ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী সিম

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৮ নভেম্বর ২০১৮

দেশী সিম

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির উন্নতি ও বিকাশ অত্যন্ত জরুরী। প্রযুক্তির জন্য ব্যবহৃত উপকরণাদি আমদানির ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে আসছে। এসব উপকরণ স্বদেশে তৈরি করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় যেমন ঘটবে, তেমনি দেশে বাজারও সম্প্রসারিত হবে। একই সঙ্গে উদ্ভাবন ক্ষমতার বিকাশ ও বিস্তার ঘটবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও হবে সম্প্রসারিত। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সরঞ্জাম আমদানি করতে হয়। ফলে সহজলভ্য হয়ে ওঠে না তা সাধারণ ভোক্তার কাছে। অধিক দামে সামগ্রী কেনার বোঝা বওয়া সবার জন্য সম্ভব না হওয়ার কারণে বাজারও প্রসারিত হতে পারছে না। বিকল্প হিসেবে এসব উপকরণ স্বদেশে কিনতে হলে সব দিক থেকেই তা হয়ে উঠত লাভজনক। ব্যবহারজীবীর সংখ্যাও বেড়ে যেত। সুসংবাদ বৈকি, মোবাইল সিমের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর মোবাইল ফোনের সিম তথা সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিফিকেশন মডিউল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে না। দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে। যা মানের দিক থেকেও ভাল। উৎপাদক এবং ভোক্তার জন্য যা গৌরবেরই বলা যায়। দেশেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি সিম মোবাইল ফোন অপারেটররা ব্যবহার করে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশের তরুণরাই যুক্ত রয়েছে। নির্মাতারা উৎপাদনের শুরু থেকেই বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসেন এবং দেশীয় তরুণদের সরাসরি যুক্ত করেন সিম উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। প্রশিক্ষণ শেষে এই তরুণরাই সিম উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে দু’বছরের বেশি প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। এখন দেশের তরুণরাই প্রশিক্ষণও দিয়ে আসছেন। প্রযুক্তি বাইরের হলেও এসব সিম তরুণরাই তৈরি করছে। আর একাধিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতাও। দেশী সিম টেকসই এবং আন্তর্জাতিক মানের। বাংলাদেশকে প্রযুক্তি খাতের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনার সরকার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিদেশ নির্ভরতা তথা আমদানির ক্ষেত্রকে সঙ্কুচিত করেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হচ্ছে। দেশের তৈরি অনেক পণ্য বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। আগামীতে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব তৈরি হবে দেশেই। সরকার এসব পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের শুল্ক প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছে। ফলে বেশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে সিম। দেশে সিল্কওয়ে, বাম্বল বি, ইস্ট কম পিস নামের প্রতিষ্ঠান সিম তৈরি করছে। আর মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত সিম ব্যবহার করছে। সিম কার্ডে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের চিপ রয়েছে, যাতে থাকে আন্তর্জাতিক মোবাইল গ্রাহক পরিচয় এবং একটি সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে নেটওয়ার্ক শনাক্ত করে। আর স্বল্প মেমরি, যাতে ফোন নম্বরসহ আরও কিছু সংরক্ষণ করা হয়। সিমের ভেতর অসংখ্য সেমি কন্ডাক্টর, রেজিস্টার, ট্রানজিস্টর ইত্যাদি থাকে। সিম সাধারণ সিকিলন দিয়ে তৈরি, যা দেশেই পাওয়া যায়। বাজারে বর্তমানে কম দামে যে সিম পাওয়া যায় তা সম্ভব হয়েছে দেশে উৎপাদিত সিম ব্যবহারের কারণে। আগে দেশে তৈরি একটি সিম কেনাবেচা হতো ৬৮ টাকায়। আর এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়। দেশী সিমে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। সিমের দাম কম হওয়ার কারণে বিক্রিও বেড়েছে। গ্রাহকরাও কম মূল্যে ক্রয় করতে পারছেন। টেলি যোগাযোগ খাতের অন্যতম অনুষঙ্গ মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মোবাইল অপারেটররা দেশে কম দামে ভাল মানের সিম পাওয়ার কারণে আর আমদানি করছে না। ফলে তাদের আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে বিপুল পরিমাণে। দেশে সিম তৈরির এই সুবর্ণ সময়ে অন্য উপকরণগুলো নির্মাণে এগিয়ে আসা জরুরী। সরকার এক্ষেত্রে সহায়তা আরও বাড়াতে পারে।
×