ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে ইসলামী দল ও বাম জোটের সঙ্গে সংলাপ

নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা, সব দলকে অংশ নেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ নভেম্বর ২০১৮

নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা, সব দলকে অংশ নেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ইসলামী দলের নেতারা। সংবিধানের মধ্যে থেকেই ইসলামী দলগুলো সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসতে চায় বলেও জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার গণভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলমান সংলাপের ধারাবাহিকতায় অংশ নেয় ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা। সংলাপে জোট নেতারা আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় আট রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার গঠনসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। বিভিন্ন দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবার মতামত নিয়েই গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেইসঙ্গে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগেরও নিশ্চয়তা দেন বিভিন্ন দলের নেতাদের। আজ বুধবার বেলা ১২টায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ন্যাপ ভাসানীসহ ২২টি দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা। ২২ দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপের আনুষ্ঠানিক পর্দা নামছে। যদিও দ্বিতীয় দফায় সংলাপের আগের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশ থেকে সাত দফা দাবি মানা না হলে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এদিকে আট নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে সংলাপের সার সংক্ষেপ তুলে ধরবেন। সংলাপ শেষে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেছেন, আমাদের দাবি-দাওয়ার কথা সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উত্থাপন করেছি। এখন দাবি-দাওয়া মানা না মানা তার বিষয়। তিনি বলেন, যদি দাবি মানা হয় তাহলে আমরা নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করব। আর যদি আমাদের দাবি মানা না হয় তাহলে রাজপথই হবে আমাদের ভরসা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোটে, এখন উনি কী করবেন উনিই ভাল বোঝেন। হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরাতে ইসলামী দলগুলোর সহযোগিতার আশ্বাস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরাতে ইসলামী দলগুলো সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটসহ ১২টি দলের সংলাপে দলগুলোর নেতারা এ আশ্বাস দেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা। আগামীতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ফিরে আসবেন এ ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে একথা তারা অকপটে বলে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার আদর্শ সমন্বত রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষই সংলাপে একমত হয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ইসলামী দলগুলো ‘সংবিধানসম্মতভাবে’ নির্বাচন সমর্থন করে এবং এ ব্যাপারে তারা ‘অংশী’ হিসেবে থাকবেন বলেও জানান কাদের। সংলাপে দ্বিমত বলেও কিছু ছিল না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ জালালী পার্টি, আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ, জাকের পার্টি; বাংলাদেশ জাতীয় ইসলামী জোট-বিএনআইএ, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্সসহ (আইডিএ) ১২টি দলের ৫২ জন নেতা। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আলতাফ হোসাইন, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসীমউদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রশিদ মজুমদার, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল হামিদ, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুফতি তৈয়্যব হোসাইন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আবুল কাসেম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, যুগ্ম মহাসচিব মুফিত সাখাওয়াত হোসাইন। নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে মতবিরোধের মধ্যে কামাল হোসেনের উদ্যোগে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের সংলাপে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে প্রায় প্রতিদিনই সংলাপ চলছে। গণফোরামের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও বিকল্পধারা বাংলাদেশ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল, জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন সমমনা দলগুলো ইতোমধ্যেই সংলাপ শেষ করেছে। ইসলামী জোটগুলোর এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ॥ সংলাপ শেষে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, ইসলামী জোটগুলো এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে। নেজামী বলেন, প্রতিবেশ দেশ ভারতসহ আরও অনেক দেশে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে বা সংসদ রেখেই নির্বাচন হওয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আমাদের দেশেও ওই পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিত বলে আমার মনে হয়। সংলাপ ভাল হয়েছে জানিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী আরও বলেন, ‘তত্ত¡াবধায়ক হোক, নির্দলীয় বা সর্বদলীয় সরকার এটা নিয়েই তো দ্ব›দ্ব চলছে। সরকার বলছে এখন সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। অন্যরা বলছে, সংবিধানের মধ্যেই এই দ্বন্দের সমাধান সম্ভব। তাহলে তো একটা ঐক্য হয়েছেই। আমরাও সংবিধানের মধ্যে থেকেই দ্বন্দের সমাধান করতে বলেছি। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরিয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জি হুজুর বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছেন কি না জিজ্ঞেস করতে তিনি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন। আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়’র চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, কোন জোটে যাব তা এখনই বলতে পারছি না। আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্সের কো-চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, সবাই সরকারের নির্বাচনের পাশে থাকতে চায়। সমর্থন দিতে চায়। সংবিধান রক্ষা করে বিধিবিধান ঠিক রেখে যেন নির্বাচন হয়। এই সরকারের উন্নয়ন ও ইসলামের প্রচার প্রচারণায় তাদের অবদানের জন্য পাশে আছি, থাকব। মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা সংলাপ আর কী, সবাই প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছে। আমরা বলেছি, আপনারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এসেছিল। সংবিধান সংশোধন হয়েছিল। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে এই ব্যবস্থার অধীনেই আপনারা নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এর বাইরে আর কি কিছু বলতে হবে?’ আলোচনা ফলপ্রসূ-জাকের পার্টি ॥ মঙ্গলবার দুপুরে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে আয়োজিত সংলাপে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন। জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী সংলাপ শেষে বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা বর্তমান চলমান ধারাকে শক্তিশালী করতে চাই। আমরা আশা করি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার একটি সুন্দর সাবলীল এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দান করবেন-এ বিষয়ে সরকারের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে। একটি সুন্দর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনে সুন্দর সংসদ যাতে চলমান থাকতে পারে এবং দেশের চলমান উন্নয়ন গতিশীলতা পায়, সে লক্ষে আমরা অঙ্গীকার করেছি। দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আসুন আমরা শান্তির পথ অনুসরণ করি। আরেকটি রক্তাক্ত বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই, শান্তি সৌহার্দ্য। মুজাদ্দেদী বলেন, সংলাপে সার্বিক রাজনীতির বিষয়ে কথা হয়েছে। আমরা আগাগোড়া মহাজোটের সাথেই আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। বারবার তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি তো কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে আমরা দেখব কতটুকু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। যদি একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তবে সেটা হবে আমাদের জাতির জন্য এক মাইলফলক। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যফ্রন্ট হোক বা অন্য দলগুলো হোক তাদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জনগণ চায় না স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসুক ॥ সবার মতামত নিয়েই গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে গণভবনে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে সরকারের টানা দুই মেয়াদের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন দিয়েই সংলাপ শুরু করেন তিনি। রাতে বাম জোটের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ চায় না, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীরা আবার ক্ষমতায় আসুক। এটা আমরাও চাই না এবং আমি বিশ্বাস করি, যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে, তারাও এটা চাইবে না। বাম নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ১০ বছর ধরে আপনাদের সঙ্গে দেখা হয় না, তাই দেখাটা হোক, এটা আমি চাই। তিনি বলেন, ‘এখন সামনে নির্বাচন। দেশের যে উন্নয়নটা করতে পেরেছি, যদি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে এই উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। তাই আমি জনগণের কাছে ভোট চাই, যাতে নির্বাচিত হয়ে এসে এসব ধরে রাখতে পারি। এক-এগারো সরকার আমাকে নির্বাচন না করার প্রস্তাব দিয়েছিল। বিনিময়ে একটি মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু তখন আমি বলেছিলাম, নির্বাচন হবে। জনগণ যাকে চাইবে সেই ক্ষমতায় আসবে। গণভবনের ব্যাঙ্কোয়েট হলে সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম জোটের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনাই ছিল লক্ষ্য। সবচেয়ে বড় কথা ছিল দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে ঠিক একই কায়দায় ২০০১ সালে নির্বাচনের পর অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। যে ক্ষমতায় আসে সেই বসে যেতে চায়। খালেদা জিয়া বারোটা ও তত্ত¡াবধায়ক সরকার এসে আরও ৫-৬টি মামলা দেয় আমার বিরুদ্ধে। ২০০১ এ আমরা যেখানে বাংলাদেশ দেখে এসেছিলাম সেখান থেকে বাংলাদেশ আবার পিছিয়ে যায়। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন বিশ্বমন্দার মধ্যে আমরা এগিয়ে যাই। ২০১৩ সাল থেকেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসংযোগসহ নানা নাশকতা করা শুরু করে। তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আপনারা যদি বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্রটা দেখেন তাহলে নিশ্চয়ই এটা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে আমরা উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মতো কঠিন কাজটা এই সময়ের মধ্যে আমরা করতে পেরেছি। কারণ, জনগণের সমর্থন ছিল বলেই যুদ্ধাপরাধের বিচার করার পাশাপাশি রায়ও কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। এ কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে। যে কারণে আমাদের বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার ৭ দশমিক ৮। আওয়ামী লীগের ২৩ সদস্য ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে যোগ দেন। এর মধ্যে ১৪ দলের শরিক নেতারাও রয়েছেন। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডাঃ দীপুমনি, আব্দুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিমও উপস্থিত ছিলেন। