ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

কম খরচে ভ্রমণের সেরা দশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২ নভেম্বর ২০১৮

কম খরচে ভ্রমণের সেরা দশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু অপরূপ দৃষ্টিনন্দনীয় স্থান। যা কিনা শুধু দেশের মানুষের নয় বিদেশের মানুষের ও মনের খোরাক যোগায়। প্রকৃতিকন্যার অপরূপ মহিমা যেন ফুটে উঠেছে নয়নাভিরাম পাহাড়, পর্বত আর দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলির মাঝে। সম্প্রতি ভ্রমণবিষয়ক ওয়েভ পোর্টাল লোনলি প্লানেট ২০১৯ সালের জন্য সাশ্রয়ী ভ্রমণ গন্তব্যের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে শীর্ষ দশে। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম। শুধু সাশ্রয়ী নয়, পর্যটন স্থানগুলোর গুরুত্বের কথাও তারা বিবেচনায় এনেছে। কক্সবাজার দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রিক, সুন্দরের অভয়ারণ্য জেলা বলা হয় কক্সবাজারকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ এই সমুদ্র সৈকতে রয়েছে প্রায় ১২০ কি.মি লম্বা বালুকাবেলা। এই সমুদ্র সৈকতটির বৈশিষ্ট্য হলো পুরো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময়, যেখানে কোন কাদার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। শীত-গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্ত, বসন্ত সকল ঋতুতেইে ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন এ সমুদ্র সৈকতটির। গোধূলি বেলা সৈকতের আবহাওয়ার অবস্থা আর রাতের আবহাওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আর এজন্যই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে স্থানটি এত আকর্ষণীয়। যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই ভাল। সেখান হোটেল, মোটেলগুলো বেশ আকর্ষণীয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় যাতায়াত ভাড়া যেমন কম তেমনি সেখানে থাকতেও আপানকে বেশি পয়সা গুনতে হবে না। খাগড়াছড়ি পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ। রাস্তার দুইপাশের পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর সবুজের এক অপরূপ খেলা ফুটে উঠেছে খাগড়াছড়িতে। বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দনীয়, দর্শনীয় স্থানের কারণে পর্যটকদের কাছে বেশ পরিচিত একটি জায়গা এটি। এখান থেকে আপনি প্রকৃতির অপরূপ খেলা নিশ্চিন্তে উপভোগ করতে পারবেন। তাই তো দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে খাগড়াছড়ির দৃষ্টিনন্দন এসব পর্যটনকেন্দ্র দেখতে। এখানে রয়েছে, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা, রহস্যময় সুড়ঙ্গ, দেবতার পুকুর, শান্তিপুর অরণ্য কুটির। আপনি আলুটিলার অরুনিমা ওয়াচ টাওয়ার থেকে প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন। এছাড়া এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু ও রয়েছে। এর চারপাশে সেখানকার জেলা পরিষদ এমনভাবে সাজিয়েছে যে, যে কারও নজর কাড়বে। সেখানে প্রবেশ মূল্যও আহামরি নয়। খাগড়াছড়িতে রয়েছে বেশ ক’টি হোটেল, গেস্টহাউস। ভাড়া তেমন বেশি নয়। পাঁচ শ’ থেকে হাজার টাকার মধ্যে খুব ভাল হোটেলে আপনি রাত্রিযাপন করতে পারেন। এছাড়া খাগড়াছড়ির রাস্তাঘাটগুলো ভাল হওয়ায় কম খরচেই এখন সেখানে পৌঁছানো যায়। ঢাকা থেকে আপনি গাড়ি ভেদে পাঁচ শ’ থেকে আট শ’ টাকার মধ্যেই আপনি সেখানে যেতে পারেন। খুব কম খরচে আপনি বেশ কটি দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সারা বছরই দেশ বিদেশের লাখ লাখ দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসেন। সাজেক ভ্যালি সাজেক ভ্যালি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। নয়নাভিরাম অপার সৌন্দর্য বিশাল সব পাহাড়ের ওপর রাস্তা, এর চার পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃষ্টি কাড়ে ভ্রমণপ্রিয়সীদের। সাজেকে সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজের দারুণ মিতালি চোখে পড়ে। সাজেকে