্বচ্ছ এক আবহ তৈরি করে। দূর থেকে ঢাকার অবয়ব অবলোকন করে অনেকেরই মনে হতে পারেÑ এক অভিশপ্ত নগরীর দ্বারপ্রান্তে বুঝি এসে পড়েছি। দ্বিতীয়ত মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের কিছুটা বিশৃঙ্খল চলাচল ও হুড়োহুড়ি দেখে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় মুহুর্মুহু তীব্র হর্নের শব্দদূষণ। ঢাকার পেটের মধ্যে বসবাস করে আমরা বহু নেতিবাচক বিষয় হয়তো কিছুটা উপেক্ষা করে যাই, আপাত সহনীয়ও হয়ে ওঠে এসব। কিন্তু ক’দিন ঢাকার বাইরে কাটিয়ে এসে ঢাকায় প্রবেশের পরে আমরা বুঝতে পারিÑ কোন শহরে কীভাবে আমরা জীবনযাপন করি। তবে পাশাপাশি অপর সত্যটিও উচ্চারণ করা চাই। গত শুক্রবার রাতে থেকে গিয়েছিলাম সিনিয়র বন্ধুর বাসায়, গুলশানের ১৩৮ নম্বর সড়কে। লেভেল আটের উত্তরমুখী কক্ষে ঘুমিয়েছিলাম। গভীর রাতে লেকটিকে ভারি মনোহর মনে হলো। সন্ধ্যারাতে এখানেই কিছু ওয়াটারবোটের আনাগোনা দেখেছি। ইনজিনের শব্দ আসেনি এতদূর। তাই দৃশ্যসমূহ হয়ে উঠেছিল মনোরম। লেককে দ্বিখ-িত করা পাকা সড়ক দিয়ে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে বাসও চলাচল করে থাকে। গাছপালা ঘেরা সড়কটি বেশ ব্যস্ত। সকালে উঠে দেখি জানালার বাইরে এক অচেনা শহর। উঁচু উঁচু অত্যাধুনিক সুদৃশ্য ভবনের কমতি নেই। মনে হয় ইওরোপের কোনো শহর। নিচে হাঁটাহাঁটি করলাম লেকপাড় ঘেঁষে। পরিচ্ছন্ন চারপাশ। গাছপালাও ছেঁটে রাখা। কেউ বলে না দিলেও বুঝে উঠি সারা দেশের ভেতর এই জায়গাটির মতো আর বড়জোর দু-চারটে স্থান রয়েছে ঢাকায় যেখানকার জমির মূল্য সবচাইতে বেশি, যেখানে বাড়ি ভাড়া সবচেয়ে বেশি। ছবির মতোই সাজানো গোছানো চারপাশ। এসব জায়গায় এলে মনের শুশ্রƒষা হবে নিশ্চয়ই। প্রথম অনুবাদ উৎসব ও আগামীর প্রত্যাশা ঢাকাকে আমরা উৎসবের নগরী হিসেবে অভিহিত করতেই পারি। এখানে যেমন আন্তর্জাতিক গুরুগম্ভীর কোন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, তেমনি আবার সবজি বা ফুচকা উৎসবের মতো খাদ্যময় উৎসবও হয়ে থাকে। নবেম্বর শুরু হচ্ছে কাল বাদে পরশু। এই নবেম্বরেই হবে সঙ্গীত উৎসব ও ঢাকা লিট ফেস্ট। গত শুক্রবার ঢাকায় এমন একটি সাহিত্য উৎসব হলো যা আগে কখনও হয়নি। বলছি অনুবাদ উৎসবের কথা। এটির নামকরণ করা হয়েছে ঢাকা ট্রান্সলেশন ফেস্ট। বাংলা একাডেমির দুটি পৃথক মিলনায়তন এবং উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী ওই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি কামাল চৌধুরী। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, লেখক ও কলামিস্ট রাশিদ আসকারি, কবি ও অনুবাদক গৌরাঙ্গ মোহন্ত, অনুবাদক বীনা বিশ্বাসসহ বাংলাদেশ ও কলকাতার ক’জন গুণী অনুবাদক উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন কবি হায়াৎ সাঈফ। সারাদিনের আয়োজনে ছিল ‘উপন্যাস অনুবাদ’; ‘বিশ্বসাহিত্য অনুবাদ’; ‘কবিতার অনুবাদ’; ‘অনুবাদের মাপকাঠি ও পদ্ধতি’; ‘অনুবাদে নারীবাদ: বদল ও রূপান্তর’; ‘অনুবাদ, রাজনীতি ও নেতৃত্ব’ এবং ‘নাটকের অনুবাদ: অনুবাদের অযোগ্য অনুবাদ’ শীর্ষক ৭টি প্যানেল আলোচনা। এছাড়াও ছিল অনূদিত কবিতাপাঠ। অনুষ্ঠানে অনুবাদ সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও ভারতের অনুবাদক এস সি নুরুলাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের অনুবাদকরা আলোচনায় অংশ নেন। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক মানের কবি-সাহিত্যিকেরা আছেন, এতে আমার অন্তত বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু ভাষাগত সীমাবদ্ধতার জন্য, খোলাখুলি বললে ইংরেজীতে অনূদিত না হওয়ার কারণে তাদেরকে বিশ্ববাসী চিনে উঠতে পারছেন না। ভাল মানসম্পন্ন অনুবাদগ্রন্থের অনুপস্থিতি আমাদের লেখককুলের জন্য এক গভীর দীর্ঘশ্বাসের কারণ। অনুবাদ বিষয়টি ঘিরে দরকারি কিছু আলোচনা তথা মিথস্ক্রিয়া হবেÑ এমন একটি ধারণা হয় যখন প্রথম শুনি ঢাকা ট্রান্সলেশন ফেস্ট আয়োজনের কথা। নিজের কবিতার ইংরেজী অনুবাদ শোনানোর আমন্ত্রণ যদি নাও পেতাম তবু একজন সামান্য সাহিত্যানুরাগী হিসেবে এই উৎসবে দুই ঘণ্টার জন্য হলেও যেতাম। তাছাড়া বিটিভিতে দু’বছর হলো বিশ্বসাহিত্য নিয়ে অনুষ্ঠান করছি, তাই এমন আয়োজন চাক্ষুষ করা আমার কর্তব্যের মধ্যেও পড়ে বৈকি। তবে সত্যি কথা যদি বলি তাহলে কিছুটা অপ্রিয়ই শোনাবে। দর্শক-শ্রোতাদের তেমন আকর্ষণ করতে পারল না কেন এই প্রয়োজনীয় উৎসব? প্রচারে কি ঘাটতি ছিল? বিকেল গড়িয়ে গেছে, বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে চলছে ‘ট্রান্সলেটিং ফেমিনিজম: ট্রান্সফার এ্যান্ড ট্রান্সফর্মেশন’ শীর্ষক আলোচনা। মঞ্চে উপবিষ্ট নির্ধারিত সব আলোচকই, কিন্তু দর্শকসংখ্যা বেশ কম। সেটি শেষ হওয়ার পর পুকুরের পুব পাশের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আরেকটি আলোচনাসভা শুরু হলো। ঘরের ভেতরের মানুষগুলোই বাইরে এসে বসলেন, নতুন তেমন কেউ যুক্ত হলেন না। বরং কয়েকজন চলে গেলেন। এখানেই পরবর্তী সেশনে ইংরেজীতে অনূদিত কবিতা শোনাবেন কবিবৃন্দ। কিন্তু একমাত্র ওমর শামস ছাড়া সিনিয়র কোন কবিকে পেলাম না (সম্প্রতি এ বিশিষ্ট কবি নিজ কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ শুরু করেছেন)। কাছেই চলছে পুস্তক প্রদর্শনী। আয়োজনে তেমন ত্রুটি নেই। কিন্তু নির্ধারিত কবি-উপস্থিতি উৎসাহব্যঞ্জক নয়। ভাল লাগতো যদি দেশের স্বনামধন্য বিশিষ্ট অনুবাদকদের ভেতর অন্তত প্রথম সারির কয়েকজনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যেত। খালিকুজ্জামান ইলিয়াস এবং মাসরুর আরেফিন- অন্তত এই দু’জনও যদি থাকতেন এই অনুবাদ উৎসবে, তাহলে এর আকর্ষণ অনেকখানি বেড়ে যেত। এরা অবশ্য ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। শুধু বাংলা থেকে ইংরেজী অনুবাদ করে থাকেন এমন অনুবাদকদের অংশগ্রহণই জরুরী- এমন নীতি যদি গ্রহণ করে থাকেন উৎসব কর্তৃপক্ষ, তাহলে কী আর বলার থাকতে পারে। যদিও নিবেদিতপ্রাণ বেশ ক’জন অনুবাদককে আমার চোখ খুঁজে চলেছিল। তারা আমন্ত্রিতই হননি কি? যাহোক, যদি প্রতিবছর এই উৎসব আয়োজিত হয় তাহলে উদ্যোক্তাদের আরও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করব। ছড়াকারদের মিলনমেলা শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগের ‘কবিতা ক্যাফে’-তে ছড়াকারদের মিলনমেলাই বসেছিল। কে ছিলেন না! রফিকুল হক দাদুভাই, আলী ইমাম, আমীরুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, আশরাফুল আলম পিনটু, মিজানুর রহমান কল্লোলসহ অনেক শিশুসাহিত্যিক। শিল্পী ধ্রুব এষকেও দেখা গেল। অবশ্য উপলক্ষ ছিল একটা- ছড়াকার হুমায়ূন কবির ঢালীর ৫৫তম জন্মদিন। এ ধরনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় একজন ব্যক্তিত্বের ওপর ঘুরেফিরে আলো ফেলা হলেও প্রাসঙ্গিক সাহিত্যমথিত অনেক কথা এবং স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে ফেলে আসা সময়ের চালচিত্র তুলে ধরার প্রয়াস থাকে। এ অনুষ্ঠানেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। দেশের ছড়াসাহিত্য, ছড়ার সামাজিক উপযোগিতা এবং নানা প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে উচ্চারিত হলো। সব মিলিয়ে আন্তরিক আবেগঘন এক আয়োজন। সতীর্থ লেখকদের একসঙ্গে মিলিত হওয়া এবং হৈহুল্লোড়ে আড্ডাবাজিতে মেতে ওঠা- এসবের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিশীলরা এক ধরনের অক্সিজেন সংগ্রহ করে নেন। সেটি তাদের লেখার প্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। মানসিক শক্তিও যে প্রসারিত হয়- সেটিও বলা দরকার। ২৮ অক্টোবর ২০১৮ [email protected]
×