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ, খান মেনন জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল সংলাপে অংশ নেন। বাম গণতান্ত্রিক জোট ॥ গণতান্ত্রিক বাম জোটের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সাতদফা দাবি জানানো হয়। এসব দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে, তফসিল ঘোষণার পূর্বে সরকারের পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, তফসিল ঘোষণার পূর্বে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন-সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন-কালো টাকার খেলা-পেশিশক্তি-সাম্প্রদায়িকতা-প্রশাসনিক কারসাজি নির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, ইভিএম চালুর পাঁয়তারা বন্ধ, রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশে করা মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধার-মাদক নির্মূল ও জঙ্গী-সন্ত্রাসী গ্রেফতারের নামে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধ করা। নেতারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে নিরাপদ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে সকল প্রস্তাব ও দাবি রয়েছে সে ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ আমরা জরুরী বলে মনে করি। পাশাপাশি রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আপনারা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেবেন- এই আশাবাদ আমরা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি যে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকলে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের মীমাংসা করা সম্ভব। আপনি ওয়াকিবহাল যে, গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া জনগণ ও রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে এত বিরোধ- বৈরিতা রেখে কোনভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়। সে কারণে গণতান্ত্রিক ধারার বিরোধী দলসমূহ ও জনগণকে আস্থায় নিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে আপনি কার্যকরি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন- এটা বাম জোট ও দেশবাসীর প্রত্যাশা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যেই গণভবনে বাম জোটের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ শুরু হয়। প্রথমে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের স্বাগত জানান। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা পর্ব শেষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর জোট নেতারা নিজেদের দাবি দাওয়ার কথা তুলে ধরেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। সংলাপে এই বাম জোটের পক্ষ থেকে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাম গণতান্ত্রিক জোট সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, পলিটব্যুরো সদস্য আকবর খান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটি সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, আলমগীর হোসেন দুলাল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সম্পাদকমÐলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোমিনুর রহমান বিশাল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহŸায়ক হামিদুল হক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রনজিৎ কুমার। বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভাঙার দাবি তুলেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারাও। সেই সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি জানান, তারা বৈঠকে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ সরকার গঠনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও করেছেন তারা। এছাড়া নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ভাবেই ইভিএম ব্যবহার না করা যাবে না। এছাড়া বিরোধী দলগুলোকে গায়েবি মামলা-হামলার মাধ্যমে যে হয়রানি করা হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে। রাজবন্দী হিসেবে যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি সরকারী দল নির্বাচনকালীন সময়ে যে সুবিধা ভোগ করবেন, অন্য প্রার্থীদের জন্য একই সুবিধা ও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দেখতে চাই সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সংবিধান সংশোধনের বিষয় তুলে ধরে বামনেতা সাইফুল হক বলেন, ‘সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধান সম্ভব। এজন্যে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হলে সরকার চাইলে তাও করতে পারে। কারণ সংসদে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে বা দাবি-দাওয়া না মানা হলে কী করবেন? জবাবে সাইফুল হক বলেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন করার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই। আন্দোলনও করছি। সংলাপও করছি। আশা করছি সরকার একটা কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে। নেতারা বলেন, নির্বাচন প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। আমাদের দাবি দাওয়া পূরণের আশা-আকাঙ্কা দুটোই রয়েছে বলে জানান তারা। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন আমি কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না। আগামী ৮ নবেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে সংলাপের সার-সংক্ষেপ জানাবেন। তার আগে আমি কিছু বলতে চাই না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভাঙ্গার দাবি তুলেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারাও। সেই সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলনে নামলে আওয়ামী লীগ ঘরে বসে থাকবে না। তিনি বলেন, আপনারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করবেন আর আমরা ঘরে বসে ডুগডুগি বাজাবো? তা তো হয় না।
×