যেতে হয় চাঁদের গাড়িতে চড়ে। এখানে চাঁদের গাড়ি বলতে বোঝানো হয়েছে এক প্রকার জিপ গাড়ি। এছাড়া মোটরসাইকেল, অটোরিকশাতে করেও সেখানে পৌঁছানো যায়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তা, আদিবাসীদের জীবন চিত্র সবই যেন দেখা মেলে একসঙ্গে। সাজেক যখন মেঘে ঢেকে যায় তখন মনে হয় যেন এটি ‘মেঘের উপত্যকা’। সাজেক গেলে অনেকেই ভাবতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশে আপনি বাস করছেন। পৃথিবীর কোথাও এমন সৌন্দর্যম-িত স্থান নেই বললেই চলে। দুর্গম পাহাড়ের বুকচিরে পর্যটন ক্ষেত্রে সাজেক বিশাল একটি মাইলফলক। আর তাই এ স্থানটি দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। খুব স্বল্পখরচে আপনি ঘুরতে পারেন সাজেক। বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে বেশ কটি রিসোর্ট। সাজেক রিসোর্ট, এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি রিসোর্ট। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা ও। এছাড়া আরও বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে সেখানে। রাঙ্গামাটির পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র। যার মাঝে অন্যতম পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু। এখানে রয়েছে মনোরম ‘পর্যটন মোটেল’। পর্যটন মোটেল এলাকাটি ‘ডিয়ার পার্ক’ নামে পরিচিত। মোটেল এলাকা থেকে দেখা মেলে হ্রদের বিস্তীর্ণ জলরাশি আর দূরের নীল উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি এখানে তৈরি করেছে এক নৈসর্গিক আবহ। সেখানে গেলে যে কারও মন ভাল হয়ে যাবে নিশ্চিত করে বলে দেয়া যায়। এখানেই রয়েছে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু- যা কিনা কমপ্লেক্সের গুরুত্ব ও আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এ সেতুটিকে ‘সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি হিসেবেও ডাকা হয়। রাঙ্গামাটিতে রয়েছে বেশ ক’টি হোটেল-মোটেল। ৬০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে এসব হোটেল-মোটেলে রুম বুকিং দেয়া যায়। সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক এসব স্থানে বেড়াতে আসেন। সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ একটি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এটি। বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানা রকম পাখি, চিত্রাহরিণ, কুমির, সাপ, সুন্দরী বৃক্ষ, গোলপাতা, মৌমাছির মধুসহ বিশেষ পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে এটি বেশ পরিচিত এক নাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমিও বলা চলে সুন্দরবনকে। এটি দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটকের মিলনমেলা ঘটে সেখানে। সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, মংলায় রয়েছে বেশ ক’টি হোটেল। যেখানে দুই থেকে চার হাজার টাকার মধ্যেই আপনি থাকতে পারেন। ঢাকা থেকে খুলনায় বেশ কিছু গাড়ি ছেড়ে যায়। পাঁচ শ’ থেকে হাজার টাকার মধ্যে ননএসি এবং এসি গাড়িতে চড়ে আপনি খুলনা যেতে পারেন। সেখান থেকে সুন্দরবন আপনি যেতে পারবেন। এছাড়া লঞ্চ, ট্রেনে করেও খুলনা যাওয়া যায়। ভাড়াও তেমন বেশি নয়। ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের তিনটি বিশ^ ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে অন্যতম। ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে বিশ^ ঐতিহ্যের খেতাব দিয়েছে। মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ হলেও এর এখানে কিন্তু গম্বুজ ৬০টি নয়। গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি। তবুও এর নাম কিন্তু ষাট গম্বুজ মসজিদ। স্থানটির এতটাই গুরুত্ব যে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভ্রমণপ্রিয়সী লোক এটি দেখতে ছুটে আসেন এখানে। রাজধানী ঢাকা থেকে বাগের হাট যাওয়ার মতো অসংখ্য বাস রয়েছে। বাগের হাট শহর থেকে মাত্র সাত কি.মি দূরে ষাট গম্বুজ মসজিদ। কম খরচে বেড়ানোর জন্য বেশ দারুণ জায়গা এটি।
×