ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধামের গান

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩ নভেম্বর ২০১৮

 গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধামের গান

সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবী লক্ষ্মী ও কালী পূজা উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে চলছে ঐতিহ্যবাহী ধামের গান। এ গানকে স্থানীয়ভাবে অনেকে ‘ধামের গাউন’ বলেন। এটি মূলত জেলার ক্ষেত-খামারে খেটে খাওয়া মানুষের বিনোদনের জীবন্ত লোকনাট্যের প্রচলন। গ্রাম-গঞ্জে ধামের গান এখনও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টিকে আছে। ধাম শব্দের অর্থ স্থান বা আশ্রয়স্থল। হেমন্তে এই অঞ্চলে এ গানের আসর শুরু হয়ে চলে শীতের আগমন পর্যন্ত। ধামের গানের মধ্যে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন, সমস্যা, সমাধান প্রকাশ করা হয় হাস্য-কৌতুক ও নাটকের মাধ্যমে। এতে গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনে মনের খোরাক (খাবার) জোগান দেয়া হয়। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ধামের গান পরিবেশনকারী দলের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধামের দল এসে গান পরিবেশন করে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একযোগে ধামের গান চলে। তবে আকচা, বেগুনবাড়ী, মোহাম্মদপুর, ঢোলারহাট, রুহিয়া এসব ইউনিয়নে একটু বেশিই আয়োজন করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের দক্ষিণ ঠাকুরগাঁও কামারপাড়া লক্ষ্মীরধামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ধামের গান ‘হাউসের বেহাই, রসের বেহানী’। এই ধামের গান পরিচালনা করে ‘উত্তর বোচাপুকুর পালাগান পরিচালনা দল।’ তারা বিভিন্ন শ্লোকের মাধ্যমে মোট ২০জনের দল নিয়ে এ ধামের গান পরিবেশন করে। এতে ছেলেরা মেয়ে সেজে নাটকীয়তার মাধ্যমে অভিনয় করে থাকে। তারা নাটকের নিজস্ব অভিনয় শৈলীর মধ্য দিয়ে সমাজের নানান ঘটনা রঙ্গ-রস ও বিভিন্ন শ্লোকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে দেয়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকার ধামের গানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনা পরিবেশন করা হয়। এর মধ্যে আস্বলসরি-পিছলা বাউধিয়া, হলদিসরি-সোনাইফাত্রা, জলসরি-জুলুম অরসিয়া, পাশ করা কামাইল, দশ নাম্বার আঢি হাকু দাকু অধিকারী, বউমার মিসকল নামে রয়েছে অনেক ধামের গান। এ গান সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে চলে ভোর পর্যন্ত। এ সময় নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল নামে। এ জাতীয় গ্রামীণ রীতি এখন শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এই ধামের গানের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার মানুষের বিনোদনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়ে থাকে। তাই সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বিনোদন যুগ যুগ এভাবেই বেঁচে থাকবে। -এস এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও থেকে
×