ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জন্মবার্ষিকী ॥ শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৯ নভেম্বর ২০১৮

জন্মবার্ষিকী ॥ শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার

জননন্দিত শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার। জনমানুষের নেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ৬৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি আজ বেঁচে থাকলে হয়তো তার জন্মদিন পালন করতাম। আজ জন্মদিনের কথা বলতে গিয়ে বার বার শুধু তার মৃত্যুর ঘটনাই মনে পড়ছে। সময়টা ২০০৪ সালের ৭ মে। ঘাতকরা নির্মম ও বর্বরোচিত ভাবে হত্যা করে তাকে। সেদিন আমার বাবা সাংবাদিক আতাউর রহমান নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে এটিএন বাংলা থেকে সাংবাদিক ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী ফোন করেন। বাবা ফোন রেখে দ্রুত মোবাইলে এমপি আংকেল (আহসান উল্লাহ মাস্টার)কে ফোন করতে লাগলেন। সংযোগ না পেয়ে বাবা তখন আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ছেলে সোহেল ভাইকে (প্রয়াত) ফোন করলেন। আমার মনে পড়ে বাবা ও ভাইয়ার মধ্যে শুধু ‘গুলি’ হয়েছে এই কথাটা বুঝতে পারি। ফোন রেখে বাবা বললেন, ‘তোমার এমপি আংকেল গুলিতে আহত হয়েছেন। হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি।’ বাবা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লেন। আমরা সবাই গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটাচ্ছি। এরপর আমরা টঙ্গীর বাসায় যোগাযোগ করে জানতে পারি এমপি আহসান উল্লাহ আংকেলসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে শুধু জানার চেষ্টা করি- কি অবস্থা এমপি আঙ্কেলের। পরে এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার মা হাউমাউ করে কেঁদে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বাবা টেলিফোন করে মাকে মৃত্যুর খবরটি কিভাবে দিয়েছিলেন তা আমি অনুমান করেছি এভাবে যে, বাবা ঐ পাশ থেকে কান্নাকাটি করছেন। আমার মার সঙ্গে আমরাও কাঁদছিলাম। তিনি আমার বাবার চাচাতো ভাই ছিলেন। তিনি খুবই বড় মাপের মানুষ ছিলেন। আমার মনে পড়ে বাংলা নববর্ষের এক অনুষ্ঠানে তিনি রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে আমাকে কোলে নিয়ে আদর করে আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলেন। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের দিনে তিনি আমাদের টেলিফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন। আমরা কেমন আছি, কিভাবে লেখাপড়া করছি ইত্যাদি খোঁজ খবর নিতেন। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি আমাদের বাসায় আসতেন। আমরা বাড়িতে গেলে মাঝে মধ্যে উনার টঙ্গীর ভাড়া বাসায় দেখা করতে যেতাম। দুইবার এমপি, একবার উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইবার পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং তিনি জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। আমরা যখন চাচার ভাড়া বাসায় যেতাম তখন আমরা আমাদের বাবা মাকে বলতাম ‘আংকেল একজন এমপি এবং একজন রাজনীতিবিদ হয়েও কেন ভাড়া করা একটা কম দামের বাসায় থাকেন?’ উত্তরে বাবা-মা বলতেন, ‘তোমার আংকেল শ্রমিক নেতা ও একজন শিক্ষক। টাকা পয়সা অর্থ সম্পদ ও ধন দৌলতের প্রতি কোন লোভ লালসা নেই। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জনসেবা করেন। তাই তিনি কোন ঘরবাড়ি বা ধনসম্পদ করতে চান না।’ জনগণ বিশেষ করে টঙ্গী ও গাজীপুরের মানুষের কাছে তিনি একজন সাধারণ শিক্ষক হয়ে মানুষের মন জয় করতে পেরেছিলেন বলেই বারবার জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হতেন। তাই এখনও অনেকে বলে থাকেন ‘একজন সৎ রাজনীতিকের জীবন চরিত দেখতে যদি চাও- তোমরা সবে আহসান উল্লাহ এমপির গ্রামের বাড়ি হায়দরাবাদে যাও।’ এমপি আঙ্কেল আমাদের খুব আদর করতেন। ঈদ বা কোন উৎসবে গ্রামের বাড়ি হায়দরাবাদ গেলে আমাদের কোলে নিতেন, আদর করতেন, মা-মা বলে ডাকতেন আর চুমু খেতেন। আমাদেরই শুধু নয়- ছোট বাচ্চাদের তিনি খুবই আদর করতেন। আমরা দেখতাম আমাদের বাড়ির সব বাচ্চাদের নিয়ে ঈদের দিন তিনি নতুন দশ টাকার নোট দিতেন। এটা ছিল প্রতি ঈদের দিন শিশু কিশোরদের সঙ্গে সময় কাটানোর মুহূর্ত। টঙ্গি ও গাজীপুরের মতো শিল্প সমৃদ্ধ এলাকার জনগণের প্রতিনিধিই শুধু নয়, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি সরকার দলীয় শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ইচ্ছা করলে বড় বড় দালান কোটা, বাড়ি গাড়ি, অর্থ বিত্তের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি থাকতেন বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটায় তৈরি মাটির ঘরে। যেখানে তিনি আজও শুয়ে আছেন চিরনিদ্রায়। চাচা যে ঘরটিতে থাকতেন আজও সেই মাটির ঘরটিতে গেলে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে পড়ে। এমন আদর্শবান সৎ রাজধানীতিক শুধু জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কর্মীরাই লালন করতে পারে। আংকেলের সৎ রাজনীতির আদর্শ নীতি এলাকার কিছু কিছু আওয়ামী লীগের কর্মীদেরও বেশ অনুপ্রাণিত করছে। ১৯৫০ সালের ৯ নবেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ৬৮তম জন্মদিন। জন্মদিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। লেখক : প্রকৌশলী ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাইয়ের মেয়ে
×